রমজানে মুসলিম বিশ্বের উল্টো চিত্র বাংলাদেশের বাজারে

পবিত্র মাস রমজানে বাংলাদেশের নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে। বছরের এই সময়েই ব্যবসায়ীরা মুনাফা তুলবেন অস্বাভাবিক হারে। এমনটাই যেন বাংলাদেশে স্বাভাবিক ঘটনা। অথচ বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশ এমনকি হিন্দু ও খ্রিস্টান প্রধান দেশগুলোও ধর্মীয় উৎসবে পণ্যের দামে বিশাল ছাড় দিয়ে থাকে। বিশ্লেষকদের মতে, দেশের বেশির ভাগ ব্যবসায়ীদের কাছে ধর্মীয় সম্প্রীতি নয়, প্রাধান্য পায় মুনাফা।

মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর ব্যবসায়ীরা অধীর অপেক্ষায় থাকে রমজান মাসের। কারণ, এই সময়েই নিত্যপণ্য বেশি বিক্রি হয়। শুধু তাই নয়, রোজাদাররা যেন কম দামে পণ্য কিনতে পারে—সেজন্যে দামে দিয়ে থাকে বিশাল ছাড়। উদ্দেশ্য থাকে রোজাদারদের মুখে হাসি ফোটানো এবং মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।  কেবল ব্যবসায়ীরাই নয়, রমজানের প্রতীক্ষায় থাকে এসব দেশের ভোক্তারাও। কারণ, এই সময়ে সবচেয়ে সাশ্রয়ী দামে প্রয়োজনীয় পণ্যটি কিনতে পারে তারা। অথচ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র বাংলাদেশের চিত্র একেবারেই উল্টো। এ দেশের মুসলিমদের কাছে রমজান যেন পণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির মাস।

ভোক্তারা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের দাম এত বৃদ্ধি পায়, তাদের পক্ষে কেনাকাটা করা কঠিন হয়ে পড়ে। সব মুসলিম দেশে রোজার মাসে দাম কমে, বাংলাদেশে রোজার মাস এলে দাম বাড়ায়। নেক আমল করার মাস, অথচ ব্যবসায়ীরা জনগণের পেটে লাথি দিয়ে নিজেদের আখের গোছাবে।

বিশ্লেষকদের মতে, দেশের এক শ্রেণির ব্যবসায়ীদের কাছে সেবা নয়, মুনাফাটাই মুখ্য। বিআইআইএসএসের গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবির বলেন, ব্যবসায়ীরা সারা বছরের মুনাফার বেশির ভাগ অংশই রমজানে করে থাকেন। এটাই তাদের লক্ষ্য থাকে। এভাবে তাদের অস্বাভাবিক মাত্রায় মুনাফা হয়।

ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, এই ধরনের মূল্যস্ফীতি থেকে বিরত থাকতে আমরা ব্যবসায়ীদেরকে অনুরোধ করব।

এ ধরনের অতি মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের প্রতি পরকালে কঠিন শাস্তির বার্তা শোনালেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস ড. মুফতি ওয়ালিউর রহমান খান। তিনি বলেন, আমরা যখন দুর্ভিক্ষের ভয় করছি, সেই সময়ে যদি মানুষের মানবতা বোধ জেগে না ওঠে, রোজার সুযোগ নিয়ে যদি তারা মূল্যবৃদ্ধি ঘটায়; এর শাস্তি অগণিত।

অসাধু ব্যবসায়ীদের তিরস্কার করলেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, সৌদি আরবে দাম কমায়, মধ্যপ্রাচ্যে কমায়, এমনকি ইহুদি-খ্রিষ্টানরা কমায়। অন্তত এ বছর থেকে আসেন আমরা দাম কমাই।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের হুঁশিয়ারি—কেউ কারসাজি করে দামবৃদ্ধির চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, যারা পণ্য মজুদ বা কারচুপি করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থানে যাব।