প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন শ্রীমঙ্গল। বিশেষ করে এখন চা বাগানে ঘুরে আসার উত্তম সময়। মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত সবুজে পরিপূর্ণ থাকে চা বাগান। সেইসঙ্গে এসময় চা পাতা তুলতে শ্রমজীবী মানুষের কর্মব্যাস্ততাও চোখে পড়বে আপনার। শুরুতে দেখতে পাবেন রাবার বাগানের পাশে টি রিসোর্ট। সেখানে সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয় রিসোর্ট। টি রিসোর্ট মিউজিয়ামটি ছিল ভালো লাগার মতো। রঙিন চালের ছাউনিতে গেস্ট হাউসটি যেন প্রকৃতিরই একটি অংশ।
শ্রীমঙ্গলে চা বাগানে টি রিসোর্ট অ্যান্ড মিউজিয়াম। টি রিসোর্ট সব বাংলো ছিল এবং একেকটা বাংলোর একেক রকম নাম ছিল। সেখানে বলার মতো ৯ নাম্বার বাংলোটি উল্লেখযোগ্য ছিল। ৯ নাম্বার বাংলোর নাম ছিল ছায়ানীড়। চারিদিকে গাছপালা ফুল সবুজের সমাহার। আর বাংলোর পাশে পাহাড় ও চা বাগান। চারদিকে নানা রঙের ফুলের গাছ, তারই মাঝে বাংলো ভবন, প্রতিটি বাংলোর সামনে খেলার জায়গা ও দোলনা আছে।
শ্রীমঙ্গল চায়ের রাজধানী। এটি বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত একটি উপজেলা। যা সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত। পাহাড়, হাওর, রাবার বাগান আর সবুজ চা বাগান রয়েছে এ অঞ্চলে। এজন্য এ স্থানে প্রতিদিনই দেশী-বিদেশী পর্যটকের আগমন থাকে। তাছাড়া, শ্রীমঙ্গলে পাঁচ তারকা হোটেল, অনেক আবাসিক হোটেল ও রেস্তোরাঁ রয়েছে। শ্রীমঙ্গলের ব্যাপক অঞ্চল জুড়ে রয়েছে চা বাগান।
এছাড়াও রাবার, লেবু ও আনারস চাষ হয় শ্রীমঙ্গলে। যতদূর চোখ যায় রাবার বাগান সারি দেখা যায়। দেখে মনে হয় একই সারিতে সমানভাবে লাগানো আছে গাছগুলো। অপূর্ব রাবার বাগানটি দেখেত চাইলে আপনাকে যেতে হবে মৌলভীবাজারে। তাই সুযোগ পেলে শ্রীমঙ্গলের রাবার বাগান থেকে ঘুরে আসতে পারেন। লাউয়াছড়া সড়কের বিটিআর চা বাগানের এক-পাশে রাবার বাগান দক্ষিণ পাশে চা বাগান।
শ্রীমঙ্গল টি কোম্পানির রাবার বাগানের এই সৌন্দর্য অকল্পনীয়। কোথাও দুই দিকে আবার কোনও জায়গায় একদিকে চা বাগান একদিকে রাবার বাগানের হাজারও গাছ, এরই মাঝখানে বৃহৎ পথ। যেমন লাউয়াছড়া যেতে রাস্তার বাম পাশে রাবারের সারি সারি গাছও ডানপাশে চা বাগান। আবার কালিঘাট ফুলছড়া বাগানে যেতে রাস্তার দুপাশে পড়বে হাজার হাজার রাবার গাছ।
বাগানটির অন্যতম সৌন্দর্য হলো এটি একেক ঋতুতে একেক রকম হয়। শীতকালে গাছের সব পাতা ঝরে গিয়ে যেমন নিঃস্ব হয়, তেমনি বর্ষায় ফিরে পায় নতুন রূপ।
বৃষ্টির দিনে বাংলোতে বৃষ্টি বিলাস উপভোগ করা যায়। এমন বর্ষার দিনে এক কাপ চা খেতে খেতে বৃষ্টি দেখার মজাই আলাদা। টি রিসোর্ট আছে সুইমিংপুল। যেটা বড় থেকে ছোট সবার পছন্দের জায়গা। বাগানের প্রতিটি গাছের পাতা থেকে বৃষ্টি ঝরে পড়ার অপরূপ দৃশ্য যেমন উপভোগ করতে পারবেন, তেমনি টিনের চালে বৃষ্টি পড়ার অপূর্ব আমেজও নিয়ে আসবে।
চা বাগানের ভেতরে আছে রাবারশীট তৈরির কারখানা। এছাড়া, সব মিলিয়ে প্রকৃতির সাথে সুন্দর মূহুর্ত কিছু সময় কাটাতে চাইলে শ্রীমঙ্গল এসে ঘুরে যেতে পারেন।
কীভাবে যাবেন-
শ্রীমঙ্গলের এ চা বাগানগুলো ভালোভাবে ভ্রমণের জন্য নিজস্ব গাড়ি নিয়ে গেলে ভ্রমণ সহজ হবে। তবে ঢাকা থেকে বাসে কিংবা ট্রেনে শ্রীমঙ্গল পৌঁছে সেখান থেকেও গাড়ি ভাড়া করে চা বাগানে বেড়াতে পারেন।
ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়দাবাদ থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সিলেট এক্সপ্রেস ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাস যায় শ্রীমঙ্গল। ভাড়া ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা।
এছাড়া ঢাকার কমলাপুর থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস। দুপুর ২.০০ মিনিটে প্রতিদিন ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস।
বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ১০.০০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস এবং শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন বিকেল ৪ টায় কালনী এক্সপ্রেস। ভাড়া ১১৫ থেকে ৭৬৫ টাকা। রেলপথে সাধারণত ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল পৌঁছুতে সময় লাগে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা।
এছাড়া চট্টগ্রাম রেলপথে সরাসরি শ্রীমঙ্গল যাওয়া যায়। চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং শনিবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯.০০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস। ভাড়া ২৩০ থেকে ৯৪৩ টাকা।
শ্রীমঙ্গলে গিয়ে ঘুরে আসার জন্য একদিনই যথেষ্ট। তবে অবশ্যই যেকোনো চা বাগানে যেতে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিন। চা বাগানের শ্রমিকদের ছবি তুলতে গেলেও অনুমতি নিয়ে নিন।
মন্তব্য