সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে আন্দোলন আবারও চাঙা করার পরামর্শ দিয়েছে বিএনপি নেতারা। বুধবার ভাইস চেয়ারম্যান, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম, অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন ও ঢাকা মহানগর নেতাদের সঙ্গে পৃথক ভার্চুয়াল বৈঠকে দলের হাইকমান্ডকে এ পরামর্শ দেন তারা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের শুরুর দিন ৩০ জানুয়ারি অথবা এর আগে কর্মসূচি রাখারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। সেক্ষেত্রে ঢাকায় বড় ধরনের সমাবেশ করার প্রস্তাব দিয়ে নেতারা এ বৈঠকে বলেছেন, জনগণ ভোট বর্জন করে পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে, বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে তারা রয়েছে। তাই সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরুর আগেই সমাবেশ করে জনগণকে বার্তা দেওয়া উচিত বড় দল হিসাবে বিএনপি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকবে। সমাবেশ করা হলে নেতাকর্মীরা আবারও উজ্জীবিত হবে। দেশের পাশাপাশি বিদেশিদের কাছেও বার্তা যাবে বিএনপি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রয়েছে। আরও শক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে। এছাড়া কারাবন্দি নেতাকর্মীদের আইনি সহায়তাসহ নানা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এর আগে মঙ্গলবার স্থায়ী কমিটি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গেও পৃথক ভার্চুয়াল বৈঠক করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার থেকে দুই দিন কর্মসূচি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যা বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
জিয়াউর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষ্যে দুই দিনের কর্মসূচির বিষয়ে স্থায়ী কমিটির নেতারা বলেন, কর্মসূচিই হতে পারে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরুর প্রথম ধাপ। তারা মনে করেন, এর মাধ্যমে সারা দেশে নেতাকর্মীরা স্বাভাবিক কার্যক্রম করার সুযোগ পাবে। ফলে এ দিনের কর্মসূচি ভালোভাবে পালন করার সিদ্ধান্ত হয়। দলের নেতারা মনে করছেন, জিয়ার জন্মদিনের কর্মসূচির মাধ্যমে বিপর্যস্ত রাজনৈতিক অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজে পাবে বিএনপি।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন চলমান রয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পর্যায়ক্রমে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চলবে।’
সরকারের পদত্যাগসহ একদফা দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক জোট ও দল ৭ জানুয়ারির ভোট বর্জনের ডাক দেয়। নির্বাচন কমিশন ফলাফল ঘোষণা করলে ভোটের হার নিয়ে প্রশ্ন তুলে ‘কারচুপি’র মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় এসেছে বলে অভিযোগ করে আসছে বিএনপি। ইতোমধ্যে ভোটে ‘অনিয়ম’ ও ‘কারচুপি’র নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে দলটি।
স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্র জানায়, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি না রাখলেও ধীরে ধীরে এখন নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচিতে ফিরতে চায় বিএনপি। সমাবেশ করার বিষয়ে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতারাও একমত পোষণ করেন। তবে কর্মসূচির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একজন সিনিয়র নেতা বলেন, স্বাভাবিক রাজনীতিতে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু করার বিষয়ে দলের ভেতর আলোচনা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয় এবং নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় খোলা হয়েছে। আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। আদালত থেকে নেতাকর্মীরাও জামিন পেতে শুরু করেছে।
আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি হাইকমান্ড কারাবন্দি নেতাকর্মীদের জামিনে মুক্ত করার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে বলেছেন।
এদিকে মঙ্গলবার বিকালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) সঙ্গেও বৈঠক করেছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। উভয় বৈঠকে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের ভোটের হার ও অনিয়ম তুলে ধরা হয়।
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে আলোচনা : রমজানের আগে উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। এ নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যেও আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য ও একজন ভাইস চেয়ারম্যান যুগান্তরকে বলেন, এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার সুযোগ নেই। তারপরও কেউ যদি যেতে চায় দলীয় প্রতীক ছাড়াই যেতে হবে। সেক্ষেত্রে দল তাদের ব্যাপারে নমনীয় থাকবে; নাকি কঠোর হবে সেই সিদ্ধান্ত আলোচনা করেই নিতে হবে। তবে কেউ কেউ শিথিলের পক্ষে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের।
মন্তব্য