জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ টানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে। সব সাংগঠনিক জেলায় ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ ও সমাবেশের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ কর্মসূচি রাজধানী থেকে শুরু হবে। চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন দলটি আগামীকাল দুই মাসব্যাপী এ কর্মসূচির ঘোষণা দদ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোট নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে শিগগিরই কর্মসূচি দেওয়ার কথা রয়েছে তাদের। এমন প্রেক্ষাপটে ইসলামী আন্দোলনও রাজপথে নিজেদের শক্তি জানান দিতে চাইছে।
সূত্র জানায়, আগামীকাল পুরানা পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সভা শেষে দলটির আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। সভায় কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ, ঢাকা মহানগর ও আশপাশের জেলা এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের ডাকা হয়েছে। সেখানে সবার মতামতের ভিত্তিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি চূড়ান্ত করে ঘোষণা দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না-ইতোমধ্যে তা প্রমাণ হয়েছে। সর্বশেষ সিটি করপোরেশন নির্বাচন এর বড় প্রমাণ। এজন্য তাদের দাবি-জাতীয় সরকার ও নতুন ইসি গঠনের। এ দুটি দাবিতে লাগাতার কর্মসূচি দেওয়া হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসলামী আন্দোলনের এক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, ৮৭টি সাংগঠনিক জেলায় ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ ও সমাবেশের পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি থানা পর্যায়েও কর্মসূচি করা যায় কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছে। আগামী ১৫ জুলাই রাজধানী থেকে এ কর্মসূচি শুরু হতে পারে। ২৪ জুন রাজধানীতে এক মতবিনিময় সভায় জাতীয় সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করেন ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম। রূপরেখায় আপিল বিভাগের একজন বিজ্ঞ, সৎ, যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য বিচারপতিকে প্রধান করে নিবন্ধিত দলগুলোর প্রতিনিধি নিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব করা হয়। এ ছাড়া জাতীয় সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে জাতীয় সরকার গঠন, জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংসদ ভেঙে দেওয়া, পাশাপাশি নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের কাছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতা হস্তান্তরসহ আট দফা প্রস্তাব করা হয়। তবে এ প্রস্তাবের সঙ্গে একমত নন-আন্দোলনে থাকা বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোটগুলো।
এ প্রসঙ্গে ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, জাতীয় সরকার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার কাছাকাছি। বিএনপির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২৪ জুনের মতবিনিময় সভায় বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ছিলেন। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে আমরা সবাই একমত হয়েছি।
এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘এখন যার যার মতো করে, যার যার চিন্তাভাবনা থেকে বিভিন্ন তথ্য আসতে পারে। তবে সব রাজনৈতিক দল একমত-বর্তমান সরকারের আর কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ দেশের ধ্বংস বা সর্বনাশ যা করার তা করে ফেলেছে। সুতরাং এ সরকারের চলে যাওয়া দরকার। বর্তমান সরকারের চলে যাওয়ার পর কি হবে-তা আলাপ-আলোচনা করে ঠিক করা যায়। এটি করতে বেশি সময় লাগে না। সেখানে সংবিধানও কোনো বাধা না। এ উপলব্ধি থেকে মনে করি-যারাই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে থাকবে, তারা জাতীয় সরকার আগে চান কিংবা পরে চান সে বিষয়ের চেয়েও মুখ্য হচ্ছে, এ সরকারের বিদায়। সুতরাং বিদায়ের ক্ষেত্রে যারা থাকবেন সবাইকে আমাদের স্বাগতম।’
মন্তব্য