জান্নাতি যুবকদের সরদার ইমাম হোসাইন

ইমাম হোসাইন (রা.) ছিলেন সম্মান, দয়া, বীরত্ব, শাহাদত, মুক্তি ও মহানুভবতার আদর্শ। তার আদর্শ মানবজাতির জন্য এমন এক ঝর্ণাধারা, যা বিশ্বাসী মানুষের জীবনে সাহস ও শক্তি সঞ্চার করে। মানুষের জীবনের প্রকৃত মর্যাদা ও মৃত্যুর প্রকৃত সংজ্ঞাকে কেবল কথায় নয়, বাস্তবতার মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়ে অমরত্ব দান করে গেছেন ইমাম হোসাইন (রা.)। বিশেষ করে আল্লাহর পথে সর্বোচ্চ ত্যাগ ও শাহাদতকে তিনি দিয়ে গেছেন অসীম সৌন্দর্য। মুমিনদের চোখে তিনি এমন এক কিংবদন্তিতুল্য বীর, যিনি দ্বিন ও আদর্শের জন্য আপন জীবনকে কুরবানি করে দিয়েছেন। তিনি সেই বহুল প্রচলিত প্রবাদবাক্যেরই জীবন্ত প্রতিচ্ছবি, যাতে বলা হয়েছে ‘যদি মৃত্যুকে আলিঙ্গন কর, তবেই জীবনকে ফিরেশহিদকুল শিরোমণি ইমাম হোসাইন (রা.) হিজরি চতুর্থ সনের তৃতীয় শাবান হজরত আলী (রা.) ও হজরত ফাতিমা (রা.)-এর ঘর আলোকিত করে এই ভূপৃষ্ঠে আগমণ করেন। তার জšে§র সুখবরে রাসূল (সা.) খুবই আনন্দিত হয়েছিলেন। তিনি তাঁর তাহনিক করেছিলেন ও তাঁর কানে আজান দিয়েছিলেন। (তিরমিজি)। রাসূলই (সা.) তাঁর নাম হোসাইন রেখেছিলেন। হজরত হোসাইন (রা.)-এর চেহারা ছিল অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও সুন্দর। রাসূল (সা.)-এর চেহারা মোবারকের সঙ্গে তার চেহারার মিল ছ

হজরত ইমাম হাসান (রা.) ও হোসাইন (রা.) এই সহোদরের নাম এমন ওতপ্রোতভাবে জড়িত যে, অনেকেই ভুলক্রমে তাদের যমজ ভাই মনে করে থাকে। অবশ্য তাদের মাঝে ভালোবাসা, বন্ধুত্ব ও সম্প্রীতি এতই গভীর ছিল, যা অনেক যমজ দুভাইয়ের মাঝেও দেখা যায় না। তাদের বয়সের ব্যবধান দুই বছরেরও কম। হজরত হোসাইন (রা.) যখন বুকের দুধ পান করছেন, তখন হজরত হাসান (রা.)-এর ভালো করে মুখের বুলিও ফোটেনি। তারা দুজন ছিলেন একাত্ম। একসঙ্গে খেতেন দুজনে, একসঙ্গে খেলতেন। দুজনের স্মৃতিও এক। হজরত ওসামা বিন যায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, এরা দুজন (হাসান ও হোসাইন) আমার বংশধর এবং আমার কন্যার সন্তান। হে আল্লাহ! আমি তাদেরকে ভালোবাসি, আপনিও তাদের ভালোবাসুন, আর তাদেরকেও ভালোবাসুন, যারা এদের দুজনকে ভালোবাসে। (তিরমিজি)। হজরত হুজাইফা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হে হুজাইফা! এই মাত্র হজরত জিবরাইল (আ.) এসে আমাকে সুসংবাদ দিয়ে গেলেন, হাসান ও হোসাইন হবে জান্নাতি যুবকদের সরদার। (মুসনাদে আহমদ)।

ইসলামের ইতিহাসে ইমাম হোসাইন (রা.)-এর অপরিসীম ব্যক্তিত্বের কথা বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না। খোলাফায়ে রাশেদিনের পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ইসলামের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছে, তা হলো হজরত হোসাইন (রা.)-এর শাহাদতবরণ। কোনো প্রকার অত্যুক্তির আশ্রয় গ্রহণ না করেই এ কথা বলা যায়।

কারবালার প্রান্তরে রাসূলের প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র যখন নিদারুণ যন্ত্রণায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন, পাষণ্ড সানান তখন বর্শা টান দিয়ে বের করে নেয়। শহিদ হয়ে যান আহলে বাইতের শেষ প্রদীপ, জান্নাতি যুবকদের সরদার ইমাম হোসাইন (রা.)। অতঃপর শিমার মতান্তরে তার নির্দেশে হোসাইন (রা.)-এর দেহ মোবারক থেকে তার মস্তকটি পৃথক করে ফেলে। এরপর উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদের নির্দেশ পালনার্থে বারোজন অশ্বারোহী ইমাম হোসাইন (রা.) পবিত্র দেহকে দলিত-মথিত করে। ১০ মহররম ৬১ হিজরি, আশুরার দিন জোহরের নামাজের পর মুসলিম ইতিহাসের সবচেয়ে মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক এ ঘটনা সংঘটিত হয়। সে সময় ইমাম হোসাইন (রা.)-এর বয়স ছিল পঞ্চাশ বছর।