ডাকাতি ও ধর্ষণের পর চলন্ত বাস থেকে যেভাবে পালায় ডাকাতরা

ডাকাতি ও ধর্ষণের পর চলন্ত বাস থেকে যেভাবে পালায় ডাকাতরা

কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঈগল পরিবহণের বাসে টাঙ্গাইলের মধুপুরে ডাকাতি ও এক নারীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। মধুপুরে এসে বাস নিয়ন্ত্রণে নেয় ডাকাতরা।

এর পর তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক থেকে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ-জামালপুর সড়কে ঢুকে পড়ে। এই পথে চলার সময়েই বাসের মধ্যে চলে ডাকাতি ও ধর্ষণ। এর পর রক্তিপাড়া এলাকার মসজিদের কাছাকাছি গিয়ে একে একে চলন্ত বাস থেকে নেমে পড়ে ডাকাত দলের সদস্যরা। যে ডাকাত চালকের আসনে বসেছিল সেও চলন্ত অবস্থায় বাসের জানালা দিয়ে নেমে পড়ে। এ সময় বাসটি সড়কের পাশে একটি বিদ্যুতের খুঁটিতে ধাক্কা দিয়ে কাত হয়ে যায়। ওই অবস্থাতেই এটি স্থির হয়।

টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া বাজারে ওই দিন রাতে পাহারা দিচ্ছিলেন নৈশপ্রহরী হেলাল মিয়া। ডাকাতরা চলে যাওয়ার পর পর তিনি ওই বাসের কাছে যান।

হেলাল মিয়া বলেন, বাসটি রক্তিপাড়া বাজার পার হওয়ার পরই গতি কমিয়ে ফেলে। এ সময় কয়েকজনকে বাস থেকে নেমে যেতে দেখলাম। তার পরই বাস থেকে ‘ডাকাত’ ‘ডাকাত’ বলে চিৎকার শোনা যায়। বাসের পেছনে একটি সাদা মাইক্রোবাস ছিল। ডাকাত দলের সদস্যরা বাস থেকে নেমে দৌড়াতে শুরু করে। একটু সামনে গিয়ে তারা সাদা মাইক্রোবাসটিতে উঠে পড়ে।

তিনি বলেন, যেহেতু বাসটি সড়কের পাশে হেলে পড়ে, তাই আমি দ্রুত সেখানে গিয়ে চিৎকার দিয়ে স্থানীয়দের এগিয়ে আসতে বলি। হেলে পড়ার কারণে দরজা দিয়ে যাত্রীদের বের করা যাচ্ছিল না। পরে জানালা দিয়ে তাদের বের করা হয়। মসজিদের মই দিয়ে অনেক যাত্রীকে নামিয়ে আনা হয়।

তিনি আরও বলেন, বাসে এক নারীকে অর্ধনগ্ন অবস্থায় পাওয়া যায়। অন্য নারীদের ওড়না দিয়ে তার শরীর ঢেকে দেওয়া হয়। এ সময় যাত্রীরা জানান, বাসে ডাকাতি হয়েছে। ডাকাতরা তাদের সর্বস্ব লুটে নিয়েছে। গাড়িতে থাকা নারী যাত্রীকে ধর্ষণ করেছে ডাকাতরা।

তবে কি বাসে একাধিক নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন? এ প্রশ্নের জবাবে হেলাল মিয়া বলেন, ঘটনাটা আমার কাছে এত আকস্মিক ছিল যে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করিনি, আর বিস্তরিত জানতেও চাইনি। তবে যাত্রীদের একজন জানিয়েছেন, ‘নারী যাত্রীদের ধর্ষণ করা হয়েছে’।

বাসটি যেখানে হেলে পড়ে তার পাশেই বাড়ি রক্তিপাড়ার কালামাঝি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, গভীর রাতে হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পেয়ে জানালা দিয়ে দেখি বড় একটি বাস সড়কের পাশে হেলে পড়ে আছে। কিন্তু বাসের লোকজন ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করায় ভয়ে প্রথমে সেখানে যাইনি।

পরে গিয়ে দেখি গাড়িতে যাত্রীরা আটকা পড়ে আছে। স্থানীয়দের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করি। এর মধ্যেই পুলিশ চলে আসে। যাত্রীরা তখন জানান, ডাকাত দলের সদস্যরা যাত্রীবেশে গাড়িতে উঠেছিল। গাড়িতে উঠেই তারা ডাকাতি শুরু করে। এর পর চলন্ত অবস্থায় গাড়ি থেকে নেমে তারা চলে যায়। গাড়ি যদি আরেকটু পেছনে হেলে যেত, তা হলে খাদের পানিতে পড়ত।

স্থানীয়দের অভিযোগ, টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের এলেঙ্গা থেকে রসুলপুর পর্যন্ত ৬৫ কিলোমিটার সড়কে প্রায়ই বাসে ডাকাতি, চলন্ত বাসে ধর্ষণ এবং যাত্রী খুনের ঘটনা ঘটছে। গত ১০ বছরে এ সড়কে সংঘটিত বেশ কয়েকটি ঘটনা সারা দেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। এ ছাড়া মধুপুর হয়ে জামালপুর ও শেরপুর সড়কেও একই ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়।