ভারতের এনআরসি এখন কোন পথে?

ভারতের এনআরসিকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, আপাতত জানার কোনো উপায় নেই। যদিও বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে এ নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হয়েছিল; কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। সুতরাং এ নিয়ে কিছুটা সংশয় তো রয়েই গেল। তবে সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনকালে এক সৌজন্য সাক্ষাৎকারে ‘এনআরসি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছিলেন। মোদির এ আশ্বাস ভারত এবং বাংলাদেশের মিডিয়ায় প্রকাশ পেলেও এ ব্যাপারে দুদেশের সরকারি কোনো বিবৃতি প্রকাশ পেয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। তিস্তাচুক্তিসহ অন্যান্য অমীমাংসিত বিষয়ে ইতঃপূর্বে দেয়া আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতে বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকারের মুখের কথার ওপর কতটুকু বিশ্বাস করা যায় তা ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়। কট্টর হিন্দুপন্থী মোদি সরকারের কথা ও কাজের ওপর সে দেশের সচেতন মানুষেরই যেখানে আস্থা নেই, সেখানে আমাদের কতটুকু ভরসা করা উচিত তা ভেবে দেখতে হবে বৈকি। এনআরসি নিয়ে ভারতের পত্র-পত্রিকায় প্রতিদিন যে খবর প্রকাশ পাচ্ছে তাতে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যাচ্ছে না। নিজেদের নতুন করে ভারতের নাগরিক হিসেবে প্রমাণ করতে হবে, প্রমাণ করতে না পারলে পরিণতি কী হবে সেই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে সে সংবাদ আমরা নিয়মিতই দেখতে পাচ্ছি ভারতের বিভিন্ন মিডিয়ায়। আসামের অনেক বাঙালি হিন্দু ও মুসলমানকে বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে ছয়টি ভিন্ন বন্দিশিবিরে বন্দি করে রাখা হয়েছে। এসব বন্দিশিবিরে এরই মধ্যে ২৭ বন্দির মৃত্যু হয়েছে। সম্প্রতি আরও একজনের নাম এ মৃত্যুর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হল। গোয়ালপাড়া বন্দিশিবিরে বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত ৭০ বছর বয়সী ফালু দাস মারা গেলে তাকে সৎকার করা নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। কর্তৃপক্ষ ফালু দাসের মৃতদেহ নিয়ে যেতে বললে তার পরিবারের সদস্যরা তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। ফালু দাসকে যেহেতু বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে বন্দিশিবিরে রাখা হয়েছিল, এ কারণে তারা এখন কর্তৃপক্ষকে তার মৃতদেহ বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিতে বলেন। ফালু দাসের ছেলে বলেন, বাবাকে যেহেতু বাংলাদেশি বলে ঘোষণা করা হয়েছিল, তাহলে দেহ নিয়ে এসে আমরা কী করব বাংলাদেশেই যাক তার দেহ। তাদের দাবি ফালু দাসকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে ঘোষণা না করা পর্যন্ত সৎকারের জন্য তারা মৃতদেহ নেবে না। এ পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রশাসন পড়েছে বিপাকে। নলবাড়ি জেলার ডিসি ব্যক্তিগতভাবে ফালু দাসের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের অনুরোধ করে ব্যর্থ হয়েছেন। ফালু দাসের ছেলে তাদের পরিবারের সবার নাম এনআরসির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সরকারের লিখিত প্রতিশ্রুতি ছাড়া মৃতদেহ সৎকার করবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। উল্লেখ্য, ইতঃপূর্বে শোনিতপুর জেলার দুলাল পাল নামের আরও একজনক বিদেশি বলে চিহ্নিত হয়ে বন্দি থাকাকালে মারা গেলে তার পরিবারও বলেছিল, তাকে যেহেতু বাংলাদেশি বলে ঘোষণা করা হয়েছিল, তাই মৃতদেহও বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হোক। মৃত্যুর ১০ দিন পর আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়ালের ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপে অবশ্য দুলাল পালের মৃতদেহ শেষ পর্যন্ত সৎকার করেছে তার পরিবার। বর্ণিত ঘটনা দুটো বিশ্লেষণ করলে সহজেই বোঝা যায়, এনআরসি নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি আসাম রাজ্যজুড়ে এক জটিল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এনআরসিকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে গিয়ে স্থানীয় বিজেপি কিছুটা বিপাকে পড়েছে। এ কারণে ৩১ আগস্ট আসামের চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণার পর তা প্রত্যাখ্যানও করেছে তারা। চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়া ১৯ লাখের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ বাঙালি। এর মধ্যে আনুমানিক ১২ লাখ হিন্দু, বাকি ৭ লাখের মতো মুসলমান বাঙালি ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর বড় সংখ্যক হিন্দু নাগরিক বাদ পড়ায় আসামব্যাপী ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হয়। কিছু হিন্দু সংগঠন ধর্মঘটের ডাকও দেয়। তারা এনআরসির পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এ নিয়ে আসাম বিজেপি সরকার প্রবল অস্বস্তিতে পড়ে যায়। জানা যায়, আসামে বাঙাল খেদাও আন্দোলনে সক্রিয় সংগঠনগুলোও এখন এনআরসির পুনর্মূল্যায়নের দাবি তুলেছে। আসামের এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হলেও এটিকে আপাতত চূড়ান্ত বলা যাচ্ছে না। তার কারণ, আসামের এনআরসি কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি পরিবারভিত্তিক যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তার সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ নোট সংযোজন করে দিয়েছিল। সে নোটে বলা আছে, এ তালিকায় যে নাম রয়েছে, তা পরে বাদও যেতে পারে এবং কোনোভাবেই এ তালিকা স্থায়ী নয়। এ ব্যাপারে নোটে যে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে উল্লেখ করা আছে সেগুলো হল- ১. এনআরসি কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে, যেসব তথ্য বা নথি দেয়া হয়েছে তাতে গলদ রয়েছে। ২. যদি দেখা যায়, কোনো ব্যক্তি ঘোষিত বিদেশি বা ১৯৬৬-৭১ সালের সময়ের মধ্যের কোনো অভিবাসী যিনি ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসে নথিবদ্ধ নন। অথবা কোনো ব্যক্তি যদি ডি ভোটার হন বা কোনো ডি ভোটারের উত্তরাধিকারী হন। ৩. ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল যদি কোনো ব্যক্তিকে বিদেশি বলে ঘোষণা করে। আসামের মতো পশ্চিমবঙ্গেও এনআরসি করা হবে ঘোষণার পর কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলেও নো-এনআরসি নো-ক্যাব (CAB- Citizenship Amendment Bill) স্লোগান ক্রমশ সোচ্চার হচ্ছে। আসাম এনআরসির চূড়ান্ত তালিকায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় মোদি সরকার এখন ক্যাব বা নাগরিকত্ব সংশোধন বিলের মাধ্যমে পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। তাদের ভাষায় যেসব হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন, শিখ বাংলাদেশ, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান থেকে ভারতে প্রবেশ করেছে তাদের নাম নাগরিকত্ব তালিকায় সংযোজন করার জন্যই ক্যাব আনা হচ্ছে। অর্থাৎ বিজেপির আসল উদ্দেশ্য হল, মুসলমানদের বিতাড়ন করা। আসাম এবং পশ্চিমবঙ্গে তথাকথিত অনুপ্রবেশকারী সব মুসলমানের বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। এ পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার তাদের পরিকল্পনায় কিছুটা পরিবর্তন এনে ‘শরণার্থী’ এবং ‘অনুপ্রবেশকারী’ ইস্যু সামনে নিয়ে এসেছে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ স্পষ্টভাবে বলেই দিলেন, ‘সকল হিন্দুকে ভারতে নাগরিকত্ব দেয়া হবে। শুধু হিন্দু নয়, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, শিখ সকলকেই দেশের নাগরিকত্ব দেয়া হবে।’ সুতরাং বাদ পড়ার মধ্যে থাকবে শুধু মুসলমানরা। বলে দেয়া হল, মুসলমান বাদে অন্য ধর্মাবলম্বীরা ‘শরণার্থী’ হিসেবে বিবেচিত হবে। অপরদিকে মুসলমানদের তথাকথিত অনুপ্রবেশকারী হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং এসব অনুপ্রবেশকারীকে ভারতের বাইরে বের করে দেয়া হবে। যদিও ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী ধর্মের ভিত্তিতে দেশের কোনো নাগরিকের নাগরিকত্ব দেয়া যায় না। বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ইতিমধ্যে নাগরিকত্ব সংশোধন বিলটি ভারতের নিুকক্ষ লোকসভায় পাস করিয়ে নিয়েছে। কাশ্মীরে ৩৭০ ও ৩৫এ ধারা যেভাবে বাতিল করা হয়েছে তাতে প্রতীয়মান হয়, একইভাবে সংবিধান এড়িয়ে বা একইভাবে উচ্চকক্ষ বিধান সভার মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করে ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব আইন প্রণয়ন করা বিজেপির পক্ষে এখন অসম্ভব কিছু নয়। আর এটি যদি করে তাহলে ভারতের এতদিনের ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের ইমেজ অচিরেই ভূলুণ্ঠিত হবে। নাগরিকত্ব স্বীকৃতি জন্য সাধারণত দুটি প্রচলিত নীতি অনুসরণ করা হয়। ১. নাগরিকদের স্বীকৃতি দেয়া হয় জন্মস্থানের হিসেবে ২. রক্তের সম্পর্ক মোতাবেক। একজন ব্যক্তি বা মানুষের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক নির্ধারণ হয় নাগরিকত্বের ভিত্তিতে। রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের আইন দ্বারাই নাগরিকত্ব নির্ধারিত হয়। ভারতে প্রথম নাগরিকত্ব আইন পাস হয় ১৯৫৫ সালে। এ নাগরিকত্ব আইন পাস হওয়ার পর এ পর্যন্ত চারবার সংশোধিত হয়েছে, ১৯৮৬, ২০০৩, ২০০৫ ও ২০১৫ সালে। ভারতের সংবিধানের পঞ্চম অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে ভারতে যারা বাস করে এবং যারা জন্মেছেন তাদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। এমনকি, যাদের জন্ম ভারতে নয় কিন্তু বসবাস করেন ভারতে এবং যাদের বাবা-মায়ের মধ্যে যে কোনো একজন ভারতে জন্মেছেন তারাও নাগরিকত্ব পাবেন। যারা ভারতে পাঁচ বছরের বেশি সময় বসবাস করছেন, তারাও নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। সংশোধনীর পর সংশোধনী হওয়ার পর সর্বশেষে এসে বলা হয়েছে, যারা ২০০৪ সালের ৩ ডিসেম্বর বা তার পর জন্মেছেন, তাদের নাগরিকত্ব প্রাপ্তির জন্য হয় তাদের বাবা-মা উভয়কেই ভারতের নাগরিক হতে হবে বা যে কোনো একজনকে ভারতীয় নাগরিক হতে হবে এবং অন্যজন বেআইনি অনুপ্রবেশকারী হলে চলবে না। এ আইনগুলোর মাধ্যমে যাদের ক্ষেত্রে সন্দেহ রয়েছে, তাদের নাগরিকত্বের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা সরকারের হাতে দেয়া হয়েছে বিধায় বিজেপি বিধানসভায় নাগরিকত্ব সংশোধন আইন অনায়াসে পাস করিয়ে নিতে পারবে বলে ধারণা করা যায়। ভারতের স্বাধীনতার সময় ধর্মের ভিত্তিতে বাংলা-আসামও ভাগ হয়েছিল। মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং হিন্দুপ্রধান পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম ভারতে অন্তর্ভুক্ত হয়। অতএব ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা বিষয় সম্পত্তি ফেলে রেখে দেশত্যাগ করেন এবং পার্শ্ববর্তী দেশে আশ্রয় নেন। সে হিসেবে সংখ্যাগুরু মুসলমানের পূর্ববঙ্গ ছেড়ে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তাছাড়া ভারতের