ফখরুলের সঙ্গে সাক্ষাতে যা বললেন খালেদা

নন্দিত ডেস্ক: নাইকো মামলার শুনানিতে আদালতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে আটক সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ ও শরীর ভালো যাচ্ছে না বলে ফখরুলকে জানান তিনি। আদালতে উপস্থিত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল খালেদা জিয়াকে জিজ্ঞাসা করেন ম্যাডাম কেমন আছেন। উত্তরে খালেদা জিয়া বলেন, ভালো নেই। শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। রোববার (৩ মার্চ) দুপুরে নাইকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ শুনানিতে হুইলচেয়ারে করে পুরান ঢাকার অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালতে আনা হয় খালেদা জিয়াকে। এজলাসে ছিলেন বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান। এজলাসে প্রবেশের সময় খালেদা জিয়াকে সালাম দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দুদকের কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল। এদিন আদালতের খালেদা জিয়ার পাশে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বসা ছিলেন। এক ফাঁকে এই দুই নেতা কথা বলেন। খালেদা জিয়ার কাছে ফখরুল জানতে চান, থেরাপি ঠিকমতো দেওয়া হচ্ছে কি না। খালেদা তখন ফখরুলকে জানান, কারাগারে তাঁকে দেখতে চিকিৎসক এসেছিলেন। কিন্তু তাঁর শরীর ভালো যাচ্ছে না। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যখন ফখরুল ইসলাম কথা বলছিলেন, এর কিছুক্ষণ পর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯-এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান এজলাসে আসেন। আদালতে প্রবেশ করেই খালেদা জিয়া বলেন, সেদিন আমি প্রস্তুত ছিলাম, আমাকে আদালতে আনা হয়নি। অথচ বলা হয়েছে, আমি ইচ্ছা করে আদালতে আসিনি। সেটা ঠিক না। আদালতের কার্যক্রম শেষ হয় বেলা ১ টা ৪৮ মিনিটে। এরপর ফের খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে ২০ ফেব্রুয়ারি মামলাটির অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য ধার্য ছিল। বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে আদালতে উপস্থিত না করে কাস্টডি পাঠান কারা কর্তৃপক্ষ। এতে কারা কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করেন, খালেদা জিয়া ঘুম থেকে না ওঠায় আদালতে উপস্থিত করা যায়নি। এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে আদালতে আনা হয়। সেদিন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিবরণ দিয়ে তার চিকিৎসার জন্য আবেদন করেন আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার। মামলা সূত্রে জানা গেছে, কানাডীয় প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় নাইকো দুর্নীতি মামলাটি করেন। মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, কানাডীয় প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় মামলাটি করেন। মামলা করার পরের বছর ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। পরে আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়। এ মামলার প্রধান আসামিরা হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া ও ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন। এই মামলায় তিনজন পলাতক। এরা- সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, বাপেক্সের সাবেক মহা-ব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ। এছাড়া ২০১৮ বছরের ৫ মে এই মামলায় অভিযুক্ত আরেক আসামি সাবেক সচিব শফিউর রহমান মারা যাওয়ার ফলে বর্তমানে আসামি সংখ্যা ১০।