ধ্রুব গৌতম : বিশিষ্ট সাংবাদিক, ছড়াকার ও শিশু সংগঠক তাজুল ইসলাম বাঙ্গালী স্বাধীনতার পর প্রথম শহীদ মিনারে যেয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে না পারার ব্যর্থতায় তাঁরই হাতে গড়া সংগঠকদের কাছে অপারগতার যন্ত্রণায় শিশুর মত তিনি ফুঁপিয়ে কাঁদলেন।
তিনি বলেন, ১৯৭২ সাল থেকে জাতীয় দিবসগুলোতে শহীদ মিনারে যেয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। ডিসি অফিসের সীমানায়, রামকৃষ্ণ মিশনের পুকুর পাড়ে, মদন মোহন কলেজে, মালনীছড়া অবশেষে চৌহাট্টা শহীদ মিনারেও তিনি গত স্বাধীনতা দিবসে এসেছেন তাঁর প্রাণপ্রিয় সংগঠন খেলাঘর নিয়ে।
আজ তাজুল ইসলাম বাঙ্গালীর ব্রেন স্ট্রোক হয়ে কমড়ের নীচ থেকে পা দুটি অচেতন হয়ে শয্যাশায়ী।
তিনি আরও বলেন, আশির দশক পর্যন্ত তাদের এলাকায় ছোটখাটো বিষয় নিয়ে নিয়ত কলহ বিবাদ লেগে থাকতো। তিনি তখন এলাকায় উঠতি কিশোর তরুণদের নিয়ে সকল অপকর্মের বিরোধিতা করেন। লেখাপড়ায় উৎসাহী করেন, খেলাধূলাসহ সাহিত্য সংস্কৃতিমূলক বিনোদনে তাদের উৎসাহী করে তুলেন। এ কারণে এলাকায় তাঁকে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে।
শহরে এসে প্রাচীনতম শিশু সংগঠন সুরমা খেলাঘর আসরের সাথে সম্পৃক্ত হোন অতপ্রতভাবে। ১৯৭২ সালে ডিসি অফিসের পাশে প্রতিষ্ঠত শহীদ মিনারে সুরমা খেলাঘরের আয়োজনে উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদীদের আক্রমণের শিকার হোন, তাঁর সাইকেল ভেঙ্গে ফেলে। পরে নিজ এলাকা বরইকান্দিসহ আশ পাশ এলাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন আনন্দ খেলাঘর আসর, চালু করেন শহীদ সুলেমান শিক্ষা বৃত্তি।
হ্যমিলনের বাঁশিওয়ালার মত সিলেট শহরের অলি গলি ছিলো তাঁর পরিচিত। সব শিশু কিশোররা ছিলো তাঁর প্রাণ। তাদেরকে ঘর থেকে এনে খেলাঘরের পতাকাতলে সমবেত করেছেন, তাদের ফ্রি কোচিংয়ের মাধ্যমে করিয়েছেন, মঞ্চে তুলে কবিতা পাঠ করিয়েছেন, গান গাইয়েছেন, অভিনয় করিয়েছেন প্রতিভা যাচাই করে। আজ তারা অনেকেই উচ্চ পর্যায়ে অধিষ্ঠিত।
তাঁর উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত বিষয় সম্পত্তি, ব্যবসা বাণিজ্য বিসর্জিত হয়েছে সংগঠনের পিছনে নিস্বার্থভাবে ছুটে ছুটে। পাড়ায় পাড়ায় খেলাঘর প্রতিষ্ঠার লক্ষে এপাড়া ওপাড়া জেলা উপজেলায় ঘুরেছেন অনবরত। যার ফলে খেলাঘর সিলেট জেলা শাখার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির জাতীয় পরিষদ সদস্য হোন।
দীর্ঘ বছরে নিজের প্রতি অযত্ন অবহেলা আর খাম খেয়ালীর কারণে শরীর আজ বাঁধ সেধেছে। চূড়ান্ত ডায়াবেটিক ও প্রেসারের কারণে আজ ব্যাধিগ্রস্থ। দৃঢ় মনোবলের কারণে অসুস্থ হওয়ার আগের রাতে বাসিয়া প্রকাশনীর আয়োজনে ছড়াকার অধ্যাপক বদরল আলম খানের স্মরণ সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলেন।
সংগঠনের সাথে সাংবাদিকতা ও ফটোগ্রাফিকে নিয়েছিলেন পেশা হিসেবে। নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে খবরের পিছনে ছুটেছেন আজীবন। বাংলাদেশ বেতার, সিলেট কেন্দ্রের সুরমা পারর কথা শিরোনামের জনপ্রিয় আঞ্চলিক অনুষ্ঠানের নিয়মিত কথক ছিলেন। শেষ বয়সে আজ তিনি রিক্ত, শূণ্য। কারো হাতের দিকে চেয়ে থাকার মানসিকতায় অভ্যস্ত না থাকায় আজ কারো সাহায্য পেতেও বিব্রতবোধ করছেন।
আদর্শিক মানুষ গড়ার আন্দোলনের এ নির্লোভ কারিগর অচিরেই সুস্থ হয়ে আবার সদর্পে এসে দাঁড়াবেন সবার মাঝে, এ আমাদের ঐকান্তিক কামনা।
মন্তব্য