একাকিত্বের গল্প- ২য় পর্ব

একাকিত্বের গল্প-সময় পরিবর্তনশীল।একাকিত্বে যারা অভ্যস্ত হতে পারে তারা দুনিয়ায় সব পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে তবে একাকিত্বে পার্মানেন্ট কোন জিনিষ ভালো লাগেনা।রবিনসন ক্রুসো এর গল্পটা আমাদের জানা আছে,১ম দিকে উনার লড়াই ছিল প্রতিকুল পরিবেশে একা টিকে থাকার লড়াই কিন্তু যখন তিনি এই লড়াই এ টিকে গেলেন,তখন তিনি সঙ্গীর অভাব বোধ করতে থাকলেন। যখন বালিতে অনেক দিন পরে মানুষের পদচিহ্ন দেখলেন খুশী হওয়ার পরিবর্তে উনি ভয় পেয়েছিলেন। উনি ভেবেছিলেন কোন স্যাভেজ(মানুষ খেকো মানুষ)।এই কথাগুলো বলার পেছনে উদ্দেশ্য হচ্ছে,একাকিত্বে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া মানুষ থাকে উভয় সঙ্কটে।একলা থাকতেই তারা পছন্দ করে বেশি,নতুন এ মানিয়ে নিয়ে কষ্ট হয়।নিজের আলাদা একটা দুনিয়া হয়,এভাবেই চলছে এখন জীবন। কিছুদিন থেকে মা খুব উশখুশ করছেন, মনে হয় কিছু বলতে চাচ্ছেন।মা:কি করবি?ভেবেছিস কিছু।আমি:কি করবো মা?ভাবার কি আছে?ভালোই তো আছি।মা:ভুলে যাচ্ছিস কেন,আমি তোর মা,তুই আমার বাবা নস।বাইরে যা ইচ্ছা করিস,যেভাবে ইচ্ছা চলিস কিন্তু আমি তো জানি তোর মনের অবস্থা।দেখ বাপ,জীবন থেমে থাকে না,তাই থামিয়ে রাখতে নেই রে বাপ।আমি:আমি তো থেমে নেই, মা।ঠিকমতো চলাফেরা করি,সময়মত অফিস করি,কাজ করি,৩ বেলা খাই।মা:ফাইজলামি কথাবার্তা আমার সাথে বলবি না।চুল দাড়ি লম্বা করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হয়েছিস,এবারে গল্প কবিতা লিখা শুরু করে দে,আমিও নতুন রবীন্দ্রনাথ এর মা হয়ে যাই।গাধা কোথাকার।আমি:হা হা হা,(মনে মনে ভাবছিলাম আমি গল্প,কবিতা সত্যি লিখি, মা তা জানেই না।)।মা:তোর বাবা মারা যাওয়ার পর প্রথম দিকে সব কিছুই শূন্য মনে হত,এই বয়সে একাকিত্ব কি ভয়াবহ কল্পনা করতে পারিস।তাও আমি বেঁচে আছি,তোদের নিয়ে,নাতি নাতনীদেরকে নিয়ে,কারণ যতদিন বেঁচে থাকব,ভাল থাকতে হবে,ভাল থাকা নিজের কাছে রে বাপ।হয় পড়ে থাক আর না হয় ঘুরে দাঁড়া।আমি:হুম।মা:আমাদের সমাজে মেয়েদের জীবন বড়ই অদ্ভুত, যাকে তুই ঘিন্না করিস তারও অনেক কারণ থাকতে পারে যা সে তোর কাছে প্রকাশ করেনি বা সুযোগ হয়নি।তাই ঘিন্না করতে নেই বাপ।আমি:আমি কাউকেই ঘিন্না করিনা, মা। মা চলে যাওয়ার পর অনেকক্ষণ চুপ করে বসে রইলাম। ইংরেজি একটা কবিতা পড়েছিলাম, নামটা এখন ঠিক মনে হচ্ছে না।সেখানে কবি তার প্রিয়তমার সাথে শেষবারের মত দেখা করতে গিয়েছিলেন কারণ পরের দিন ঐ মেয়ের অন্য আরেকজনের সাথে বিয়ে,তাই শেষ বিদায়। ঠিক ঐ সময়ে প্রিয়তমা তাকে জড়িয়ে ধরে একটা হাসি দিলেন। হঠাৎ উনার মনে পড়ল কালকে থেকে তো এই হাসি আর উনার জন্য থাকবে না,আরেকজনের জন্য হয়ে যাবে,সাথে সাথে তিনি মেয়েটির ঘাড় মটকে দিয়ে(হাসিরত অবস্থায়) হাসি ধরে রাখার চেষ্টা করলেন,মেয়েটিকে মেরে ফেললেন। ভয়ংকর কিন্তু রোমান্টিক,তাইনা?সত্যি কিন্তু এই হাসিটা অমর হয়ে রইল।নাহলে পরেরদিন থেকে মেয়েটির ভালবাসা উনার প্রতি আর আগের মত থাকতো না।কেমন গা ছমছমে কবিতা,তাইনা?? লেখক:তালুকদার তুহিন ,প্রভাষক:বিশ্বনাথ কলেজ।