নন্দিত ডেস্ক: নিউইয়র্কে করোনায় কতজন বাংলাদেশি মারা গেছেন, কতজন আক্রান্ত হয়েছেন- এই প্রশ্নটি হরহামেশা আমাদের গণমাধ্যম কর্মীদের শুনতে হচ্ছে। এক কথায় যদি উত্তর দিতে হয়, তাহলে বলতে হবে- প্রকৃত সংখ্যাটা আমাদের জানা নেই। কারণ এর সঠিক পরিসংখ্যান নেই, জানার কোনো উপায়ও নেই। আপনারা সবাই গণমাধ্যমের খবরে দেখেছেন, নিউইয়র্কে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২৩ দিনে অন্তত ৯৬ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন। এর মধ্যে চিকিৎসক, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী, সাংবাদিক, মসজিদের ইমাম, ট্যাক্সি ড্রাইভার, বিক্রয়কর্মী, গৃহিণী, সিনিয়র সিটিজেনসহ বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার বাংলাদেশিরা রয়েছেন। আর কত বাংলাদেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সে সম্পর্কে আমাদের ধারণা আরও কম। হতে পারে তা আমাদের কল্পনারও অতীত। কিভাবে? অংক করে বলছি শুনুন। নিউইয়র্ক সিটির মোট জনসংখ্যা প্রায় ৮৬ লাখ। এর মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৮৬ হাজার মানুষ। অর্থাৎ প্রতি ১০০ জনে আক্রান্ত হয়েছেন ১ জন। প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে ১০ লাখ বাংলাদেশি বসবাস করেন। এর মধ্যে নিউইয়র্ক স্টেটে এর অর্ধেক ৫ লাখ এবং এই ৫ লাখের মধ্যে সিটির বাসিন্দা অন্তত ৩ লাখ। এই ৩ লাখ বাংলাদেশি নিউইয়র্ক সিটির মোট জনসংখ্যার (৮৬ লাখের মধ্যে) ৩.৪৯ শতাংশ। সেই হিসেবে নিউইয়র্কে অন্তত ৩ হাজার বাংলাদেশি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কথা। কিন্তু প্রকৃত সংখ্যাটা এরচেয়েও বেশি হতে পারে! হোয়াইট হাউজ বলছে, আফ্রিকান আমেরিকানরা বেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু এরপরই আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখছি, এশিয়ানদের মধ্যে বাংলাদেশি ও নেপালি কমিউনিটিতে তুলনামূলক আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যেতে পারে যে নিউইয়র্ক সিটির দুটি বরো কুইন্স ও ব্রুকলিনে (কিংস) বেশি বাংলাদেশি বাস করেন এবং করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সেখানেই সবচেয়ে বেশি। এখন আসা যাক বাংলাদেশিদের মৃত্যুর সংখ্যাটা কত? নিউইয়র্ক সিটিতে করোনায় মোট আক্রান্ত ৮৬ হাজারের মধ্যে ৪৮০০ জন মারা গেছেন। অর্থাৎ মৃতের সংখ্যা আক্রান্তের ৫.৫৯ শতাংশ। এখন আমরা যদি সেই হার হিসেবে বিবেচনা করি তাহলে দেখা যায়, আক্রান্ত ৩ হাজার বাংলাদেশির মধ্যে ১৬৭ জন মারা যাওয়ার কথা। কিন্তু আমরা জেনেছি মৃত্যু হয়েছে ৯৬ জনের। কেন কম জেনেছি, সেই ব্যাখ্যাও আছে। হতে পারে- এক. কোভিড-১৯ ভাইরাসটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে হওয়ায় এতে আক্রান্ত হলে কিংবা মৃত্যুবরণ করলে সামাজিক কারণে অনেকে তা বলতে দ্বিধা করছেন। দুই. পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিদিন যুক্তরাষ্ট্রে যত জন মারা যাচ্ছেন প্রকৃত সংখ্যাটা আরও ১৮০ থেকে ১৯৫ জন বেশি হবে। কারণ সাংঘাতিক করোনা লক্ষণ নিয়ে মারা যাওয়া অনেকের ভাইরাস পরীক্ষার সুযোগ হয়নি। অনেক সময় দেখা যাচ্ছে, মৃত্যু হওয়ার পর পরীক্ষা করে দেখা গেছে মৃত ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। যে হিসাবটা মোট সংখ্যার সঙ্গে সাধারণত যোগ হচ্ছে না। এসবই একটা হিসাব। একটা যৌক্তিক সংখ্যা ধরে নিয়ে গাণিতিক হিসাব। কিন্তু এই হিসেব-নিকেষের কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। পাওয়া সম্ভবও নয়। কিন্তু তারপরও মানুষের মধ্যে যে জিজ্ঞাসা রয়েছে তা সম্পর্কে তাদেরকে একটা ধারণা দেওয়ার জন্যই এতগুলো কথা বললাম। আর বললাম এ কারণে যে, পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ তা যেন সবাই অনুধাবন করতে পারেন। আর অনুধাবন করতে পারলে একটাই কাজ করতে হবে সবাইকে তা হলো বাড়িতে থাকতে হবে, বন্দি থাকতে হবে। বাসার ময়লা ফেলতে বেরোলেও কিংবা ফ্ল্যাট বাড়ির কমন প্যাসেজে হাঁটা-চলা করতে চাইলেও আপনাকে সুরক্ষিত (প্রিকোশন) হয়ে বের হতে হবে। বাজার করে বাড়িতে এসে শুধু পোশাক কিংবা নিজেকে পরিষ্কার করলেই চলবে না, সদাই করা জিনিসপত্রের প্যাকেটগুলো এমনকি মাছ-মাংস, সবজি বা অন্যান্য সবকিছু ভালোভাবে ভাইরাসমুক্ত করার চেষ্টা করতে হবে। এতো কিছুর পরও আমি-আপনি করোনা থেকে রক্ষা পাব তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারব না। কোভিড-১৯ যে আমাদের নাগালের মধ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে! সবাই সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন, আতঙ্কে থাকুন। আতঙ্কে থাকলেই আপনি ঘরে বন্দি থাকবেন। এটাই এখন বাঁচার একমাত্র পথ।
মন্তব্য