করোনাকালে পতুর্গালে যেমন আছেন প্রবাসীরা

দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের পর্যটননির্ভর দেশ পর্তুগাল। সম্প্রতি নভেল করোনাভাইরাসের আঘাতে ধস নেমেছে দেশটির পর্যটন খাতে। যদিও কোভিড-১৯ নিঃসন্দেহে বর্তমান শতাব্দীর সবচেয়ে বড় দুর্যোগের নাম। কোনও ধরণের অস্ত্র নয়, নয় কোনও ধরণের পারমাণবিক যুদ্ধ; সামান্য কয়েক ন্যানোমিটারের এক ক্ষুদ্র আলোক আণুবীক্ষণিক বস্তুর কাছে পৃথিবীর মানুষ আজ অসহায়। রিফাত হোসেন ,থাকেন পতুর্গালে লিজবনে । পেশায় একজন উবার চালক । পতুর্গালের অবস্থা এখন বেশ স্বাভাবিক হয়ে এলেও থেমে নেই মৃত্যুর মিছিল । কিছুদিন আগেও দেশজুড়ে ছিল ভূতুড়ে অবস্থা । এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে পতুর্গালে যখন প্রথম কোন বাংলাদেশী করোনা আক্রান্তের খবর শোনেন তখন খুব ভেঙে পড়েন রিফাত ।প্রতিদিন স্বজনদের জন্য বেড়ে চলে তার আতঙ্ক।মৃত্যুপুরীতে পরিণত হওয়া থেকেও নিজ জীবনের চেয়ে ভয় পান তার স্বজনদের জন্য । বলছিলেন আমরা খারাপ নেই । জঙ্গিদের হাতে আক্রান্ত হওয়ার পর হুমায়ুন আজাদ লিখেছিলেন, ‘মৃত্যু থেকে এক সেকেন্ড দূরে আমরা সবাই এখন মৃত্যু থেকে এক সেকেন্ড দূরে আছি। অদৃশ্য করোনাভাইরাস কখন কার দিকে হানা দেবে, এক সেকেন্ড আগেও কেউ জানি না। পর্তুগালের রাজধানী লিসবনের সালধানা মোড়ে বাইসাইকেল নিয়ে দাড়িয়ে আছেন কয়েকজন উবার ইটস'চালক। তারা সবাই আন্তজার্তিক রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান উবারের ফুড ডেলিভারি সেবা 'উবার ইটস' এর মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন । তাদের একজন আজিজুল হক আগে একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন । কিন্তু দেশটিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর রেস্তোরা বন্ধ হওয়ায় জীবন-জীবিকা নিয়ে অনেকটা বিপাকে পড়েছিলেন তিনি ।আলাপকালে জানান ''এখানে থাকা-খাওয়ায় অনেক খরচ। হাতে যেটুকু টাকা পয়সা ছিল, সব শেষ। বাড়ির অবস্থাও বেশি ভালো নয় যে, সেখান থেকে টাকাপয়সা এনে খরচ চালাবো। আসলে খুব বিপদে পড়েছিলেন ।'' অনেকটা কষ্ট করে বাইসাইকেল নিয়ে নেমে পড়েন উবারের ফুড ডেলিভারির কাজে ।এখন ভালই রোজগার করতে পারছেন । তার পাশে থাকা আরো কয়েকজনের সাথে আলাপকালে তারা জানান যদিও করোনাভাইরাসের এই সময়ে ডেলিভারির কাজ অনেকটা জুঁকি নিয়ে করতে হয় আর কোনো উপায় না পেয়ে জীবন বাজি রেখেই ডেলিভারি সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারা । বাঙালি প্রবাসী বদরুল আহমদ নন্দিত সিলেটকে জানান, বিশ্ব পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের জীবন যাপন করতে হচ্ছে। গোটা বিশ্বই এখন একটি সঙ্কটের মাঝ দিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি মেনে নিয়েই আমাদের করোনা মোকাবেলা করে যাচ্ছি । সরকার জরুরি অবস্থা শিথিল করলে কর্মক্ষেত্রে আবার যোগ দিতে পারবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি । বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনা এ বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তকে প্রভাবিত করেছে ধনী-দরিদ্র সবাইকে। তবে প্রবাসীদের একটি মৃত্যুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটি পরিবার। দেশে থাকা স্বজনেরা।যদিও প্রবাসে মানুষের জীবন খুব কষ্টের। করোনাভাইরাস সেই কষ্টটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এভাবেই এই সংকটময় মুহূর্তে দিন পার করছেন পতুর্গাল প্রবাসীরা । তারা যেমন আছেন যেভাবে আছেন তা নিয়ে খুব বেশী না ভেবে চিন্তিত আছেন দেশের প্রিয় মানুষ গুলোর জন্য । তাদের চাওয়া একটাই- " ভালো থাকুক তাদের স্বজনরা।