ভয়ংকর ‘জীবাণু বোমা’র হুমকির মুখে সুদান

যুদ্ধকবলিত সুদানে মারা ত্মক ‘জীবাণু বিপর্যয়ের’ আশঙ্কা দেখা দিয়েছবিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) সতর্ক করে বলেছে, দেশটির ন্যাশনাল পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরি প্রতিপক্ষ আধা-সামরিক বাহিনী আরএসএফের দখলে যাওয়ায় ‘জীবাণু বোমা’ হামলার মতো মহাবিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এদিকে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরপন্থিদের মুক্ত করতে আরএসএফ একটি কারাগারে হামলা চালিয়ে ৩০ রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি করেছে। খবর বিবিসি, আল জাজিরা, রয়টার্স ও সিএনএনের।

মঙ্গলবার সুদানের রাজধানী খার্তুমের ন্যাশনাল পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরি দখলে নিয়েছে আধা-সামরিক বাহিনী র?্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)। বুধবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, ল্যাবরেটরিতে বিভিন্ন রোগ ও জীবাণুর নমুনা রয়েছে। সেখানে প্রতিপক্ষ সেনাবাহিনী হামলা চালালে এসব জীবাণু ছড়িয়ে পড়বে। এটি তখন ‘জীবাণু বোমা’ হিসাবে কাজ করবে। সুদানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি নিমা সাঈদ বলেন, ল্যাবরেটরিটি সামরিক বাহিনীর দখলে যাওয়ায় তারা মহাবিপদের আশংকা করছেন। কারণ সেখানে পোলিও, হাম ও কলেরার জীবাণু সংরক্ষণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হলে ও প্রশিক্ষিত কর্মীরা সেখানে প্রবেশ করতে না পারলে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ারও আশঙ্কা রয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ বজায় রাখতে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। জরুরিভিত্তিতে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল না রাখলে মহাবিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

এদিকে, লড়াইয়ের মধ্যে খার্তুমের কোবের কারাগারে হামলা চালিয়ে আরএসএফ ৩০ বন্দিকে মুক্ত করেছে। কারাগারটিতে সুদানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির সাজা ভোগ করছিলেন। সেখানে তার অনেক নেতাকর্মী ও সমর্থক বন্দি ছিলেন। তবে বুধবার এক বিবৃতিতে সুদানের সেনাবাহিনী বলেছে, খার্তুমের কোবের কারাগারের চিকিৎসা কর্মীদের সুপারিশের ভিত্তিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরসহ ৩০ বন্দিকে আলিয়া হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। পুলিশ হেফাজতে তারা রয়েছেন।

গণবিক্ষোভের মুখে ও সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত হন বশির। পরে দুর্নীতির দায়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সম্প্রতি খার্তুমের কারাগার ভেঙে পালিয়ে যাওয়া বন্দিদের মাঝে বশিরের সাবেক সরকারের জ্যেষ্ঠ চার কর্মকর্তা রয়েছেন। কারাগার থেকে পালিয়েছেন রাজনীতিবিদ আহমদ হারুন। মঙ্গলবার বশিরের সাবেক সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হারুন এক বিবৃতিতে বলেন, দুই বাহিনীর বর্তমান ‘ক্ষমতার দ্ব›েদ্ব’ সুদানের জনগণের পাশে আছেন। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পক্ষ এই সংঘাতে সমর্থন দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। তবে বিচার শুরু হলে তিনি আদালতে হাজির হতে প্রস্তুত আছেন।

সুদানের সাবেক স্বৈরশাসক বশির ও তার সাবেক সরকারের কয়েক কর্মকর্তাকে খার্তুমের উত্তরের বাহরি শহরের কোবের কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছিল। দেশটির দুই সামরিক বাহিনীর লড়াইয়ের মধ্যে কারাগারটি আক্রান্ত হয়েছে। এ কারণে কারাগার থেকে রাজনৈতিক বন্দিসহ হাজার হাজার বন্দি পালিয়েছে। এ ছাড়া সংঘাত শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন কারাগার থেকে ২৫ হাজার দোষী সাব্যস্ত অপরাধী মুক্তি পেয়েছেন। এর ফলে খার্তুমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। খার্তুমের বাসিন্দারা ইতোমধ্যে শহরজুড়ে ব্যাপক লুটপাট ও সংঘবদ্ধ বিভিন্ন গ্যাংয়ের সদস্যরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

সুদানে ১৫ এপ্রিল থেকে সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বে সুদানের সামরিক বাহিনী ও জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো ওরফে হেমেদতির নেতৃত্বে আধা সামরিক বাহিনী র?্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে লড়াই চলছে। তিন দিনের অস্ত্রবিরতি সত্তে¡ও রাজধানী খার্তুম ও পাশের শহরে বিক্ষিপ্ত গোলাবর্ষণ ও গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে। সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনীর মধ্যে চলা লড়াই বুধবার ১২তম দিনে গড়িয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় লাশ পড়ে থাকার খবর পাওয়া গেছে। দুই সামরিক বাহিনীর লড়াইয়ে খার্তুম ভ‚তুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছে। বিদ্যুৎ ও পানির অভাবে মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। অস্ত্রবিরতির ফলে লড়াই কিছুটা স্তিমিত হয়ে আসার সুযোগে বিভিন্ন দেশ নিজেদের ক‚টনীতিক ও নাগরিকদের সরিয়ে নিচ্ছে। গত কয়েক দিনে বিদেশিদের পাশাপাশি কয়েক হাজার সুদানি নাগরিকও মিসর, দক্ষিণ সুদান ও শাদে আশ্রয় নিয়েছে।

সুদানে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ভলকার পার্থেস জানান, দেখে মনে হচ্ছে দেশের কিছু অংশে ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে খার্তুম ও পাশের ওমদুরমানে গুলি ও বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। সংঘাতের কারণে সুদান থেকে বিশেষ করে খার্তুম থেকে নিজ নিজ নাগরিকদের সরিয়ে নিতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে বিভিন্ন দেশ। লড়াইয়ে দেশটিতে একটি মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অনেক স্থানে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে।