আন্তর্জাতিক ডেস্ক:নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে গুলিবর্ষণকারী শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীকে গ্রেফতার করে প্রশংসিত হচ্ছেন দেশটির পুলিশ কর্মকর্তারা। ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে পালিয়ে যাওয়ার আগেই রাস্তায় খুনিকে খুঁজে বের করে গ্রেফতার করা হয়েছে। এতে করে খুনির হাতে আরও কারও নিহতের ঘটনা ঘটেনি। দেশটির সংবাদমাধ্যম নিউ জিল্যান্ড হেরাল্ড পুরো গ্রেফতার অভিযানের বিস্তারিত প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে। তবে খুনিকে গ্রেফতারকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের পরিচয় প্রকাশ করেনি নিউ জিল্যান্ড হেরাল্ড।
খুনিকে গ্রেফতার করা দুই পুলিশ কর্মকর্তাই ক্রাইস্টচার্চের বাইরে একটি ছোট শহরের বাসিন্দা। তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রুরাল রেসপন্স ম্যানেজার সিনিয়র সার্জেন্ট পিট স্টিলস জানান, এই দুই পুলিশ কর্মকর্তা ক্রাইস্টচার্চে একটি প্রশিক্ষণের জন্য এসেছিলেন। প্রশিক্ষণটি ছিল একটি হাসপাতালে। যখন হামলার সতর্কতা আসে তখন তারা প্রশিক্ষণে ছিলেন। খবর পেয়েই তারা গাড়ি ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়েন।
পিট স্টিলস বলেন, তারা নিজেদের অভিযানের উপযুক্ত করে প্রস্তুতি নিয়ে গাড়িতে উঠে পড়ে, শহরটিতে চক্কর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা ব্রহাম স্ট্রিট দিয়ে গাড়ি চালাতে থাকে। কারণ তাদের মনে হয়েছিল যদি খুনি মাত্রই লিনউড থেকে রওনা দেয় তাহলে এই পথেই সে পালাবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা একটি সন্দেহভাজন গাড়ি শনাক্ত করে। তারা দেখতে পায় খুনির বর্ণনার সাথে মিলে যায় এমন একজন ব্যক্তি তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। গাড়িটি লেন থেকে সরছিল ও ফিরে আসছিল এবং হ্যাজার্ড লাইট জ্বালানো ছিল। তারা নিশ্চিত হয় যে এটাই খুনির গাড়ি এবং নিজেদের গাড়ি ইউ-টার্ন নিয়ে পিছু আসে।
সিনিয়র সার্জেন্ট জানান, ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তারা ৪০ বছরের বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং কীভাবে এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ বা সামাল দিতে হয় জানা ছিল। তিনি বলেন, তারা তাকে গ্রেফতার চেষ্টা করছিল এবং কৌশল নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে। তারা খুনিকে ধাওয়া করবে কিনা তা বিবেচনা করতে থাকে।
সার্জেন্ট জানান, কর্মকর্তারা বিবেচনা করেন যদি ধাওয়া করেন তাহলে খুনি হয়ত জনসমাগমস্থলে গিয়ে আরও নিষ্পাপ মানুষকে হত্যা করে পালিয়ে যেতে পারে। ধাওয়া করলে দুর্ঘটনার বিষয়টিও তারা বিবেচনায় নেন। এতেও হয়ত হতাহত হতে পারেন সাধারণ মানুষ। তারা দ্রুততার সঙ্গে তাকে আটকের সিদ্ধান্ত নেয়। তারা ঠিক করে, গাড়িটিকে ধাক্কা নিয়ে অচল করে দিতে হবে। এরপর তারা খুনির গাড়িতে চালকের পাশে গিয়ে ধাক্কা দেয় এবং পাশের যাত্রীর সিট দিয়ে তাকে গাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আসে।
পুলিশ কর্মকর্তা জানান, এক কর্মকর্তা গাড়ির পিছনে বিপজ্জনক বস্তুর উপস্থিতি দেখতে পান এবং দৌড়ে গাড়িতে এসে রেডিওতে অন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের সতর্ক করতে চেয়েছিলেন। তার ধারণা ছিল, ওই বস্তুগুলো তার সহকর্মীদের জীবন বিপন্ন করতে পারে এবং তাদের নিরাপদ দূরত্বে থাকার কথা বলার চিন্তা করছিলেন। এ সময় বন্দুকধারী তার চোখের আড়াল হয়ে যায় এবং সহকর্মীর পরিণতি নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন। তখন তিনি ওই পরিকল্পনা বাদ দিয়ে খুনির গাড়ির যাত্রী আসনের পাশে যান। তিনি আশপাশে থাকা মানুষদের চিৎকার করে দূরে যেতে বলেন।
স্টিলস বলেন, যখন উভয় কর্মকর্তাই খুনিকে আটক করতে সমর্থ হন তখন রেডিওতে অন্যান্য পুলিশকে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন। আমি ও পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ তাদের আলোচনা শুনেছি।
মন্তব্য