যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনি হাওয়ায় এবার ব্যতিক্রমী সুবাস। লড়াই প্রেসিডেন্টের, আলোচনায় ভাইস প্রেসিডেন্ট। সবচেয়ে বয়স্ক একজন প্রেসিডেন্টের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রার্থী হওয়ার মতোই আরেক নতুন ইতিহাস যুক্তরাষ্ট্রে। খানিকটা রসিকতার ছলে বললে, হোয়াইট হাউজের দ্বিতীয় মেয়াদের দরজায় এসে রীতিমতো ‘চন্দ্র দশায়’ পড়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ধার করা আলোয় যেমন রাতভর চকচক করে চাঁদ, তেমনি ‘রানিং মেট’ ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের হাসিমাখা ব্যক্তিত্ব, জনপ্রিয়তার আলোয় জ্বলজপ্রথম মেয়াদে কতটা সফল সে হিসাব-নিকাশের চেয়েও বড় বাধা হয়ে দেখা দিয়েছে বাইডেনের বয়স। ভোটার বা রজনীতিকরাই শুধু নন-বাইডেনের প্রচারণা টিমও আশা করছে কমলা হ্যারিসের উপস্থিতিতে উচ্ছল হয়ে উঠবে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রচারণা। গতি ফিরে পাবে ডেমোক্র্যাটদের প্রচারশিবির।
পুনর্নির্বাচনে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে প্রকাশিত বাইডেনের ভিডিও ফুটেজেও সে দৃশ্য দেখেছে গোটা যুক্তরাষ্ট্র। ভিডিওতে হ্যারিসকেই দেখানো হয়েছে বারবার। ডেমোক্র্যাট শিবিরের আশা, বার্ধক্যজনিত কারণে ক্ষমতার মাঝপথেই যদি অক্ষম হয়ে পড়েন বাইডেন কিংবা বাইডেনের ‘কিছু একটা’ যদি হয়েই যায় তখন সরকারের হাল ধরবেন ৫৮ বছর বয়সি কমলা হ্যারিস। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন।
মঙ্গলবার পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনি দৌড়ে সওয়ার হওয়ার ঘোষণা দেন ৮০ বছর বয়সি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আর তার প্রচারণায় আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমে পড়েছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। সোজা কথায় বললে, বাইডেনকে ‘কাঠের পুতুলের মতো’ সামনে রেখে পেছন থেকে প্রচারণার মধ্যমণি হয়ে কাজ করছেন কমলা। জনগণও তাকেই চাইছেন।
২৩ মার্চ প্রকাশিত এনবিসি নিউজের এক জরিপে উঠে এসেছে, ৭০ শতাংশ মার্কিনিই দ্বিতীয়বার আর বাইডেনকে চান না। ৫১ শতাংশ ডেমোক্র্যাট মনে করেন, বাইডেনের নির্বাচন করা ঠিক হবে না। কারণ তার বয়স! বাইডেনের প্রার্থিতা ঘোষণার দিনই বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের বিমানীতিতে বয়স ও প্রত্যাশিত আয়ুবিষয়ক যে চার্ট যুক্তরাষ্ট্র অনুসরণ করে, তাতে ৮২ বছর বয়স্ক একজন মানুষ বড়জোর আর ৬.৭৭ বছর বাঁচার আশা করতে পারেন। পরবর্তী ১২ মাসের মধ্যে তার মৃত্যুর আশঙ্কা ৮ বাইডেন। সে হিসাবে বাইডেন দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হলে তার বয়স হবে ৮২। ২০২৯ সালের জানুয়ারিতে মেয়াদ শেষের সময় ৮৬। দূরের ভবিষ্যতের এসব সাত-পাঁচ ভেবেই প্রেসিডেন্টের নির্বাচনি প্রচারে হ্যারিসকে পাদপ্রদীপের আলোয় রাখছেন ডেমোক্র্যাটের নীতিনীর্ধারকরা। বেশি বয়সে ক্ষুব্ধ ভোটারদের সান্ত্বনা দেওয়ার একটি নীরব কৌশল হতে পারে-বাইডেন নয়, ডেমোক্র্যাটের আসল প্রার্থী কমলা হ্যারিস! ১৯ বছর বয়সি এক শিক্ষার্থী নাউদিয়া থারম্যান হ্যারিস সম্পর্কে বলেন, আমি তাকে দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি! আমি আশা করি ২০২৪ সালের নির্বাচনি প্রচারে গর্ভপাত একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক হাতিয়ার হবে।
গত মঙ্গলবার বাইডেন তার পুনর্নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার দিনেই হ্যারিস তাদের নির্বাচনি প্রচারণার মূল বিষয় হিসাবে গর্ভপাতের বিষয়টিকে তুলে ধরেন। ওয়াশিংটনের হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটিতে বক্তৃতায় কমলা হ্যারিস বলেন, আমি এখানে দাঁড়িয়েছি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে পুনরায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য। এটি আবারও করতে পেরে আমি গর্বিত। সফলভাবে কাজটি শেষ করার জন্য আপনাদের সমর্থন আমাদের প্রয়োজন। এ ছাড়াও হ্যারিস বাইডেনের নির্বাচনি প্রচারণায় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবিত্ত নাগরিকদের কাছে তাদের অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেছেন। নির্বাচনে জয়ী হলে তাদের অন্যতম কাজ হবে দেশে মুদ্রাস্ফীতি কমানো। ধনী-মধ্যবিত্তের অর্থনৈতিক বৈষম্য কমিয়ে আনা।
মন্তব্য