মোবাইলের ব্যবহার কমিয়ে জীবন ফিরে পাওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্বের প্রথম ওয়্যারলেস ফোন আবিষ্কারক মার্কিন প্রকৌশলী মার্টিন কুপার। লোকজন সারা দিন ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে, এমন হবে বলে ভাবেননি বলেও জানান তমার্টিন কুপারের মতে, পকেটের ভেতরে থাকা ছোট্ট যন্ত্রটা অনেক সমস্যা সমাধান করে দিতে পারে ঠিকই, কিন্তু মানুষ একটু বেশি মাত্রায় মোহগ্রস্ত হয়ে পড়েছে!
সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ার ডেল মারেতে নিজের দপ্তরে বসে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
৯৪ বছর বয়সি কুপার বলেন, মন ভেঙে যায়, যখন দেখি কেউ মোবাইল দেখতে দেখতে রাস্তা পার হচ্ছেন। কিছু মানুষ মারা না গেলে কারও বোধ আসবে না।
কুপারের নিজের হাতেও অ্যাপলের ঘড়ি। ব্যবহার করেন আইফোনের সর্বশেষ সংস্করণটি। এ বিষয়ে বেশ শৌখিন কুপার। জানালেন, নতুন সংস্করণ এলেই তিনি মোবাইল বদলান। তবে একই সঙ্গে তিনি স্বীকার করেছেন, ফোনে হাজার হাজার অ্যাপ রয়েছে, যার বেশিরভাগের ব্যবহার তিনি জানেন না।
কুপারের কথায়, ‘আমার নাতি-নাতনিরা বা তাদের ছেলেমেয়েরা যেভাবে মোবাইল ব্যবহার করে, আমি কোনো দিন পারব না।’
নিজের আবিষ্কার সম্পর্কে তার মন্তব্য, ‘আজ যে মোবাইলের জাদুতে মজে রয়েছে মানুষ, তা-ও একসময় থাকবে না। প্রতিটি প্রজন্ম আরও বুদ্ধি ধরবে, প্রযুক্তি আরও অনেক উন্নত হবে।’
১৯৭৩ সালে প্রথম ওয়্যারলেস সেলুলার ডিভাইস মটোরোলা ডায়নাট্যাক এইট থাউজেন্ড এক্স (Motorola DynaTAC 8000X) তৈরি করেছিলেন কুপার। সেই ফোন ছিল বেশ ভারি, অনেক তারে পেঁচানো এক জটিল বস্তু।
সেই সময়ে তিনি একটি মোবাইল প্রস্তুতকারক সংস্থায় কাজ করতেন। লাখ লাখ ডলারের প্রকল্প হাতে নিয়েছিল ওই সংস্থা। বাজারে প্রতিযোগিতাও দারুণ। রীতিমতো টক্কর চলছে— কে প্রথম মোবাইল ফোন আনবে। কারণ মোবাইল ফোন তৈরির পরিকল্পনা মানুষের মাথায় এসেছিল অনেক দিন আগেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষের পর পরই প্রথম বিষয়টি নিয়ে ভাবা শুরু হয়েছিল।
১৯৭২ সালের শেষে কুপার ঠিক করেন, তিনি এমন একটা যন্ত্র তৈরি করবেন, যা কোনো ব্যক্তি সবসময় নিজের সঙ্গে রাখতে পারবেন। যে কোনো জায়গায় ব্যবহার করতে পারবেন। টানা তিন মাস দিনরাত এক করে গবেষণা করেন কুপার ও তার বিশেষজ্ঞ দল।
পরের বছর মার্চ মাসের শেষে সমাধান মেলে। কুপারের তৈরি করা প্রথম মোবাইল ফোনটির ওজন ছিল এক কিলোগ্রামেরও বেশি। সর্বোচ্চ ২৫ মিনিট কথা বলা যেত। সেই ২৫ মিনিট হাতে নিয়েই কুপার প্রথম ফোনটি করেছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বী ফোন প্রস্তুতকারক সংস্থার অফিসে।
মন্তব্য