প্রতারণার মামলা হলে সর্বোচ্চ ৭ বছরের জেল

অবিশ্বাস্য সব অফার দিয়ে গ্রাহকদের কাছে অগ্রিম টাকা নেয়া ই-কমার্সগুলোর বিরুদ্ধে নজরদারি শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সরাসরি পণ্য ডেলিভারি দেয়া প্রতিষ্ঠান ছাড়াও যেসব প্রতিষ্ঠান ফেসবুক ও অনলাইনভিত্তিক পণ্য ডেলিভারি দিয়ে থাকে তাদের নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। ওইসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ও কর্মকতা-কর্মচারীদের বায়োডাটা সংগ্রহ ছাড়াও তাদের পণ্য ডেলিভারির নিয়ম, পণ্য ডেলিভারির অর্থ আদায়ের পদ্ধতি, ওই প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো ভুক্তভোগী প্রতারণার শিকার হয়েছেন কি-না, প্রতিষ্ঠানটির অর্থের উৎস ও বিনিয়োগের স্থান, আয় ও ব্যয়ের খতিয়ান, মোট সম্পদের পরিমাণ এবং বিনিয়োগের চেয়ে গ্রাহকের কত টাকা পণ্য ডেলিভারির কথা বলে নেয়া হয়েছে- তার খোঁজ নেয়া হচ্ছে। হাতে গোনা কয়েকটি নাম করা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বাদে এখন ফেসবুকে ই-কমার্সের ছড়াছড়ি। প্রায় ২৭টি ফেসবুকের পেজকে চিহ্নিত করেছে ডিএমপির সাইবার ক্রাইম শাখা। অনলাইনে ওইসব চমকপ্রদ অফারের লোভে গ্রাহকেরা তাদের পণ্য পাওয়ার জন্য অগ্রিম টাকা দিয়ে থাকে। সাইবার ক্রাইম শাখার কাছে কয়েকজন ভুক্তভোগী পণ্য ডেলিভারি না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। গত ১৩ই জুলাই প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে ই-কমার্স সাইট নিরাপদ ডটকমের সিইও শাহরিয়ার খানকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। শাহরিয়ারের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের প্রায় ৭ থেকে ৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আসে। শাহরিয়ার এখন কারাগারে রয়েছে। এদিকে, গ্রাহকদের টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করে প্রতারণার মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি ৭ বছর বলে জানা গেছে। ওই প্রতারকেরা আবার সহজেই আদালত থেকে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে জামিন পাচ্ছে। নিম্ন আদালত জামিন না দিলে তারা হাইকোর্টে দ্বারস্থ হচ্ছেন। জামিনে বের হয়ে তারা আবার আগের মতো প্রতারণার সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে। তাদের ফাঁদে পা দিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন সাধারণ গ্রাহকেরা। আইনজীবীরা বলছেন, যেসব প্রতারক গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাচ্ছে তাদের প্রতিরোধে আইনের ধারাই সাজার পরিমাণ বেশি হওয়া দরকার। এ বিষয়ে গতকাল বিকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত-উপ-পুলিশ কমিশনার মো. নাজমুল ইসলাম মানবজমিনকে জানান, ‘ ই-কমার্সে কোনো ভুক্তভোগী অভিযোগ করলে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়। কিছুদিন আগে নিরাপদ নামে একটি অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের মালিককে গ্রাহকদের সময়মতো ডেলিভারি না দেয়া ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা অনলাইনভিত্তিক যেসব প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করছে তাদের নজরদারিতে রেখেছি। ’ এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি আব্দুল্লাহ আবু জানান, ‘টাকা আত্মসাতের অভিযোগে প্রতারণার মামলায় সর্বোচ্চ ৭ বছর ও সর্বনিম্ন ৩ বছর জেলের বিধান রয়েছে। প্রতারকরা আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে আবার প্রতারণার কাজে জড়িত হচ্ছে।’ ডিএমপির সাইবার ক্রাইম সূত্রে জানা গেছে, কিছু বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলো টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দিয়ে অনলাইনে পণ্য বিক্রয় করছে। এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের ত্রুটি পাওয়ার কারণে তাদের প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব ইতিমধ্যে জব্দ করেছে পুলিশ। ই-অরেঞ্জের সঙ্গে জড়িত পুলিশের বনানী থানার ওসি (তদন্ত) সোহেল রানা অবৈধ পথে পাশের দেশ ভারতে গিয়ে ধরা পড়েছেন। সূত্র জানায়, কিছু নাম করা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ফেসবুকে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নজরদারি করছে ডিএমপির সাইবার শাখা। ফেসবুকভিত্তিক ওই সব প্রতিষ্ঠান তাদের ফেসবুক পেজে বিভিন্ন পণ্যের ছবি আপলোড করে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করছে। বাজারে যে পণ্যের দাম তার চেয়ে অর্ধেক দাম হওয়ার কারণে গ্রাহকেরা ওইসব পণ্য কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। গ্রাহকেরা অগ্রীম টাকা পরিশোধ করছেন। কোনো প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের বাসায় গিয়ে ডেলিভারি দেয়ার অফার প্রদান করাই অনেক গ্রাহক তাদের পণ্য কেনার ফাঁদে পা দিচ্ছেন। সূত্র জানায়, কিছু প্রতিষ্ঠান আবার প্রতারণার নতুন ফাঁদ পেতেছেন। তারা সমাজের কিছু নামি ব্যক্তিদের গ্রাহক সাজিয়ে তাদের ছবি ফেসবুকে আপলোড করে ফেসবুকের বিভিন্ন মেসেঞ্জারে শেয়ার করছেন। আবার কোনো কোনো পেজে তাদের ওই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। অথচ ওই ব্যক্তি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। তাদের পরিচয় জেনে গ্রাহকরা অগ্রীম টাকা দিয়ে পণ্য অফার করে ওই প্রতিষ্ঠানের ফাঁদে পা দিচ্ছেন। এ চক্রকে আইনের আওতায় আনার জন্য কাজ করছে ডিএমপির সাইবার ক্রাইম শাখা। সূত্র জানায়, ওই প্রতিষ্ঠান যে মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেছে সেই টাকার উৎসও জানার চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।