আসাম, ত্রিপুরা কিংবা পশ্চিমবঙ্গ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান এবং বর্তমান বাংলাদেশের তুলনায় কখনও সম্পদশালী রাজ্য হিসেবে পরিচিত ছিল না। অতএব বাংলাদেশের মানুষের পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে যাওয়ার কোনো কারণও থাকতে পারে না। অপরদিকে বিজেপির হিসাব অনুযায়ী ১৯৭১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মোট আটচল্লিশ বছরে অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আনুমানিক ১ কোটি। সে হিসাবে গত আটচল্লিশ বছরে বিএসএফের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন গড়ে পাঁচশ’রও বেশি মানুষ ভারতে অনুপ্রবেশ করেছে, যা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিতে চাকরির অভিজ্ঞতার আলোকে আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি ভারতে বিএসএফের মতো একটি চৌকস বাহিনী এ হারে অনুপ্রবেশ ঠেকানোর ব্যর্থতার কোনো দায়ভার নিশ্চয়ই নেবে না। বিএসএফ যদি এ দায়ভার না নেয় তাহলে বিজেপি অনুপ্রবেশকারীর যে হিসাব দিয়েছে তা আর কোনো যুক্তিতেই টিকল না। এনআরসি ইস্যু নিয়ে বিজেপির বিভিন্ন স্তরের নেতাদের প্রায়ই বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্য দিতে শোনা যায়। এনআরসি তালিকাবহির্ভূত বাঙালি মানেই বাংলাদেশি এবং তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে বলে বিজেপি নেতা অমিত শাহ যখন ক্রমাগত হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন তখন স্বাভাবিক কারণেই আমরা চিন্তিত না হয়ে পারি না। চিন্তিত হওয়ার কারণও আছে। ভারতের বিধানসভায় নাগরিকত্ব সংশোধন বিল পাস হওয়ার পর পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে পৌঁছে তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না। যদিও নাগরিকত্ব সংশোধন বিল নিয়ে খোদ বিজেপির ভেতরই দ্বিমত আছে। বিশেষ করে আসামের বিজেপি ও বিজেপিসমর্থিত কিছু দল ও অঙ্গ-সংগঠন এ ব্যাপারে বেশ প্রতিবাদমুখর। আগেই বলেছি, এই বিল পাস হওয়ার পর মুসলমান ছাড়া অন্য ধর্মে বিশ্বাসীরা ভারতের বৈধ নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন। তখন স্বাভাবিকভাবেই নতুন নাগরিকত্বপ্রাপ্ত এ মানুষদের বিজেপির ভোট ব্যাংকে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হবে সন্দেহ নেই। বিজেপি তখন বাদ পড়া মুসলমানদের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেয় তা এখন দেখার বিষয়। প্রশ্ন হচ্ছে, এসব মানুষ বাকি জীবন কি বন্দিশিবিরেই কাটাবেন? নাকি তাদের ভারতের বাইরে বের করে দেয়া হবে? যদি বের করে দেয়া হয় তাহলে কোন দেশে ঠেলে দেয়া হবে তাদের? বিজেপি নেতা অমিত শাহের বক্তব্য যদি তার দল বা সরকারের সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে এবং সে বক্তব্যের প্রতি তার সরকার যদি অবিচল থাকে তাহলে সে দেশটি নিশ্চয়ই বাংলাদেশ হবে। বাংলাদেশ কি তখন ভারতের ওই চাপ মোকাবেলা করতে পারবে? এসব প্রশ্ন যখন ঘুরপাক খাচ্ছে তখন আমাদের দায়িত্বশীল মহলের একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য সব গোলমাল করে দিল। যখন ‘বাংলাদেশি হিসেবে প্রমাণিত হলে তাদের দেশে ফিরিয়ে নিতে আপত্তি নেই বলে মন্তব্য করা হয় তখন এ দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা শঙ্কিত না হয়ে পারি না। অবশ্য মিডিয়ায় প্রকাশিত সেই মন্তব্যটি দায়িত্বশীল মহলের কারও ব্যক্তিগত মন্তব্য কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে আমরা যে কথাই বলি না কেন। ভারতের এনআরসি নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি ভবিষ্যতে কোন দিকে মোড় নেয় তার জন্য হয়তো আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।