জুড়ীতে জীবন বীমার কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা কর্মচারী

লভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলায় শতশত গ্রাহকের জীবন বীমার টাকা নিয়ে লাপাত্তার অভিযোগ উঠেছে মো. আব্দুল হাকিম ইমনের বিরুদ্ধে। ইমন উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের মৃত সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে। 

সম্প্রতি উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নের ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন গ্রাহক ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম শেলুর মারফতে পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনফর আলী বরাবর এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। 

ভুক্তভোগী গ্রাহকদের কাছে থাকা জীবন বীমার পাস বই থেকে জানা যায়, মোঃ আব্দুল হাকিম ইমন সোনালী সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি নামক প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক। পাস বইয়ে উল্লেখিত সমবায় সমিতিটির নিবন্ধন নম্বর মৌলভী/১১০, ছোট ধামাই, জুড়ী, মৌলভীবাজার। তবে অনেক গ্রাহক আশংকা করছেন সমিতিটি হয়তো নিবন্ধিতও নয়। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভিযুক্ত আব্দুল হাকিম ইমন সানলাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মাঠ কর্মী হিসেবে ফুলতলায় ঘাঁটি গাড়েন। চা বাগানের খেটে খাওয়া দরিদ্র চা শ্রমিকদের লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে তার ফাঁদে ফেলেন। তার কিছুদিন পর নিজের নামে একটি সমবায় সমিতি খুলে সাধারণ চা শ্রমিকদের একে একে সদস্য বানান এবং মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করতে থাকেন। চা শ্রমিকরা তাকে বিশ্বাস করে ৫০/১০০/২০০ বা ৫০০ টাকা মাসপ্রতি জমা দিতে থাকেন। ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অল্প অল্প করে সঞ্চয় করতে থাকেন এবং আশায় বুক বাধেন। মেয়াদপূর্তিতে বিশাল অংকের টাকা গ্রাহকরা পাবার কথা থাকলেও ঘটেছে তার উল্টো, প্রাপ্য টাকা পান নি কেউই। সরজমিনে গেলে ফুলতলা ইউনিয়নের রাজকী চা বাগানের চুঙ্গাবাড়ি এলাকার শান্তি রবিদাস বলেন, "আমি অনেক কষ্ট করে জীবন বীমার টাকা জমা দিয়েছি। আমি আমার টাকা ফেরত চাই।"

চুঙ্গাবাড়ির আরেক ভুক্তভোগী কানাই ভর বলেন, "তিন গুণ লাভের লোভ দেখিয়ে ইমন আমাদের কাছ থেকে টাকা নেয়। কিন্তু বিগত ১ বছরেরও বেশি সময় ধরে সে লাপাত্তা। আমরা তার কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। ফোন দিলে ফোন ধরে না। আমরা আমাদের প্রাপ্য টাকা ফেরত চাই।

ফুলতলা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি শুকুল গোয়ালা বলেন, "আমিও প্রতারণার শিকার। চুঙ্গাবাড়ি ও রাজকি এলাকার শতশত মানুষ আব্দুল হাকিম ইমনের জীবন বীমার সদস্য হয়েছে। ১২ বছর ধরে অনেক মানুষ টাকা দিয়ে আসছে। মেয়াদপূর্তি হলে সে কাউকে মূল বা লাভের টাকা ফেরত দেয় নি৷ ইমন এখন রাজকীতে আসেন না। ফুলতলায় ইমনের অফিসও তালাবদ্ধ। কোনো গ্রাহকের সাথে যোগাযোগ রাখেন না। ইমনের সহকারী বিজয় বুনার্জীকে ফোন দিলেও কোনো সদুত্তর পাওয়া যায় না। আমরা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে খেটে খাওয়া চা শ্রমিকদের প্রাপ্য টাকা ফেরত চাই।" 

দক্ষিণ সাগরনালের বাসিন্দা হাসিনা বেগম বলেন, "আমি ২০১৫ সাল থেকে ইমনের প্রতারণার শিকার। ইমনের কাছে বীমা বাবদ ৫০,০০০ টাকা পাই। ইমন এখন ফোন দিলে ফোন ধরে না। আমি আমার টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।"

ফুলতলা চা বাগান, এলবিনটিলা ফাঁড়ি বাগান, রাজকি চা বাগান ও চুঙ্গাবাড়ি এলাকায় এমন ভুক্তভোগীর সংখ্যা অগণিত।

ফুলতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম বলেন, "ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে এমন অভিযোগ শুনেছি। তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনাটির সুষ্ঠু সমাধানের দাবি জানাই।"

ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম শেলু বলেন, "লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।" 

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মো. আব্দুল হাকিম ইমনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে বলেন, আমি গ্রাহকদের টাকা নিয়ে লাপাত্তা হই নি। দীর্ঘদিন গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ না রাখায় গ্রাহকরা আমাকে ভুল বুঝেছেন। সোনালী সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি নামে আমার কোনো নিবন্ধিত সমিতি নেই। আমি সানলাইফ ইন্সুইরেন্সে চাকরি করি। গ্রাহকদের হিসাব রাখার সুবিধার্থে সোনালী সঞ্চয় নামক দেউলিয়া সমিতিটির বই ব্যবহার করেছি শুধু।

তবে সেখানে নিজেকে নির্বাহী পরিচালক দাবি করে স্বাক্ষর প্রদান ও সমিতিটিকে নিবন্ধিত বলে নিবন্ধন নম্বর ব্যবহার কিভাবে করছেন সেই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেন নি তিনি।