দুবাই ভিসায় ইতালি পাঠানোর আশ্বাস, অতঃপর...

রাজধানীতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ভয়ংকর মানবপাচার চক্রের ২ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগ। পরে লিবিয়ায় এই চক্রের হাতে জিম্মি মো. সফিকুল ইসলাম ওরফে শফিউল্লা শেখ নামে এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়েছে।তাকে দেশেও ফিরিয়ে আনা হয়েছে।সফিকুলকে দুবাই ভিসায় ইতালি পাঠানোর আশ্বাসে নিয়ে গিয়েছিল মানবপাচার চক্রটি।

গ্রেফতাররা হলেন- বাদশা (৩১) ও রাজিব মোল্লা (৩৫)। গত সোমবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা থানা এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করে ডিবি মোহাম্মদপুর জোনাল টিম।

মঙ্গলবার সকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান (ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। 

ডিবিপ্রধান বলেন, ভিকটিম মো. সফিকুল ইসলাম ওরফে শফিউল্লা শেখকে বাদশা ইতালি পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে গত ৪ অক্টোবর ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে দুবাই পাঠায়। গ্রেফতারকৃত রাজিবের আত্মীয় সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্রের সদস্য সবুজ দুবাইয়ে অবস্থান করে। সবুজ দুবাই এয়ারপোর্টে সফিকুলসহ আরও ২০ জনকে রিসিভ করে একটি বাসায় নিয়ে যায়।

‘পরে ভিকটিমকে দুবাই থেকে সিরিয়া হয়ে লিবিয়ার মিসরাতা শহরের এলাকার একটি ক্যাম্পে নিয়ে যায়। বাদশা ও রাজিবের বোনজামাই সুলতানের নেতৃত্বে ভিকটিমকে আটক রেখে নির্যাতন করা হয়। ভিকটিমকে নির্যাতন করে মোবাইল ফোনে তার পরিবারকে কান্না শুনিয়ে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে।

ডিবিপ্রধান বলেন, ভিকটিমের পরিবার নিরুপায় হয়ে গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগে শরণাপন্ন হলে যাত্রাবাড়ী থানায় মানবপাচার আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগ তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্রের সদস্য দেশে অবস্থান করা বাদশা ও রাজিব মোল্লাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারদের মাধ্যমে লিবিয়ায় অবস্থান করা সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্রের অন্যতম সদস্য সুলতানের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভিকটিম মো. সফিকুল ইসলামকে লিবিয়া থেকে উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয় গোয়েন্দা টিম।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে হারুন বলেন, আন্তঃদেশীয় সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্রের সদস্য বাদশা ও রাজিব ভিকটিমসহ দেশের বেকার যুবক এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকদের ইতালি ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ায় পাচার করে থাকে। সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্রের বিদেশে অবস্থান করা অন্যান্য সদস্যদের মাধ্যমে ভিকটিমদের অপহরণপূর্বক ক্যাম্পে আটক রেখে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে। নির্যাতন করা ভিকটিমদের পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে থাকে।

ডিবিপ্রধান অবৈধপথে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার প্রলোভনে পড়ে কাউকে টাকা না দেয়ার অনুরোধ করেন।

এ ছাড়া গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় মানবপাচার আইনে মামলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।