আন্তর্জাতিক ডেস্ক:চার বছর ধরে ক্রমাগত সাফল্যের পর মঙ্গলবার বড়সড় ধাক্কা খেল মোদি সরকার। ভারতের বিধানসভা নির্বাচনে পাঁচ রাজ্যের মধ্যে তিনটিতে জয়ী হয়েছে কংগ্রেস। অন্য দুটিতে জয় পেয়েছে স্থানীয় দুটি দল। একটিতেও জয় পায়নি ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)।
লোকসভা ভোটের বাকি এখনও কয়েক মাস। কিন্তু তার আগেই থেমে গেল বেশ কিছু দিন ধরে ঠোক্কর খেতে খেতে চলা নরেন্দ্র মোদির বিজয়রথ! এই প্রথম বড় ধাক্কা খেল মোদি সরকার। সেই ধাক্কা দিলেন রাহুল গান্ধী। মোদী-জমানায় প্রথমবার হিন্দি-বলয়ের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য বিজেপিকে হারাতে হলো।
পাঁচ রাজ্যের এই বিধানসভা নির্বাচন ছিল ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে সবচেয়ে বড় ভোটযুদ্ধ। ‘দিল্লি দখলের সেমিফাইনাল’ হিসেবে এই লড়াইকে ব্যাখ্যা করছিল রাজনৈতিক শিবির। ২০১৪ সালে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের কোনো প্রান্তে বিজেপি এত বড় ধাক্কা খায়নি।
মঙ্গলবারের নির্বাচনে প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যায়, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়-এই তিন রাজ্যই বিজেপিকে ছাড়তে হচ্ছে। এই রাজ্যগুলোতে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে কংগ্রেস। আর তেলেঙ্গানা ও মিজোরামে একাধিপত্য দেখিয়েছে স্থানীয় দুটি দল।
কংগ্রেস সভাপতি পদে নাম ঘোষণার ঠিক এক বছর পূর্ণ হওয়ার দিনেই রাহুলের এই বিজয়। পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফলে সেই অর্থে মোদির বিজেপির অর্জন শূন্য। যদিও রাত পর্যন্ত মধ্যপ্রদেশ নিয়ে রহস্যই তাদের কাছে একমাত্র আশার আলো ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত টুইটারে হার মেনে কংগ্রেসকে অবশ্য অভিনন্দন জানিয়েছেন মোদি।
রাহুল গান্ধী গত সাড়ে চার বছর ধরে মোদি ও তার সঙ্গীদের মুখে লাগাতার ‘কংগ্রেস-মুক্ত ভারত’ কথাটি শুনছিলেন। মোদি ও তার সঙ্গীদের ব্যঙ্গ-বিদ্রুপও কম সহ্য করতে হয়নি তাকে। তার মধ্যেই নিঃশব্দে নিজের মতো করে দল ও সংগঠন সাজিয়ে মোদির প্রিয় শব্দটিকে উল্টে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করলেন। মোদি-শাহের এত দিনের দম্ভ চুরমার করে ঊনিশটি রাজ্য থেকে তিনটি প্রায় খসিয়ে দিলেন।
কিন্তু রাহুল নিজে অবশ্য স্পষ্ট বলেন, ‘বিজেপি-মুক্ত ভারত’ গড়া তার দর্শন নয়। মোদির সঙ্গে ফারাকটি বুঝিয়ে বলেন, লড়াই চলবে, কিন্তু কাউকে দেশ থেকে মুছে ফেলা আমাদের লক্ষ্য নয়। মোদিই আমাকে শিখিয়েছেন, কী করতে নেই। তিন রাজ্যের বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রীকে আলাদা করে তাদের কাজের জন্য ধন্যবাদও জানান তিনি।
তিন রাজ্যে ক্ষমতা হারানোর পরে বিজেপির এখন কপালে চিন্তার ভাঁজ। কারণ তেলঙ্গানা বা মিজোরামেও তাদের লাভ হয়নি। এক সময়কার জোটসঙ্গী এমএনএফ মিজোরামে জেতার আগেই জানিয়ে দিয়েছে, তারা বিজেপির হাত ধরবে না। তেলঙ্গানার চন্দ্রশেখর রাও একই কথা জানিয়েছেন। ফলে বিজেপির ভেতরে এখন নানা প্রশ্ন। এই ফল কি মোদির বিরুদ্ধে জনমত? যে ২২ কোটি পরিবারে মোদি প্রকল্পের সুফল পৌঁছেছে, তা কি দাগ কাটল না? মন্দির রাজনীতি যে কাজে আসেনি, তা-ও স্পষ্ট। উল্টে বিরোধী শিবিরে হাত শক্ত হল রাহুলের। মোদির প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে উঠলেন তিনিই। তা হলে লোকসভায় কী হবে?
রাহুল গান্ধী বলেন, কৃষক, যুবকদের ক্ষোভ ধরতেই পারেননি প্রধানমন্ত্রী। উল্টো নোটবন্দি, জিএসটি করে আমজনতার হাল আরও বেহাল করেছেন। এই ফল সেই ক্ষোভেরই প্রতিফলন। সূত্র: আনন্দবাজার, এনডিটিভি।
মন্তব্য