সব গুছিয়ে রাজপথে নামতে হবে

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে রাজপথে আন্দোলনের পক্ষেই মত দিয়েছেন বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা সভাপতিরা। দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে বলেছেন তারা। ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণে দ্বিতীয় দফা সিরিজ বৈঠকের প্রথম দিন মঙ্গলবার বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে এমন অভিমত ব্যক্ত করে তারা বলেন, রাজপথের আন্দোলনে নামার আগে দলসহ সবকিছু গুছিয়ে নিতে হবে। কারণ আওয়ামী লীগ বড় একটি শক্তি। তাদের সঙ্গে প্রশাসন রয়েছে। তাই বিক্ষিপ্ত আন্দোলন করলে সফলতা পাওয়া যাবে না। শুধু একটি ব্যানার দিয়ে মিছিল করলেই আন্দোলন হয় না। সিনিয়র নেতাদের সামনে থাকতে হবে। ঢাকায় যাতে জোরদার আন্দোলন হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। তারা বলেন, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ছাড়া বর্তমান সরকারকে হটানো সম্ভব নয়। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত প্রতিটি ইউনিটে আন্দোলনমুখী নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে। যারা রাজপথে থাকবে তাদের মূল্যায়ন করতে হবে। এ সময় আন্দোলনে সরকারবিরোধী সব দলকে এক ছাতার নিচে আনার পক্ষেও মত দেন তারা। পাশাপাশি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন জোরদার ও তাতে কোনো আপস না করার পরামর্শ দেন। এছাড়া নির্বাচন কমিশন গঠন, দল গোছানো, জোটের রাজনীতিসহ নানা বিষয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। এ সময় দলের হাইকমান্ড থেকে বলা হয়, আপনারা যা বলেন তার অনেক কিছু করেন না। আন্দোলনের কথা বলছেন কিন্তু অতীতে দেখা গেছে অনেকেই রাজপথে ছিলেন না। ভবিষ্যতে যাতে এমন না হয়। চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফা সিরিজ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি তিনি অংশ নেন। প্রথম দিন ঢাকা ও ফরিদপুর বিভাগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা সভাপতিরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে টানা তিন দিন কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করে বিএনপির হাইকমান্ড। বৈঠকের প্রথম দিন মোট ১২৬ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও ৭৮ জন উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে বক্তব্য দেন ৪১ জন। মূল মঞ্চে ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ আবু জাফর, বাবুল আহমেদ, হাবিবুর রশিদ হাবিব, মুন্সি বজলুল বাসিত আঞ্জু, ওবায়দুল হক নাসির, শেখ রবিউল ইসলাম রবি, আব্দুল মতিন, পেয়ারা মোস্তফা, নিপুণ রায় চৌধুরী, ফেরদৌস আহমদ খোকন, কাজী মনিরুজ্জামান মনির, খন্দকার আবু আশফাক, আকরামুল হাসান, রফিকুল ইসলাম রাসেল, ইয়াসমিন আরা হক, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ মোদাররেছ আলী ইসা, মজিবুর রহমান, সাঈদ সোহরাব, তমিজউদ্দীন, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী, দিপু ভূইয়া, অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান সুরুজ, রোকসানা খানম মিতু, রেজা আলিম, ওমর ফারুক সাফিন প্রমুখ। বৈঠকের শুরুতে শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ও প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। সার্বিক সহযোগিতা করেন দলের দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মনির হোসেন, বেলাল আহমেদ ও সহতথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন নসু। বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান অনির্বাচিত দখলদার সরকার একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েমের যে লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে-এ বিষয়ে নেতারা আলোচনা করেছেন। গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও দলের সাংগঠনিক বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সামনে আরও সভা রয়েছে। সব সভা শেষে বিস্তারিত গণমাধ্যমে জানানো হবে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বেশির ভাগ নেতাই আন্দোলন, নির্বাচন, দল পুনর্গঠন, চেয়ারপারসনের মুক্তির ওপর পরামর্শ তুলে ধরেন। অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী বলেন, চূড়ান্ত আন্দোলনে নামার আগে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে নিজ নিজ শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দাবি নিয়ে একযোগে রাজপথে নামতে হবে। ঘরে ঘরে গিয়ে মহিলাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা বোঝাতে হবে। এ কাজটি মহিলা দলকে করতে হবে। আকরামুল হাসান বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক কারণে ভিত্তিহীন মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। তাকে মুক্ত করতে আন্দোলনের বিকল্প নেই। তার মুক্তির প্রশ্নে কোনো আপস করা যাবে না। শেখ রবিউল ইসলাম রবি বলেন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে আন্দোলন করতে হবে। বিএনপির নেতৃত্বে এ আন্দোলন হতে হবে। বৈঠকে একাধিক নেতা নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা ছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, এজন্য কোনো রাজনৈতিক ফাঁদেও পড়া যাবে না। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের নামে বিএনপির রাজনীতিকে অন্য কোনো দলের নামে লিজ দেওয়া হয়েছিল কিনা, সংলাপের নামে সময়ক্ষেপণ কিংবা রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাব ছিল কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে। তারা বলেন, এমনিতেই আন্দোলন ছাড়াও তাদের বেশির ভাগ নেতাকর্মী ঘরছাড়া। মামলা-হামলায় বিপর্যস্ত তৃণমূল। এবারও সরকারকে ওয়াকওভার দিলে বিএনপির রাজনীতি অস্তিত্বের মুখে পড়বে। তাই এবার সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন ছাড়া তাদের মুক্তি মিলবে না। খন্দকার আবু আশফাক বলেন, তারেক রহমান এখন গণমানুষের নেতা। তার নেতৃত্বেই আন্দোলন হতে হবে। জেলার রাজনীতিতে আন্দোলন ও দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় বিএনপির সঙ্গে অঙ্গ সংগঠনের সমন্বয় থাকতে হবে। জোট প্রসঙ্গে এক নেতা বলেন, ছোট অনেক দল নিয়ে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে জোট করা হয়। বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতাকে তাদের পেছনের সারিতে বসতে হয়েছে। কিন্তু তাদের কাছ থেকে আমরা কিছুই পাইনি। এত আয়োজন করে ভোটে গিয়েও মাত্র ৬টি আসন পেয়েছি। তারা শুধু আমাদের কাছ থেকে নিয়েছে। যারা আমাদের চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে মানবে না তাদের সঙ্গে ভবিষ্যতে যাতে কোনো জোট করা না হয়। আজ চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও রংপুর বিভাগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা সভাপতিদের সঙ্গে বৈঠক হবে।