ঈদের কাজ আছে তবে চাপমুক্ত সিলেটের দর্জিপাড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক : পবিত্র ঈদুল ফিতর ঘনিয়ে আসলেও সিলেটের দর্জিপাড়ায় এবার কাজের চাপ তেমন নেই। গার্মেন্টস আর তৈরী পোশাকের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রতিযোগিতায় আসতে পারছে না দর্জি দোকানগুলো। কালের বিবর্তনে টেইলারিং কাপড় তৈরী করে পরিধান করার প্রবনতা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। যা এবারই লক্ষ্য করা গেছে। কারণ গার্মেন্টেসের তৈরী পোশাকর বিশাল চাহিদার পাশাপাশি টেইলার্সে সেলাই করে কাপড় তৈরীর চাহিদাও কম ছিলনা। তবে এবার ১৮ রমজান অতিবাহিত হলেও টেইলারিংয়ের দোকানে তেমন অর্ডার পড়েনি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন যে কারণে এখন কাজের চাপ কম। ব্যবসায়ীরা ২৫ রমজান পর্যন্ত অর্ডার নেবেন বলে জানিয়েছেন। নগরীর বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, নয়াসড়ক, মিরাবাজার, শিবগঞ্জবাজারসহ বিভিন্ন মার্কেটের টেইলার্স দোকানগুলো ঘুরে দর্জিপাড়ার কারিগরদের কাজের ধীর গতি দেখা যায়। নগরীর মিরাবাজারের সৈকত টেইলার্সের পরিচালক আবদুস সাত্তার বলেন, গত বছর এমন সময়ে কাজের যে চাপ ছিল এবছর এখনো কাজের চাপ বাড়ার মতো অর্ডার পড়েনি। তবে তারা আশা করছেন ২৫ রমজান পর্যন্ত অর্ডার রাখতে পারবেন। কাপড়ের দোকানেও বিকিকিনি অন্যবারের চেয়ে ভাল হলেও দর্জিপাড়ায় এখনও কোন ব্যস্ততা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ঈদ উপলক্ষে বিশেষ কোন ডিজাইন ছাড়া দর্জিরা বাড়তি কোন মজুরি নিচ্ছেন না। ইতোমধ্যে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ নিজ নিজ পছন্দের ডিজাইনে পোশাক তৈরী করতে যাচ্ছেন টেইলার্সগুলোতে। নগরীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে তৈরী পোশাকের মজুরি শার্ট-৩০০-৩৫০ টাকা, প্যান্ট-৪০০-৪৫০ টাকা, ব্লেজার-৩২০০-৩৫০০ টাকা, প্রিন্সকোর্ট-৩৫০০-৪৫০০ টাকা, স্যুট-কোর্ট-৩৫০০ টাকা, মুজিবকোর্ট-১৮০০ টাকা। তাছাড়া মহিলাদের তৈরী পোশাকের মজুরী সেলোয়ার-কামিজ-৩০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত রাখা হচ্ছে। পাঞ্জাবী, এ্যারাবিয়ান জুব্বা, কাবুলি তৈরীর জন্য বর্তমানে সিলেট নগরীর করিম উল্লাহ মার্কেটের নীচতলায় দর্জিপাড়া ব্যাপক পরিচিত। তবে এই মার্কেটের দর্জি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রমজানের শেষের দিকে তারা গ্রাহকদের জিম্মি করে রাখেন। সারাবছর যেখানে সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকায় নরমাল পাঞ্জাবী সেলাই করা যায়, সেখানে রোজার মাসে পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে ভিন্ন চিত্র পরিলক্ষিত হয়। রোজার শেষের দিকটায় এসে গ্রাহকদের কাছ থেকে গলা কাটা রেইট নেওয়া হয়ে থাকে। স্বাভাবিক নিয়মে যেখানে ৮০০ টাকায় কাবুলি পাঞ্জাবি সেলাই করা যায় সেখানে