এমসি কলেজে গণধর্ষণ: ৮ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট

সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণ মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামী সাইফুরসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে সিলেটের চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবুল কাশেম এর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহপরান থানার ওসি (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য। এছাড়াও আসামী সাইফুর রহমান ও শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনির বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা অভিযোগ দাখিল করা হয়। চার্জশিটে জানা যায়, ধর্ষনের গটনায় ক্রাইমসিন হতে ফরেনসিক রিপোর্ট পর্যন্ত সবকিছুতেই উক্ত ৮ আসামীর সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়। সিআইডি ফরেনসিক ল্যাবে জব্দকৃত আলামত পরীক্ষান্তে আসামীদের ডিএনএ প্রোফাইলের সাথে সাদৃশ্যতা রয়েছে। সম্পূর্ণ সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রনীল রাজা রাজন উক্ত গণধর্ষণ মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামী মো. সাইফুর রহমান, শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি, তারেকুল ইসলাম তারেক, অর্জুন লস্কর, রবিউল হাসান, মাহফুজুর রহমান, আইনুদ্দিন আইনুল ও মিজবাউল ইসলাম খান এর বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়। শাহপরাণ (রহ.) থানার অভিযোগপত্র নং-১৮, তাং- ০২/১২/২০২০। থানায় ধর্ষণ মামলা নং- ২১. তাং-২৬/০৯/২০২০ ধারা- নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধন/২০০৩) এর ৯(৩) তদসহ পেনাল কোড এর ৩৪২/৩২৩/৩৭৯/৩৮৫/৩৪ ধারায় মামলা রুজু হয়েছিল। ঘটনার দিন রাতে শাহপরাণ (রহ) থানা পুলিশ এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে তল্লাশী চালিয়ে ১টি পাইপ গান, ৪টি রামদা, ২টি দা উদ্ধার করায় সাইফুর রহমান ও রনিকে অভিযুক্ত করেও চার্জশিট প্রদান করেন। শাহপরাণ থানায় চার্জশিট নং- ১৬৪,তাং-২২/১১/২০২০। থানায় মামলা নং-২২। উল্লেখ্য: গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের শিকার হন এক গৃহবধূ (২১)। ছাত্রাবাসের আঙ্গিনায় স্বামীকে আটকে রেখে প্রাইভেট কারের ভেতর ওই গৃহবধূকে গণধর্ষণ করা হয়। পুলিশ নির্যাতিত নারীকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। ওসিসিতে তিন দিন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। ওই রাতেই গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূর স্বামী মাইদুল ইসলাম বাদী হয়ে মহানগরের শাহপরাণ থানায় ৬ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেন। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকায় ৪ জনকে গ্রেফতার করে। এছাড়া সিলেট জেলা পুলিশ ২ জনকে, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ পুলিশ ২ জনকে গ্রেফতার করে। এসএমপি পুলিশ কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে না পারায় সিলেটজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। গ্রেফতারের পর আটজন আসামিকে পর্যায়ক্রমে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। রিমান্ড শেষে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তারা। জবানবন্দিতে প্রধান আসামি সাইফুর, তারেক, শাহ মাহবুবুর ও অর্জুন লস্কর ধর্ষণের কথা স্বীকার করেন। রবিউল ও মাহফুজুর ধর্ষণে সহায়তা করার কথা স্বীকার করেন। সন্দেহভাজন আসামি মিসবাউর রহমান ওরফে রাজন ও আইনুদ্দিন জবানবন্দি দেন। এর আগে ১ ও ৩ অক্টোবর আট আসামির ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে টেস্টের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। সেই ডিএনএ নমুনার প্রতিবেদন রোববার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহপরাণ থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্যের কাছে পৌঁছায়। তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করেন এসএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এতে ৬ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সরাসরি যুক্ত থাকার প্রমাণ মেলে। এসএমপি কমিশনার মো.নিশারুল আরিফ বলেন, আসামিরা যাতে সর্বোচ্চ সাজা পায় সে বিষয়টি মাথায় রেখে আইনগত সব তথ্য-উপাত্ত অভিযোগপত্রের সঙ্গে জমা দেয়া হবে।