রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে লাগামছাড়া ‘যুদ্ধব্যয়ে’ নেমেছে গোটা বিশ্ব। ২০২২ সালে মাত্র এক বছরে বিশ্বের প্রতিরক্ষা খাতের খরচ দাঁড়িয়েছে ২.২৪ ট্রিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় দুই কোটি ৩৭ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। যা সামরিক খাতে বিশ্বের সর্বকালের সর্বোচ্চ ব্যয়ের রেকর্ড সৃষ্টি টানা আট বছর ধরে বেড়েই চলেছে এই খরচ। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্স ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই বা সিপ্রি) প্রকাশিত বার্ষিক সামরিক খরচ বিষয়ক রিপোর্টে সোমবার এ তথ্য দেওয়া হয়েছে।
২০২২ সালে এই খরচ বাড়ার নেপথ্যে ইউক্রেনে রাশিয়ান আগ্রাসন অন্যতম ভূমিকা পালন করেছে। এতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের তুলনায় ইউরোপে এই খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ১৩ ভাগ। কমপক্ষে ৩০ বছরের মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ গতিতে খরচ বৃদ্ধি সেখানে। সিপ্রি বলেছে, বেশির ভাগ খরচ ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের সঙ্গে সম্পর্কিত। আলজাজিরা।
তবে রাশিয়ার হুমকি মোকাবিলায় সামরিক খরচ বৃদ্ধি করেছে অন্য দেশগুলোও। এসআইপিআরআই’র মিলিটারি এক্সপেন্ডিউচার অ্যান্ড আর্মস প্রোডাকশন প্রোগ্রামের সিনিয়র গবেষক নান তিয়ান বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈশ্বিক সামরিক খাতে অব্যাহতভাবে খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, আমরা ক্রমেই অনিরাপদ একটি বিশ্বে বসবাস করছি। অবনতিশীল নিরাপত্তা পরিবেশে বিভিন্ন দেশ তার সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে। নিকট ভবিষ্যতে এর উন্নতি ঘটবে না।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দ্বীপে আগ্রাসন চালিয়ে তা দখল করে নেয় রাশিয়া। এতে সমর্থন দেয় তখন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীরা। সেই ঘটনার জের ধরে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পূর্ণমাত্রায় ইউক্রেন আক্রমণ করে রাশিয়া।
এর ফলে রাশিয়ার প্রতিবেশী অথবা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল এমন দেশগুলোতে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ফিনল্যান্ড তার সামরিক ব্যয় বাড়িয়ে দেয় শতকরা ৩৬ ভাগ। লিথুনিয়া বাড়ায় শতকরা ২৭ ভাগ। রাশিয়ার সঙ্গে ফিনল্যান্ডের আছে প্রায় ১৩৪০ কিলোমিটার সীমান্ত। এই দেশটি এই এপ্রিলেই ন্যাটোর ৩১তম সদস্য হয়েছে। অন্যদিকে সামরিক জোট কমপক্ষে ২০০ বছর এড়িয়ে আসছে সুইডেন। তারাও এখন ন্যাটো জোটে যুক্ত হতে চাইছে।
এসআইপিআরআই-এর গবেষক লরেঞ্জো স্কারাজাতো বলেছেন, ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় সামরিক আগ্রাসন চালানোর ফলে অবশ্যই ২০২২ সালে সামরিক খরচের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হয়েছে। রাশিয়ার এই আগ্রাসন দীর্ঘমেয়াদি হবে তা বোঝা গেছে। ২০১৪ সাল থেকে পূর্বাঞ্চলীয় ব্লকের রাষ্ট্রগুলো তাদের সামরিক ব্যয় কমপক্ষে দ্বিগুণ বৃদ্ধি করেছে।
থিংকট্যাংকটি বলেছে, ইউক্রেনে সামরিক খরচ ২০২২ সালে লাফিয়ে কমপক্ষে ৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪০০ কোটি ডলার। এসআইপিআরআই এ পর্যন্ত যত সামরিক ব্যয়ের রেকর্ড রেখেছে, তার মধ্যে একটিমাত্র দেশের এই ব্যয় একটি বছরে সর্বোচ্চ। জাতীয় প্রবৃদ্ধির শতকরা হিসাবে সামরিক খাতে খরচ ২০২২ সালে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে শতকরা ৩৪ ভাগ। আগের বছরে এই খরচ ছিল শতকরা ৩.২ ভাগ। ওদিকে ২০২২ সালে রাশিয়ার সামরিক ব্যয় শতকরা ৯.২ ভাগ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৬৪০ কোটি ডলার।
যা ২০২২ সালের জিডিপির শতকরা ৪.১ ভাগের সমতুল্য। ২০২১ সালে এই পরিমাণ ছিল শতকরা ৩.৭ ভাগ। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সামরিক ব্যয়ের শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে ২০২২ সালে সামরিক ব্যয় শতকরা ০.৭ ভাগ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৮৭৭০০ কোটি ডলার। বিশ্বের মোট সামরিক খরচের শতকরা ৩৯ ভাগ এই পরিমাণ। যুক্তরাষ্ট্র ২০২২ সালে ইউক্রেনকে সামরিক খাতে মোট ১৯৯০ কোটি ডলার সহায়তা করেছে। অন্যদিকে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ সামরিক ব্যয়ের দেশ হলো চীন। ২০২২ সালে তাদের এ খাতে ব্যয় ছিল প্রায় ২৯২০০ কোটি ডলার। ২০২১ সালের তুলনায় এই পরিমাণ শতকরা ৪.২ ভাগ বেশি। এটা টানা ২৮ বছরের ব্যয়বৃদ্ধির ঘটনা। ওদিকে জাপানের ২০২২ সালে সামরিক খরচ ছিল ৪৬০০ কোটি ডলার।
এসআইপিআরআই বলেছে, আগের বছরের তুলনায় এই খরচ শতকরা ৫.৯ ভাগ বেশি। ১৯৬০ সালের পর এটাই সেখানে সবচেয়ে বেশি সামরিক ব্যয়।
মন্তব্য