জামিনে চিন্তিত ডিআইজি মিজানুরও তার স্ত্রী

নন্দিত ডেস্ক:জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের একটি মামলায় বর্তমান পুলিশের ডিআইজি (পুলিশের রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স- আরআরএফ মিল ব্রাক ঢাকা) মীজানুর রহমানের স্ত্রী সালমা আক্তার নীপা ওরফে নীপা মীজানের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। স্ত্রীর এই জামিনে চিন্তিত মিজানুর রহমান। চিন্তিত নীপাও। এ জামিনে সন্তুষ্টও নন তারা। মঙ্গলবার (৫ মার্চ) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশের আদালতে নীপার স্থায়ী জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবী আশরাফুল হক। এদিন মিজানুর ও তার স্ত্রী আদালতে উপস্থিত হন। শুনানি শেষে আদালত ৩ এপ্রিল পর্যন্ত নীপার জামিন মঞ্জুর করেন। ওইদিন তার জামিনের বিষয়ে চূড়ান্ত শুনানি হবে। জামিন শুনানির আগে ও শুনানি চলাকালে তাদের দু’জনকে দেখা যায় চিন্তিত। স্থির ছিলেন না তারা। আইনজীবীর সঙ্গে তারা বারবার কথা বলছিলেন। শুনানির পর আদালতের বাইরে এসে মিজানুর রহমান তার আইনজীবীকে বলেন, আপনারা ঠিকভাবে শুনানি করেননি। মামলাটি ভুয়া তা একবারও বলেননি। মামলার মূল বিষয়গুলো তুলে ধরেননি। প্রতিউত্তরে ওই আইনজীবী বলেন, আমরা প্রয়োজনীয় সব কথা আদালতে বলেছি। আইনি পয়েন্টে কথা বলেছি। শুনানিতে নীপার আইনজীবী কাজী নজিবুল্লাহ হিরু বলেন, এটা একটা বেহুদা মামলা। কোনো মামলাই নয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে সাত কোটি টাকার মালিক তিনি। এই সাত কোটি টাকার মধ্যে পাঁচ কোটি টাকা ব্যাংক লোন তার। তার বাকি টাকার ইনকাম ট্যাক্স দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া এ মামলায় উচ্চ আদালত তাকে জামিন দিয়েছেন। আইনজীবী আশরাফুল আলম  বলেন, মামলায় উচ্চ আদালত থেকে তিনি জামিনে আছেন। আজ আমরা স্থায়ী জামিনের আবেদন করেছি। আদালত ৩ এপ্রিল পর্যন্ত তার জামিন মঞ্জুর করেছেন। আর ওইদিন তার জামিনের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ শুনানি হবে। আগামী তারিখে তিনি জামিনে থাকবেন কি না তা জানা যাবে। এ মামলায় দুদকের আইনজীবী ছিলেন আবুল হাসান। তিনি শুনানিতে নীপার জামিনের বিরোধিতা করেন। শুনানি শেষে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, দুদকের মামলায় নীপার স্থায়ী জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবী। আদালত ৩ এপ্রিল পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেছেন। আমরা আশা করেছিলাম আজ তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেবেন আদালত। মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৫ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ‘এসপির আলিশান বাড়ি তৈরি, জোগালি দিচ্ছেন সাব-ইন্সপেক্টর’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী পুলিশ কর্মকর্তা মীজানুর রহমান ও তার স্ত্রীর উপর নির্ভরশীল ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জেনের অভিযোগ আনে দুদক। ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক ফারুক আহম্মেদকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা করা হয়। ফারুক আহম্মেদ দেখেন যে, ২০০৩ সালে আসামি সালমা আক্তার ওরফে নীপা মিজানের সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের বিবাহ হয়। নীপা গৃহিনী হওয়া সত্বেও তার স্বামী মীজানুরের ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে জয়েন্ট স্টক কোম্পানির রেজিস্ট্রিভুক্ত কোরানীগঞ্জে একটি সার কারখানার মালিক হন। আসামি নীপা বিভিন্ন জায়গায় ৪১ লাখ ২৮ হাজার ৭০০ টাকার মালিক হন। এ ছাড়া ব্যবসায়িক মূলধন, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, টিডিআর ও নগদে মোট ৭ কোটি ৮ লাখ ৬৩ হাজার ৩৮৪ টাকার অস্থাবর সম্পদের মালিক হয়েছেন। স্থাবর ও অস্থাবরসহ মোট সম্পদের পরিমাণ ৭ কোটি ৪৯ লাখ ৯২ হাজার ৮৪ টাকা। ব্যাংক ঋণ ৫ কোটি ৩১ লাখ ৬৩ হাজার ৬১০ টাকা বাদ দিয়ে ২ কোটি ১৮ লাখ ৩৮ হাজার ৪৭৪ টাকা। নীপা মীজানের ব্যয় ৩৭ লাখ ৯৩ হাজার টাকাসহ মোট সম্পদ ২ কোটি ৫৬ লাখ ৩১ হাজার ৪৭৪ ঠাকা প্রারম্ভিক সম্পদসহ তার আয় ২৩ লাখ ৭১ হাজার ৬৫৮ টাকা। এ ক্ষেত্রে আয়ের চেয়ে মোট সম্পদ বেশি হওয়ায় নীপার নামে ২ কোটি ৩২ লাখ ৫৯ হাজার ৮১৬ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পায় দুদক। এ ঘটনায় ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর তেজগাঁও থানায় দুদকের সহকারী পরিচালক ফারুক আহম্মেদ বাদী হয়ে এই মামলাটি করেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন। উল্লেখ্য, বেআইনি নানা কর্মকাণ্ড ও দুর্নীতির অভিযোগে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার এই পুলিশ কর্মকর্তা একাধিকবার সংবাদের শিরোনাম হয়েছিলেন। জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ ওঠায় ২০১০ সালে বাগেরহাটের এসপির পদ থেকে তাকে অপসারণ করা হয়েছিল