‘ইউয়ানে’ অর্থ ফেরতে ঝুঁকি কম

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ঋণের অর্থ পরিশোধে জটিলতা কাটছেই না। এজন্য ঋণের অর্থ চীনা মুদ্রা ‘ইউয়ানে’ ফেরত দিলে ঝুঁকি কম দেখছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। ফলে এই মুদ্রাতেই রাজি হতে পারে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে খুব একটা লস দেখছে না সংস্থাটি। তবে রশিয়ান মুদ্রা ‘রুবলে’ ফেরত দিলে সমস্যা হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে। এর আগে রাশিয়া থেকে পাঠানো প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থায় এমন মতামত দেয় ইআরডি। সেখানে লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফারড রেট (লাইবর) উঠে গিয়ে সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (সোফার) এ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একটি কমিটি গঠনের সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। খবর সংশিষ্টএ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইআরডি’র সচিব শরিফা খান রোববার বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য রাশিয়ার অর্থ ফেরতের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ইউয়ানে অর্থ ফেরতে ইআরডি’র সুপারিশ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি তেমন কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তিনি বলেন ইউয়ানে ফেরত দিতে গেলেও তো অনেক ইউয়ান দরকার। সেটি কোথায় পাওয়া যাবে। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটুকু বলতে পারি জটিলতা এখনো আছে। সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।

রূপপুর প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা বাবদ ৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছিল রাশিয়া। এই ঋণ সুদা-আসলসহ আট কিস্তি পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ। ঋণের ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ বা ১০ কোটি ডলার এখনো বকেয়া। ইউক্রেনে হামলার পর রাশিয়ার বিভিন্ন ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। এই জটিলতায় রাশিয়াকে ১০ কোটি ডলার ফেরত দিতে পারছে না বাংলাদেশ। এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশকে চিঠি দিয়ে বিকল্প মুদ্রায় পরিশোধের কথা বলে রাশিয়া। ইআরডি’র ইউরোপ উইং সূত্র জানায়, সম্প্রতি ইআরডির ফাবা উইং থেকে একটি মতামত পত্র পাঠানো হয় ইউরোপ উইংয়ের অতিরিক্ত সচিবের কাছে। সেখানে বলা হয়েছে, রাশিয়া এবং এর ব্যাংকগুলোর ওপর বিভিন্ন দেশের নিষেধাজ্ঞা এবং সুইফট থেকে রাশিয়ার ব্যাংকগুলোকে বের করে দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার প্রস্তাব অনুযায়ী রুবলে (রাশিয়ান মুদ্রা) ঋণ পরিশোধ করতে হলে অন্য দেশের এবং যেসব মুদ্রা এসডিআই বাস্কেটভুক্ত তার মাধ্যমে পাঠানোর সুযোগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে চীনের মুদ্রা ইউয়ান এসডিআই বাস্কেটভুক্ত আছে। পাশাপাশি চীনে অবস্থিত ব্যাংকে উইয়ানে বাংলাদেশের অ্যাকাউন্ট থাকায় চীন যদি নিষেধাজ্ঞা মুক্ত হয় তাহলে উইয়ানে ঋণ পরিশোধের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে পরিশোধটি চীনের কোনো ব্যাংকে রাশিয়ার অ্যাকাউন্টে পরিশোধ করতে হবে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ইউয়ানে ঋণ পরিশোধ করতে পারে। এক্ষেত্রে যেদিন ঋণ পরিশোধ করতে হবে সেদিনের ইউএস ডলার ও ইউয়ান বিনিময়ের ব্যবহার করে রাশিয়ার প্রাপ্ত ইউএস ডলারকে ইউয়ানে রূপান্তর করে ঋণ পরিশোধ করা যেতে পারে।

ওই মতামত পত্রে আরও বলা হয়, রাশিয়ার প্রস্তাব অনুযায়ী একাধিক মুদ্রা পরিবর্তনের ফলে ঋণের খরচ ও ঝুঁকি বেড়ে যাবে। কেননা প্রথমে বাংলাদেশ থেকে পাঠানো মার্কিন ডলার চায়নার মুদ্রা ইউয়ানে পরিবর্তন করে রাশিয়ার অ্যাকাউন্টে পরিশোধ করতে হবে। পরে চায়না ইউয়ানকে রাশিয়ার রুবলে পরিবর্তন করে রাশিয়ায় পাঠাবে। এজন্য এখানে একাধিক মুদ্রা পরিবর্তনের বিষয় জড়িত। তবে ঋণের অর্থ চীনে থাকা রাশিয়ার একাউন্টে ট্রান্সফার করলে পরে কোনো মুদ্রায় কখন রাশিয়া তা তাদের দেশে স্থানান্তর করবে তার দায়িত্ব রাশিয়ার। সুতরাং ঋণের অর্থ পরিশোধ বিষয়ে রাশিয়ার প্রস্তাবের আংশিক অর্থাৎ চীনে থাকা রাশিয়ার অ্যাকাউন্টে পরিশোধ পর্যন্ত বিবেচনা করা যেতে পারে। ইআরডির ওই মতামত পত্রে আরও বলা হয়েছে-২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে লাইবর থাকবে না। এর পরিবর্তে সোফার প্রযোজ্য হবে। বর্তমান যেসব ঋণ লাইবর ভিত্তিক ফ্লটিং সুদের হারে গ্রহণ করা হয়েছে সেগুলো ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে সোফার ভিত্তক সুদ হবে। বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই স্বাক্ষরিত ঋণ চুক্তিটি লাইবর ভিত্তিক। ফলে এটি সোফার ভিত্তিক রূপান্তর করতে হবে। এটি করা না হলে লাইবর না থাকায় ঋণের সুদ নির্ণয় করা যাবে না। এছাড়া এই ঋণের সুদের হারের একটি সর্বোচ্চ সীমা বা ক্যাপ রয়েছে। লাইবর ও সোফার রেট এর তারতম্য হওয়ায় ঋণের সুদেও সর্বোচ্চ সীমা পুনঃনির্ধারণ করতে হবে। এটি বাস্তবায়নে উচ্চপর্যায়ে সিদ্ধান্ত ও অনুমোদন প্রয়োজন। এসব বিষয় আলোচনার জন্য রাশিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে। পরে ওই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। ইআরডির ইউরোপ উইংয়ের এক কর্মকতা মতামতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কমিটি গঠন বিষয়ে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা জানান, সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার ক্ষেত্রে ইআরডি’র সচিব ম্যাডামের নিষেধ আছে।

সূত্র জানায়, ঋণের অর্থ রুবল বা ইউয়ানে ফেরত চায় রাশিয়া। কিন্তু এ বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে বাংলাদেশ। এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা বাবদ ৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছিল দেশটি। এই ঋণ সুদাসলসহ আট কিস্তি পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ। ঋণের ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ বা ১০ কোটি ডলার এখনো বকেয়া। ইউক্রেনে হামলার পর রাশিয়ার বিভিন্ন ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। এ জটিলতায় রাশিয়াকে ১০ কোটি ডলার ফেরত দিতে পারছে না বাংলাদেশ। এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশকে চিঠি দিয়ে বিকল্প মুদ্রায় পরিশোধের কথা বলে রাশিয়া।