ভয়ঙ্কর ‘কালাপানি গ্যাংস্টার’, অস্ত্র হাতে মহড়া

রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীতে প্রতিনিয়ত আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাং ‘কালাপানি গ্যাংস্টার’। কথায় কথায় দেশীয় অস্ত্র হাতে নিয়ে মহড়া দেওয়া যেন তাদের নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সংঘবদ্ধভাবে মিরপুর ১২ নম্বরের অলিগলিসহ সর্বত্র দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই গ্যাং সদস্যরা। অপরাধের ধরন যাই হোক না কেন, সব কিছুই তাদের কাছে মামুলি ব্যাপার। দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে উঠতি বয়সের এই কিশোররা।

জানা গেছে, মিরপুর ১২ নম্বর কালাপানি এলাকার বখে যাওয়া কিশোররা বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত হয়ে গড়ে তুলেছে ‘কালাপানি গ্যাংস্টার’। এদের সদস্য সংখ্যা ৪০-৫০ জন। পল্লবী থানার সামনে গড়ে উঠেছে এদের আস্তানা। অস্ত্রশস্ত্র হাতে বিভিন্ন টিকটক ভিডিও বানিয়ে নিজেদের ফেসবুক ও ম্যাসেঞ্জারে শেয়ার করে গ্যাংয়ের সদস্যরা। মাদক, চুরি, ছিনতাই, মারামারি, দস্যুতা, ইভটিজিং, ফিটিংসহ বেশকিছু অভিযোগ উঠেছে এই সদস্যদের বিরুদ্ধে।

আরও জানা গেছে, কালাপানি গ্যাংস্টারের দলনেতা আকাশ। আকাশের সেকেন্ড ইন কমান্ড রাব্বি ওরফে ‘কুত্তা রাব্বি’। মিরপুর ১২ নম্বর কিংস্টন হাসপাতালের গলিকে (১ ও ২ নম্বর রোড) কেন্দ্র করে গড়ে ঊঠেছে এদের অপরাধের আখড়া।

গত মাসে কথাকাটাকাটির জেরে আল আমিন নামে এক রিকশাচালককে কুপিয়ে জখম করে কালাপানি গ্যাংস্টারের সদস্যরা। এ ঘটনায় গত শনিবার আল আমিনের বাবা তাজুল ইসলাম পল্লবী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা হলো- আকাশ, রাব্বি ওরফে কুত্তা রাব্বি, সাগর, সজীব, শুভ, শান্ত, রানা, মোহাম্মদ, রবিন, রাব্বি ওরফে কানা রাব্বি, সিফাত, শিশির, ইমন, ফয়সাল ও অজ্ঞাত আরও ৭-৮ জন।

অভিযোগে আল আমিনের বাবা তাজুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলে মো. আল আমিন হোসেন (২২) পেশায় একজন রিকশাচালক। গত মাসের ৭ তারিখ বিকাল বেলায় আমার ছেলে তার ২-৩ জন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে মিরপুর ১২ নম্বর বিন্দাবনের উদ্দেশে ঘুরতে বের হয়। ওই দিন রাস্তার মধ্যে রাব্বির সঙ্গে আমার ছেলে ও তার বন্ধুদের দেখা হলে সে অযথা তাদের গালিগালাজ করে। রাব্বির কাছে তারা গালমন্দের কারণ জানতে চাইলে সে আমার ছেলেকে মারধর করে। তাকে (আল আমিন) বাঁচাতে তার বন্ধুরা এগিয়ে আসলে তাদেরকেও মারধর করা হয়। একপর্যায়ে রাব্বি তার হাতে থাকা সুইচ গিয়ার চাকু দিয়া হত্যার উদ্দেশে আমার ছেলের পিঠের ওপর উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। এরপর আকাশসহ অন্য আসামিরা আমার ছেলে ও তার বন্ধুদের মাথায় এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ইট দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে।

তিনি আরও বলেন, রাব্বি আমার ছেলের হাতে থাকা অপো ব্র্যান্ডের একটি মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলে। যার মূল্য সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। এরপর ছেলেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানা, আল আমিনের ফুসফুসে রক্ত জমাট বেঁধেছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।

মিরপুর ১২ নম্বরের সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের ছাত্রলীগের কর্মী রওশন জানান, কিংস্টন হাসপাতালের ২ নম্বর রোডে (কাটার গলিতে) কিশোর গ্যাং নেতা আকাশ ও তার লোকজন মাদক বেচাকেনা, চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ করে। তারা ওই গলিতে নিয়মিত আড্ডা দেয়। কলেজের কিছু বখাটে শিক্ষার্থীদের কাছে নিয়মিত মাদক সাপ্লাই দেয় আকাশের লোকজন।

মিরপুর ১২ নম্বর কিংস্টন হাসপাতালের ১ নম্বর রোডের চশমার দোকানদার মোজাহের বলেন, প্রতিদিন সন্ধ্যার পর আকাশ, রাব্বিসহ তাদের বাহিনীর ২৫-৩০ জন সদস্য হাসপাতালের দুপাশের গলিতে রাতভর আড্ডা দেয়।এ সড়কে তারা নিয়মিত মজমা বসায়। এ নিয়ে থানায় অভিযোগও দেওয়া হয়েছে। মেয়ে শিক্ষার্থী ও নারী পথচারী দেখলেই তারা ইভটিজিং করে। ভুক্তভোগীরা এ নিয়ে থানায় অনেক অভিযোগও করেছেন।

এদিকে আকাশ ও রাব্বির কয়েকটি টিকটক ভিডিও হাতে এসেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, প্রকাশ্য দিবালোকে মিরপুর ১২ নম্বরের একটি সড়কে দেশীয় অস্ত্র হাতে নিয়ে ফিল্মি কায়দায় মহড়া দিচ্ছে দলনেতা আকাশ ও তার লোকজন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে ‘কালাপানি গ্যাংস্টার’ লিডার আকাশ বলেন, আমি কিশোর গ্যাং কী তাই জানি না। আমি কোনো কিছুতেই জড়িত নই। এলাকায় আমার অনেক মান-সম্মান রয়েছে। সবাই আমাকে চিনে। আমি চাই না তা নষ্ট হোক। থানায় আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।আপনাকে যারা বলেছে, তারা ভুল তথ্য দিয়েছে। আমি আগে পড়াশোনা করতাম, এখন একটা চাকরি খুঁজছি।

দেশীয় অস্ত্র হাতে টিকটক ভিডিওর বাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের হাতে যে অস্ত্র ছিল সেগুলো ফেক।অনেকে ফেক জিনিস ব্যবহার করে টিকটক ভিডিওসহ লাইকি বানাই।

পল্লবী থানার এসআই ও অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা চিন্ময় বলেন, কিছুদিন আগে আল আমিন নামের এক রিকশাচালকে চাকু দিয়ে জখম করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি অভিযোগ হাতে পেয়েছি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা সম্ভবত কিশোর অপরাধী। আমি অভিযোগকারীকে বলেছি, আসামিদের বাসার ঠিকানা অথবা ছবি দিয়ে চিনিয়ে দেন তাদের আটক করা হবে।

পল্লবী থানার ওসি পারভেজ ইসলাম বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই আমরা ব্যবস্থা নেই।