তিনি রাজা তবু কাঁদলেন

তিনি রাজা। তবু কাঁদলেন। তার অভিব্যক্তি, তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বলে দিচ্ছিল মনের ভিতর ক্ষরণ হচ্ছে। তিনি বৃটেনের নতুন রাজা তৃতীয় চার্লস। একাই নন। সামনে মায়ের মৃতদেহ, কিছুক্ষণ পর তাকে চিরদিনের জন্য বিদায় জানাতে হবে। চোখের সামনে থেকে হারিয়ে যাবেন জন্মদাত্রী মা। বেদনায় রানীর পাশে দাঁড়িয়ে তার ছেলেরা, মেয়ে, নাতিপুতি, তাদের সন্তানরা অব্যক্ত ভাষায় কাঁদলেন। বার বার ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে ক্যামেরা ফোকাস করছিল তাদের দিকে। কান্না তাদের চোখ থেকে ঝরে পরেনি ঠিকই, কিন্তু তাদের ভিতরে যে গুমড়ে উঠেছে কান্না, তা সামাল দিতে তাদেরকে বেগ পেতে হয়েছে।

প্রিয় মা'র জন্য এভাবেই কাঁদলেন রাজা চার্লস।ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে স্মরণকালের বৃহৎ ও আবেগঘন বিদায় জানানো হয় রানীকে। রাজপরিবারের ২০০০ অতিথি, বিশ্বনেতারা, ভিআইপি, শত শত মানুষের উপাস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হলো রানীর বিদায় অনুষ্ঠান। ধর্মীয় অনুষ্ঠান, রানীর প্রতি শ্রদ্ধা, তার আত্মার শান্তি কামনা, তার অবদানকে স্মরণ করে পালিত হয় ব্যতিক্রমী, সবচেয়ে বড় বিদায় অনুষ্ঠান। দুই মিনিটের জন্য নীরবতা পালন করা হয় পুরো দেশে। 

ওয়েস্টমিনস্টার হল থেকে রানীর কফিন নিয়ে যাওয়া হয় ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে। ঐতিহাসিক এই চার্চেই রানীর বিয়ে হয়েছিল এবং রানী হিসেবে অভিষেক হয়েছিল। তার মাথায় উঠেছিল মুকুট। তিনি তাতে পরিণত হয়েছেন ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় দায়িত্ব পালনকারী রানী। তার কফিনের ওপর রাখা হয় প্রিয় মুকুট, গোলকবিশেষ (অর্ব) এবং রাজদণ্ড। তার পাশেই রানী যেসব ফুল পছন্দ করতেন তা দিয়ে উপরিভাগ সাজানো হয়। সর্বোপরি একটি কার্ড স্থাপন করা হয় ফুলের ভিতর। তাতে লেখা- ‘ইন লাভিং অ্যান্ড ডিভোটেড মেমোরি। চার্লস আর’।  রানীকে সমাহিত করা হবে সেইন্ট জর্জেস চ্যাপেলে। এখানেই তার প্রয়াত স্বামী ডিউক অব এডিনবরা, তার পিতা রাজা ষষ্ঠ জর্জ, রানীমাতা, বোন প্রিন্সেস মার্গারিটাকে সমাহিত করা হয়েছে। তাদের পাশেই সমাহিত হবেন রানী এলিজাবেথ। এ জন্য রানীর কফিন নিয়ে শুরু হয়েছে আরেকটি শোকমিছিল। এই শোক মিছিল আগের থেকে অনেক বড়। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। এতে দায়িত্বে আছে সাতটি গ্রুপ। শোকমিছিলের পিছনে পিছনে গাড়িতে আছেন কুইন কনসোর্ট ক্যামিলা, প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথারিন। আর তাদের সামনে আছেন রাজা তৃতীয় চার্লস, রাজপরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা। দ্বিতীয় একটি গাড়িতে করে যাচ্ছেন ডাচেস অব সাসেক্স মেগান মার্কেল এবং আউন্টেস অব ওয়েসেক্স সোফি। শোক মিছিলের একেবারে সামনে আছে রাজকীয় কানাডিয় মাউন্টেড পুলিশের একটি দল। 

ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে রানীর প্রতি যখন শ্রদ্ধা, তার অবদান, প্রার্থনা জানাচ্ছিলেন ধর্মীয় নেতারা তখন পাশ থেকে বার বার ভাই ও রাজা চার্লসের দিকে নজর রাখছিলেন বোন প্রিন্সেস অ্যান। উদ্বেগ নিয়ে তিনি বার বার তাকাচ্ছিলেন চার্লসের দিকে। এ সময় রাজা চার্লসকে দেখে মনে হয়েছে, তিনি কাঁদছেন। কোনোমতে তখন নিজের কান্না ধরে রাখেন প্রিন্সেস অ্যান। একই অবস্থা প্রিন্স অ্যানড্রুর। পার্লামেন্ট স্কয়ার দিয়ে যখন মায়ের কফিনের পিছনে তিনি হাঁটছিলেন, তখন কান্না ধরে রাখতে যেন যুদ্ধ করেছেন প্রিন্স অ্যানড্রু। রানীর কফিনের পিছনে পিছনে শোকযাত্রায় অংশ নেন প্রিন্স উইলিয়াম, প্রিন্স হ্যারি। ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময় ভীষণভাবে আবেগী হয়ে ওঠেন রাজা। ফলে সবাই যখন জাতীয় সঙ্গীত গাইছিলেন, তখন রাজা চার্লস নীরব থাকেন। তার চারপাশে রাজপরিবারের সদস্যরা তখন সুর মিলাচ্ছিলেন।