কিছু কিছু ব্যবসায়ীরা ১২০০-১৫০০টাকা পর্যন্ত দাবি করে বসেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন গ্রাহক জানান, রোজা এলে এই মার্কেটে দর্জি ব্যবসায়ীদের জিম্মি করার প্রবণতা দেখা দেয়। টেইলার্স জগতের সেলাইয়ের মূল্যতালিকা বা মনিটরিংয়ের অভাবে যে যার মতো দাবি করে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ গ্রাহকদের। বৃহস্পতিবার সরেজমিনে সিলেট নগরীর করিম উল্লাহ মার্কেটের এরাবিয়ান টেইলার্স, সুহেল টেইলার্স, আল মুজাহিদ টেইলার্স, আলিফ টেইলার্স, আরিফ টেইলার্স, মামুন টেইলার্স, নুমান টেইলার্স, কাজি ম্যানশনের বিসমিল্লাহ টেইলার্স, রংমহল টাওয়ারের আরাফ টেইলার্স, পাঞ্জাবি টেইলার্সসহ বিভিন্ন টেইলার্সের দোকান ঘুরে দেখা যায়, তুব ৬০০-৭০০টাকা, এরাবিয়ান জুব্বা-৮০০-৯০০টাকা, নরমাল পাঞ্জাবি-৩৫০-৪০০টাকা, মাদানী পাঞ্জাবি-৪৫০-৫৫০টাকা, কলি¬দার পাঞ্জাবি-৬০০-৭৫০টাকা রেইটে সেলাইয়ে রাখছেন। এব্যাপারে জানতে করিম উল্হলা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি পাবেল আহমদের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। শফিক আহমদ ও নাজমুল ইসলাম নামের দু’জন টেইলার্স মাস্টারের সাথে কথা হলে তারা বলেন, আমাদের এরাবিয়ান টেইলার্স সারাবছরই প্রচুর কাজের চাপ থাকে। তবে অন্যান্য টেইলার্স ঘুর দেখা যায়, চাপহীন কাজ করছেন দর্জিরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন তারা ২০ রমজান পর্যন্ত কাজের অর্ডার রাখতে পারবেন। এদিকে শনিবার জিন্দাবাজার বিভিন্ন টেইলার্সের কারখানা ঘুরে দেখা যায়, গ্রাহকরা তাদের পছন্দের শার্ট-প্যান্টের আনরেডি পিস কিনে তৈরী করতে অর্ডার দিচ্ছেন শুভ আহমদ জানান, নগরীতে টেইলার্স এর অভাব নেই। তবে নিখুঁত সেলাইয়ের নৈপুন্যতা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠান খুবই কম। সবদিক বিবেচনা করেই এবা তৈরী পোশাক দিয়ে ঈদ উদযাপন করবো ভেবেছি। তাছাড়া নগরীর জিন্দাবাজারে ড্র টেইলাস, আহমদ টেইলাস এন্ড ফ্রেব্রিক্স, শৈলী টেইলার্স, নারী টেইর্লাস, এয়ারলুমস টেইলার্স এন্ড ফেব্রিক্স। নয়াসড়কের জননী টেইলার্স, বন্দরবাজারের করিম উল্লাহ মার্কেটের এরাবিয়ান টেইলার্স, আল মোজাহিদ, আলীফ টেইলার্স, পাঞ্জাবী টেইলার্স, নোমান টেইলার্স, শিবগঞ্জবাজারের নাফিসা টেইলার্স, রুপালী টেইলার্সও পড়ছে ধীর গতিতে তৈরী পোষাকের অর্ডার। নগরীর করিম উল্লাহ মার্কেটের এরাবিয়ান টেইলাস এর স্বত্তাধিকারী ফখরুদ্দীন আহমদ ফাহাদ জানান, আমরা এরাবিয়ান তোব, জুবরার পাশাপাশি সবধরনের পাঞ্জাবী তৈরী করে থাকি। ইন্টারনেট থেকে ডিজাইন নিয়ে এবার পাঞ্জাবী তৈরী করতে তরুণরাই বেশী আসছেন। এরপরে অর্ডার রাখলেও ডেলিভারী দেওয়া হবে ঈদের পরে। পাঞ্জাবী তৈরা করতে আসা নগরীর সাদিপুরের বাসিন্দা জাহেদ আহমদ জানান, সারা বছরই শার্ট-প্যান্ট পরি, ঈদ এলে নিজের পছন্দে পাঞ্জাবাী তৈরী করে ঈদ উদযাপন মনে আলাদ আনন্দ জাগে।