"তারপর"

শাহানারা বেগম ইমা:একটু একটু করে অদৃশ্য হয়ে যায় সূর্যটাও।ডুব দেয় আকাশের বুকে।নীড়ে ফেরে পাখিরা।আমি সাঁঝের কাজ শেষে নিজেকে ঠেলে দেই পরিপাটি বিছানার ওপর।চোখ বুজি,চোখ মেলি।হিশেব কষি সারাদিনের। হিশেবের খাতার পাতাগুলো তাকিয়ে থাকে আমার দিকে।আমি তা উপেক্ষা করে হিশেব কষতে থাকি।আমার সকালের হিশেব মিলে তো দুপুরেরটায় অমিল,দুপুরেরটা মিলে তো বিকেলেরটায় অমিল। আমি চমকে ওঠি,থমকে যাই।ধকধক করে বুকের ভেতরটা।গায়ের লোমকূপ দণ্ডায়মান হয়ে যায়।আমার একদিনের হিশেবে যদি এতো টানাপোড়ন হয় তবে এতো বছরের হিশেব আমি কী করে মেলাই?এই গরমিল হিশেব নিয়ে কী করে আমি বিশ্ববিচারকের দরবারে হাজির হই?ভাবতে ভাবতে হতাশার কালো সাগরে ডুবে যাই। ডুবতে ডুবতে ভাসি,ভাসতে ভাসতে ডুবি।চোখ মেলে তাকাতে চাই কিন্তু আমার কাছে সবকিছু অন্ধকার লাগে,অগোছালো লাগে।এই অন্ধকারের মধ্যেই ভয় এসে ঝাপটে ধরে।মনে হয় এটাই বুঝি জীবনের শেষ সময়।আর বুঝি ভোরের আলো দেখা হবে না।এই তো সামনেই বুঝি দাঁড়িয়ে আছেন মৃত্যুদূত।হাত পা নাড়তে চাই আমি।কিন্তু নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পাই না।ছটফট করি,ভয়ে কাতরাই,চোখের জল ফেলি।ডাকতে থাকি আসমান জমিনের অধিপতিকে,আমার রবকে। খুঁজতে থাকি সেই অন্ধকারে। শপথ করি কাল থেকে আর একটা সেকেন্ডও বেহিশাবে কাটাবো না।অবাধ্য হবো না আমার রবের।কিন্তু কালকের দিনটা আর আমার জীবনে আসে না। আমি হেলায় খেলায় অতিবাহিত করতে থাকি দিনের পর দিন,রাতের পর রাত,বছরের পর বছর।শপথ করি,শপথ ভাঙি। দুনিয়াবি খেল তামাশা আমাকে পুরোপুরিভাবে তাঁর নিকট আত্নসমর্পণ করতে দেয় না।আমি মগ্ন হয়ে যাই রংচটা পৃথিবীতে।আমার জন্ম মৃত্যু তাঁর হাতে জেনেও নিজের অজ্ঞতার ফলে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।বারবার নিজেই নিজের প্রতি অবিচার করি। কিন্তু তাঁকে একবারও দেখিনি অবিচার করতে।আমি উদাসীন আর তিনি বিচক্ষণ।তাঁর বিচক্ষণতা ও দয়ার গুণে আমাকে সুযোগ দেন বেঁচে থাকার,নিজেকে শোধরানোর,পাপের স্তুপ মুছন করার। আমি সৃষ্টি আর তিনি স্রষ্টা।তাঁর ইশারায় একের পর এক অনুগ্রহ বৃষ্টির মতো ঝরতে থাকে।আমার প্রতি আমার রবের এই অনুগ্রহ তাঁর ওপর আমার নির্ভরতা আরও বাড়িয়ে দেয়।আমি আস্থা রাখি এক আল্লাহতে যার কাছে অদৃশ্য ও দৃশ্যমান সবকিছু অবনত ও স্পস্ট।ভরসা রাখি তাঁর নির্ভুল ও নিঁখুত ফয়সালাতে।আমি জানি এই পাপ পূণ্যের দোলাচল থেকে তিনি আমাকে পুরোপুরি মুক্ত করবেনই। কারণ একমাত্র তাঁর হাতেই রয়েছে আমার হেদায়াত ও হেফাজতের নাটাই।