সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সপ্তাহে এই তালিকা তৈরি করেছেন। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেছে ১২ থেকে ১৪ জনের একটি বিশ্বস্ত প্যানেল। সোমবার চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দলীয় প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার মাধ্যমে এই কাজটি এককভাবে শেষ করেন তিনি। আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় কে আছেন তা শেখ হাসিনা ছাড়া দলের আর কেউই জানেন না। এমনকি আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরাও এ সম্পর্কে বিন্দুবিসর্গ জানতে পারেননি। বিষয়টি অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে শেষ করেছেন তিনি। গণভবনসংশ্লিষ্ট সূত্র এ সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের যে সভা আহ্বান করা হয়েছে, তা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা কার্যালয়ে অনুষ্ঠেয় সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে। সেজন্য আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা একাধিক দিনে গড়াতে পারে। অতীতের মতোই সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভাগওয়ারি আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত করবে।

গণভবনের একটি সূত্র যুগান্তরকে জানিয়েছে, দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনশ আসনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছেন। জোট ও মিত্রদের যেসব আসন দেওয়া হতে পারে-সেসব আসনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। আন্দোলনরত বিএনপি ও দোদুল্যমান অবস্থায় থাকা জাতীয় পার্টির সর্বশেষ অবস্থান বিবেচনায় নিয়ে এসব আসনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে এসব আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জন্যও দলীয় চিঠি প্রস্তুত করা হতে পারে সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায়।

গণভবনসংশ্লিষ্ট সূত্রটি যুগান্তরকে জানায়, গণভবনের যে প্যানেলটি দলের সভাপতি শেখ হাসিনাকে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করার কাজে সহযোগিতা করেছে, তার সদস্যরাও চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা সম্পর্কে অবহিত নন। তারা শুধু বিভিন্ন সংস্থার করা জরিপের প্রতিবেদন এবং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের দেওয়া তথ্য সমন্বয় করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দিয়েছেন। এরপর এককভাবে প্রত্যেক আসনের প্রার্থী ঠিক করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অবশ্য দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, মনোনয়ন চূড়ান্ত করার সময় এ কদিন প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।

ওই সূত্রটি জানিয়েছে, দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমাকালীন সময়ে তিনশ নির্বাচনি এলাকায় কোন প্রার্থীর কি অবস্থা তারও একটি রিপোর্ট আগামীকাল অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগ সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় উপস্থাপন করা হতে পারে। বিভিন্ন সংস্থাকে প্রার্থীদের বিশেষ করে যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনে জমা দিয়েছেন নিজের নির্বাচনি এলাকায় তাদের সর্বশেষ অবস্থান যাচাই করে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে। তাই দলীয় সূত্রটি আশা করছে, আওয়ামী লীগের এবারের প্রার্থী তালিকা নিয়ে বিতর্ক হওয়ার কথা নয়। কারণ জনপ্রিয়, কর্মীবান্ধব আর ভোটারদের পছন্দে এগিয়ে থাকা প্রার্থীরাই এবার পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন।

মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় সভা শুরু হবে। সভার প্রথম দিনে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের সংসদীয় আসনগুলোর মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে। আগের দুই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভা প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনেই অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার নির্বাচনের এই সময়ে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে রাজনৈতিক কোনো কাজ করবেন না। তাই সভার স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া।

শনিবার দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনয়ন ফরম কেনার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই ফরম বিক্রি ও জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত। দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা শেষে মাঝের একদিন হাতে রেখে বৃহস্পতিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী চূড়ান্ত করার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। বিএনপি নির্বাচনে আসুক বা নাই আসুক শাসক দল আওয়ামী লীগ সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করার ব্যাপারে অটল রয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে ১ নভেম্বর থেকে। এর দুই সপ্তাহ পর ১৫ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করেন। ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর, বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর এবং প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১৮ ডিসেম্বর।জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারত করতে শিগগির গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া যাবেন। ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি শুরু করবেন দলীয় প্রচারণা। ওই দিন ১৮ ডিসেম্বর অথবা পরের দিন ১৯ ডিসেম্বর তার সিলেট যাওয়ার কথা রয়েছে। এখানে হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজার জিয়ারত করবেন। দলীয় প্রধানের এই কর্মসূচির মাধ্যমেই শুরু হবে আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনি প্রচারণা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আমরা নির্বাচনের জন্য সর্বাত্মকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি। সংসদ নির্বাচনের আগে দলের যেসব কাজ ছিল, সেগুলো শেষ হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে গঠিত উপকমিটিগুলো কাজ করছে। প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার কাজটিও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সারা দেশের নির্বাচনি আসনগুলোতে কারা প্রার্থী হবেন-তা নির্ধারিত হবে বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায়।তথ্য জানিয়েছে।