ভেনিজুয়েলা সংকট, পাশ্চাত্যের সমালোচনায় রাশিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:ভেনিজুয়েলায় রাজনৈতিক সংকটের জন্য পাশ্চাত্য দেশগুলোকে সমালোচনায় ধুয়ে দিয়েছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলো ভেনিজুয়েলার স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিরোধী দলীয় নেতা জোয়ান গুইডোকে স্বীকৃতি দেয়ার পর বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো প্রতিক্রিয়া জানায় মস্কো। দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে মাদুরোবিরোধী বিক্ষোভের প্রতিক্রিয়ার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, ক্ষমতার পরিবর্তন চাওয়া ভেনিজুয়েলায় চলমান ঘটনাবলীতে আন্তর্জাতিক আইন, সার্বভৌমত্ব ও একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের বিষয়ে প্রগতিশীল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়েছে। জাখারোভা আলজেরিয়া থেকে এ মন্তব্য করেছেন। এদিকে ভেনিজুয়েলার চলমান সংকটে মেক্সিকো, কিউবা ও তুরস্ক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর পাশে দাঁড়িয়েছে। মাদুরোর সঙ্গে সংহতি জানিয়েছে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বলেছেন, আমার ভাই মাদুরো, সোজা হয়ে দাঁড়ান, আমরা আপনার পাশেই আছি। এদিকে সেনাবাহিনীকে ঐক্য ও শৃঙ্খলা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মাদুরো। বুধবার দেশটির বিরোধী দলীয় নেতা জোয়ান গুইডো নিজেকে অন্তবর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট ঘোষণার পর সেনাবাহিনীর সহায়তা চেয়েছেন। এরপর কারাকাসের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ মিরাফ্লোরেসের বাইরে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে মাদুরো বলেন, আমরা বিজয় অর্জন করব। বিজয়ী হিসেবেই আমাদের আবির্ভাব ঘটবে। এর আগে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিমির প্যাডরিনো বলেছেন, স্বঘোষিত বা অন্ধ স্বার্থের বশবর্তী হয়ে স্বআরোপিত প্রেসিডেন্টকে প্রত্যাখ্যান করেছে সশস্ত্র বাহিনী। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা জোয়ান গুইডো নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী এমন দাবি করেন। এদিকে সমাজতন্ত্রী সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদলীয় নেতা জোয়ান গুইডোকে দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বেশ কয়েকটি দক্ষিণ আমেরিকার দেশও তাকে সমর্থন জানিয়েছে। এদিকে ২০১৩ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা তেলসমৃদ্ধ দেশটির সমাজতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন। জোয়ান গুইডো নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণার কিছুক্ষণ পর যুক্তরাষ্ট্র তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানে তার পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে। কানাডা, ব্রাজিল ও কলোম্বিয়াও যুক্তরাষ্ট্রের মতো হুবহু বিবৃতি দিয়েছে। ভেনিজুয়েলার রাজধানী কারাকাসে এক সমাবেশে মাদুরোর বিরুদ্ধে ক্ষমতা জবরদখলের অভিযোগ করেন গুইডো। পরে অতিমুদ্রাস্ফীতিতে ধ্বংস হয়ে যাওয়া অর্থনীতিকে উদ্ধার করতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। উচ্ছ্বসিত সমর্থকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জবরদখলের অবসান ঘটাতে প্রেসিডেন্টের সব ক্ষমতা গ্রহণের আমি শপথ নিয়েছি। গুইডোর ঘোষণা ভেনিজুয়েলাকে এমন পরিস্থিতির মধ্যে নিয়ে যেতে পারে, যেখানে ক্ষমতাসীন সরকারের পাশাপাশি বিরোধীরাও একটি সমান্তরাল সরকার চালাতে পারেন। তবে বিদেশি স্বীকৃতি থাকলেও রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকছে না। এদিকে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ থেকে টেলিভিশনে সম্প্রচার করা এক ভাষণে বিরোধীদের বিরুদ্ধে মার্কিন সমর্থনে অভ্যুত্থানের অভিযোগ তোলেন মাদুরো। তার অভিযোগ, বিরোধীরা ওয়াশিংটন থেকে সরকার পরিচালনা করতে চাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমাদের ওপর হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে, আবার আমরা মর্যাদাও দাবি করছি- তাই না! এখানেও নিজ ভূখণ্ড রক্ষায় লড়াই করার ইচ্ছা আমাদের জনগণের আছে। মাদুরো ভেনিজুয়েলার প্রয়াত প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজের উত্তরসূরি। বামপন্থী শ্যাভেজ প্রেসিডেন্ট থাকাকালে বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছিলেন।