সিলেটে দুই মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড

সিলেটে হত্যা ও মাদক মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া মাদকের মামলায় আরও দুই আসামিকে ৫ বছর করে সাজা এবং তিনজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে সিলেটের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. মশিউর রহমান চৌধুরী আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন।হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সুভাস কুর্মী ওরফে মেটন সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার গুলনি চা বাগানের মৃত মুকুল কুর্মীর ছেলে। রায়ে তাকে আরও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।এছাড়া মাদক মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আব্দুল মালিক ওরফে লিটন ওরফে লম্বা লিটন সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম লাখের পাড় গ্রামের হাজি শহীদ উদ্দিন ওরফে শহির আলী ছেলে।আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন ও অ্যাডিশনাল পিপি শাসমুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।মামলার বরাত দিয়ে আদালত সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ২ এপ্রিল দুপুরে সবিতা মুণ্ডা নামে এক নারীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে প্রকাশ কুর্মী মেটন। ওই নারী ঘটনাটি তার মাকে জানালে সুভাস মুণ্ডা সবিতাকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর বিষয়টি কাউকে না জানাতে বলেন। এরপর ২৯ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে সবিতাকে বিয়ে করবেন বলে ফোন দিয়ে বের করে নেন সুভাস। রাতে সবিতাকে না পেয়ে বাড়ির লোকজন তাকে খুঁজতে থাকেন।পরে ৩০ এপ্রিল সকাল ৬টার দিকে গুলনী চা বাগানের একটি কাঁঠাল গাছ থেকে ওড়না দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় সবিতার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহত ওই নারীর ভাই সুরেন মুণ্ডা বাদী হয়ে গোয়াইনঘাট থানায় মামলা দায়ের করেন। থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহসিন ভুঁইয়া সুভাস কুর্মী মেটনকে অভিযুক্ত করে একই বছরের ২৮ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র (নং-৩২৮) দাখিল করেন।২০২২ সালে বিচারের জন্য মামলাটি অত্র আদালতে দায়রা ৫২৫ মূলে রেকর্ড করা হয়। ওই বছরের ২৪ মে আদালত অভিযোগটি আমলে নেন। এরপর ২০২৩ সালের ২৬ জুলাই আসামি সুভাস কুর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর বিচারকালে ২২ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।এছাড়া, এক কেজি হেরোইন বহনের দায়ে আব্দুল মালেক ওরফে লিটনকে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। এই মামলার অপর আসামি মাসুম আহমদ ওরফে মাসুদ ও দুলাল মিয়া ওরফে দুলাল আহমদকে পাঁচ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন একই আদালতের বিচারক।দণ্ডিত মাসুম আহমদ গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার কালির বাজার গ্রামের ছেলে আমজাদ হোসেনের ছেলে। তিনি নগরের উপকণ্ঠে মেজরটিলা ফাল্গুনী আবাসিক এলাকায় রিপন মেম্বারের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ওপর দণ্ডিত দুলাল মিয়া ওরফে দুলাল আহমদ সিলেটের জৈন্তাপুরের কেন্দ্রী গ্রামের কনাই আহমদ ওরফে কনাই মিয়ার ছেলে।আর একই মামলায় খালাস প্রাপ্ত চার অভিযুক্তরা হলেন- সোহেল বুনার্জী, ফরিদ মিয়া, হোসেন ও মুকুল মিয়া ওরফে মুকুল বখত।এছাড়া অপর মামলার বরাত দিয়ে আদালত সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর পৌনে ১২টার দিকে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর এলাকায় হেরোইন বিক্রির অভিযোগ পেয়ে অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। এ সময় আসামি আব্দুল মালেক লিটনের রান্নাঘরের দরজার পাশে স্কুল ব্যাগে থাকা এক কেজি হেরোইন ও হেরোইন সেবনের বিভিন্ন উপকরণ জব্দ করা হয়। আর বসতঘরের খাটের নীচ থেকে সোহেল বুনার্জী ও মাসুম আহমুদকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় গোয়েন্দা থানা পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে।মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ (নং-২৭২) দাখিল করেন।চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর বিচারকার্য শুরু হয়। মামলায় ২২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালতের বিচারক এ রায় ঘোষণা করেন।