আত্মহত্যা করেছেন সৌদির সেই দুই বোন?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের হাডসন নদী থেকে সৌদি আরবের দুই বোনের টেপে বাঁধা মরদেহ গত অক্টোবরে উদ্ধার করা হয়। দুই বোনের কোমড়, হাঁটু এবং পায়ের গোড়ালি একসঙ্গে বাঁধা থাকলেও মঙ্গলবার নিউইয়র্ক শহরের মেডিক্যালের পরীক্ষকরা বলেছেন, সৌদি ওই দুই বোন আত্মহত্যা করেছিলেন। গত বছরের অক্টোবরের শেষের দিকে রোতানা ফারিয়া (২২) ও তার বোন তালার (১৬) মরদেহ হাডসন নদীতে পাওয়া যায়। তাদের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন ছিল না। কালো রঙয়ের কোট পরিহিত ছিলেন তারা। কিন্তু তাদের কোমড়, পায়ের গোড়ালি এবং হাঁটু টেপ দিয়ে বাঁধা ছিল। নিউইয়র্কের প্রধান মেডিকেল পরীক্ষক বারবারা স্যাম্পসন বলেছেন, আমার অফিস নিশ্চিত হয়েছে যে, ফারিয়া বোনেরা আত্মহত্যা করেছিলেন। হাডসন নদীতে লাফ দেয়ার আগে দুই বোন টেপ দিয়ে নিজেদের বেঁধেছিলেন। তাদের মৃত্যুর পর নিউইয়র্ক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেছিলেন, সৌদির এই দুই বোন যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় চেয়েছিলেন। তবে এব্যাপারে বিস্তারিত আর কোনো তথ্য দেননি পুলিশের এই কর্মকর্তা। মার্কিন কর্মকর্তাদের তথ্য বলছে, ২০১৫ সালে সৌদি আরব থেকে ফারিয়া ও তার বোন মাকে নিয়ে ভার্জিনিয়ার ফেয়ারফ্যাক্সে আসেন। অতীতে বাড়ি থেকে পালানোর রেকর্ড রয়েছে তাদের। সেই সময় তদন্তকারীরা বলেন, বাড়ি থেকে ৪০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে হাডসন নদীর তীরে তাদের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় ‘ধাঁধা’ তৈরি হয়েছে। অক্টোবরে মার্কিন বার্তাসংস্থা এসোসিয়েট প্রেস (এপি) এক প্রতিবেদনে জানায়, ওই দুই তরুণী যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ায় মরদেহ উদ্ধারের আগের দিন সৌদি কনস্যুলেট থেকে তাদের মাকে টেলিফোন করা হয়েছিল। দূতাবাসের ওই টেলিফোনে সৌদি এই পরিবারকে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু দূতাবাসের কর্মকর্তারা এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন। কালো লেগিংস ও কালো জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায় হাডসন নদীর তীরে একটি পার্কে ওই দুই কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মুখোমুখি অবস্থায় তাদের কোমড় ও পায়ের গোড়ালির কাছে টেপ দিয়ে মোড়ানো ছিল। পুলিশ প্রথমের দিকে এই দুই কিশোরী জর্জ ওয়াশিংটন সেতু থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করে থাকতে পারে বলে ধারণা করেছিল। কিন্তু তাদের শরীরে কোনো ধরনের আঘাতের চিহ্ন না পাওয়ায় সেই ধারণা বাতিল করে দেয়া হয়। পুলিশের বরাত দিয়ে মার্কিন গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, আত্মহত্যার ধরন নিয়ে দীর্ঘ তদন্তের পর তারা ধারণা করেছেন যে, ফারিয়া বোনেরা নিজেদের ক্ষতি করবেন, তবুও সৌদিতে ফিরে যাবেন না; এমন চিন্তাভাবনা থেকে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। বিশ্বের অত্যন্ত রক্ষণশীল সৌদি আরবে নারীদের জীবন-যাপন ব্যাপক নিয়ন্ত্রিত। সম্প্রতি সৌদিতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারীদের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়া হলেও স্বাধীন জীবন-যাপনের সুযোগ নেই দেশটির তাদের। চলতি মাসেই রাহাফ মোহাম্মদ নামের এক কিশোরী পরিবারের নিপীড়ন ও হত্যার হুমকির মাঝে অস্ট্রেলিয়ায় আশ্রয় চেয়ে টুইট করে ঝড় তোলেন। পরে জাতসিংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার হস্তক্ষেপে কানাডায় আশ্রয় পান ১৮ বছরের এই কিশোরী।সূত্র : এএফপি, এপি।