আবরার হত্যা মামলার চার্জশিট এ সপ্তাহেই

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। নির্মম এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের কার কী ভূমিকা ছিল তা নিরূপণ করা হচ্ছে। মামলার চার্জশিট এ সপ্তাহের মধ্যেই দাখিল করা হবে। চার্জশিটে প্রাসঙ্গিক ডকুমেন্ট হিসেবে সিসিটিভি ফুজেটও দাখিল করা হবে। শুক্রবার ‘আবরার হত্যাকাণ্ডের জন্য ছাত্র রাজনীতি না মূল্যবোধের অবক্ষয়, কোনটি দায়ী’ শীর্ষক ছায়া সংসদ বিতর্ক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। এদিন দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএফডিসি) হলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। মনিরুল ইসলাম বলেন, আবরার হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক না কেন, মূলত তারা দুর্বৃত্ত ও অপরাধী। রাজনীতি থেকেও তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি বলেন, কোনো ছাত্র সংগঠন অন্য ছাত্র বা সাধারণ কাউকে হত্যা বা মারধরের নির্দেশ দেয় না। রাজনীতির প্লাটফর্মকে ব্যবহার করে কেউ কেউ নিজের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করে থাকে। এটা রাজনীতির দায় নয়, অপরাধী বা দুর্বৃত্তের দায়। আবরার হত্যায় এ পর্যন্ত ২১ আসামি গ্রেফতার হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ঘটনার পরপরই পুলিশ ১০ জনকে আটক করে। পরে জানা যায়, তারা সবাই ওই মামলার আসামি। হত্যা মামলায় ১৯ জন আসামির বাইরেও তদন্তে বেশ কয়েকজনকে জড়িত পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে অনেকেই ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। হত্যার ঘটনায় কার কী ভূমিকা ছিল সেটা আসামিরা বলেছে। আবরার হত্যার তদন্তে পুলিশ কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছিল কি না- জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, সঠিক এবং উপযুক্ত তথ্যের প্রতিবন্ধকতা ছিল। এ ছাড়া অন্য কোনো ঝামেলা হয়নি। ঘটনার রাতে টহল পুলিশের দল কোনো মাধ্যমে তথ্য পেয়ে সেখানে যায়। কিন্তু অনুমতি ছাড়া কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশ প্রবেশ করতে পারে না- এমন একটা নিয়ম ছিল। কিন্তু পুলিশ যদি ওই রাতে সঠিক তথ্যটি পেত যে আবরার নামে কোনো ছাত্রকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করা হচ্ছে, তাহলে অবশ্যই পুলিশ ওই নিয়ম অমান্য করে ভেতরে প্রবেশ করত। কারণ তখন নিয়মের চেয়ে অপরাধ ঠেকানো বেশি জরুরি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসির প্রধান বলেন, মেধাবী মাত্রই আমরা মূল্যবোধসম্পন্ন, বিবেকসম্পন্ন বলতে পারি না। কাগুজে নম্বরের ওপর ভিত্তি করে অনেককে আমরা মেধাবী আখ্যা দিয়ে থাকি। কিন্তু প্রকৃত মেধাবী তারাই যাদের মূল্যবোধ রয়েছে, দেশের প্রতি, মানুষের প্রতি, সমাজের প্রতি ও পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে। আর এই মূল্যবোধ পর্যায়ক্রমে তৈরি হতে থাকে। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সভাপতিত্বে ছায়া বিতর্কে অংশ নেন তেজগাঁও কলেজ ও সরকারি বাংলা কলেজের শিক্ষার্থীরা। প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, বাংলা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক হারুন উর রশিদ, আরিফুর রহমান, নয়ন আদিত্য এবং উপ-কর কমিশনার মেহেদী হাসান তামিম। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেনও জানান, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আবরার হত্যার চার্জশিট জমা দেয়া হবে। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত মামলার এজাহারভুক্ত ১৯ আসামির মধ্যে ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া এজাহারবহির্ভূত ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ২১ জনের মধ্যে ৭ জন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়া ঘটনাস্থল বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ক্যান্টিন বয়, শিক্ষক, গার্ডসহ কয়েকজন ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার বস্তুগত সাক্ষ্য এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। মামলার তদন্তে যেসব প্রক্রিয়া অবলম্বন করা দরকার, তা সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় খুন হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে ৫ অক্টোবর শনিবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ। এর জের ধরে ৬ অক্টোবর রাতে শেরেবাংলা হলের নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিটুনির সময় নিহত আবরারকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালায় খুনিরা। তবে আবরার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে নিশ্চিত করেছেন তার পরিবারের সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা।