নন্দিত সিলেট:শিশুদের মনবিকাশে তার সুপ্ত প্রতিভার প্রস্ফুটন ঘটাতে খেলাঘরকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাংতে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদে উজ্জ্বীবিত হয়ে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছে যে সংগঠন তার আদর্শিক ও উদ্দেশ্যমূলক কর্মকান্ড পরীক্ষিত। সুস্থ সমাজ বিনির্মাণে পাড়ায় পাড়ায় খেলাঘর গঠন এখন অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত ২৬ এপ্রিল শুক্রবার সকাল ১০টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অর্ধশত বর্ষাধিক সংগঠন সুরমা খেলাঘর আসরের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনকালে উদ্বোধক বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও চিত্রকর হ্যারল্ড রশীদ একথা বলেন।
খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ড. সেলু বাসিত প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ সুখী, সমৃদ্ধশালী ও উন্নয়নশীল দেশ। বর্তমান সময়ে বিশ্বের দরবারে স্বনির্ভর দেশ হিসেবে বাংলাদেশ অগ্রগণ্য। কিন্তু সমাজ ব্যবস্থায় সমানতালে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যেতে পারছে না। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, পরিবার ও পরিজনের ভীড়ে এ অসুস্থ সমাজে আমাদের নিষ্পাপ শিশুরা আজ বড় অসহায়। তারা নানাভাবে নিগৃহিত হচ্ছে। এরই মধ্যে সড়ক দূর্ঘটনায় প্রতিদিন আহত আর নিহত হচ্ছে কমলমতি শিশু ও শিক্ষার্থীরা। এর থেকে উত্তরণ জরুরী। একাজে এগিয়ে আসতে হবে সুরমা খেলাঘর আসরের সভ্যদের।
সুরমা খেলাঘর আসরের সভ্যদের জাতীয় সঙ্গীত ও খেলাঘর সঙ্গীত পরিবেশনের সাথে জাতীয় ও খেলাঘরের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে উদ্বোধনী সভায় উপস্থিত ছিলেন কনকচাঁপা খেলাঘর আসর ছাতকের সভাপতি কেতকী রঞ্জন আচার্য, সাংগঠনিক সম্পাদক বদরুল আমিন রুবেল, খেলাঘর সিলেট জেলার সহ-সভাপতি বিধান দেব চয়ন, সিরাজ উদ্দিন শিরুল, জেলা কালচারাল অফিসার অসিতবরণ দাশগুপ্ত, সাংবাদিক হৃষিকেশ রায় শংকর, ভাস্কর সম্পাদক কবি পুলিন রায়, বিশিষ্ট গণসংগীত শিল্পী সুবল চন্দ্র দেব, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: আব্দুল খালিক, জেলা কমান্ডার সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল প্রমূখ। অনুষ্ঠানে সম্পৃক্ত হোন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ড. ভীষ্মদেব চৌধুরী ও গবেষক আলী মোস্তফা চৌধুরী।
উদ্বোধন শেষে এক বর্ণাঢ্য র্যালী শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে চিত্রকর দীপন দেব এর তত্বাবধানে ও চিত্রকর তামিম বিন ইমদাদের বিচার্যে অনুষ্ঠানে কবি আনোয়ার হোসেন মিছবাহ ও সুজন সরকারের ব্যবস্থাপনায় শিশু থেকে নানা বয়সীদের মধ্যে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
বিকাল ৩টায় কবি বিমান তালুকদারের পরিচালনায় এবং সুমন বণিকের সভাপতিত্বে স্বরচিত কবিতা পাঠে অংশগ্রহণ করেন কবি অজয় বৈদ্য অন্তর, কবি জালাল জয়, কবি নন্দকিশোর রায়, কবি সৌদীপ মোহন মিহির, কবি অমিতা বর্দ্ধন, ছড়াকার চন্দ্র শেখর দেব, ছড়াকার নিরঞ্জন চন্দ্র চন্দ, গীতিকবি হরিপদ চন্দ, কবি নাজনীন আক্তার কণা প্রমূখ,
ছড়াকার পরিতোষ বাবলুর পরিচালনায় নাট্যকার কনোজ চক্রবর্ত্তী বুলবুলের সভাপতিত্বে অলোচনা সভা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক ধ্রুব গৌতম। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ড. সেলু বাসিত। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগীতশিল্পী ডা. সুধাময় মজুমদার, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এডভোকেট অরূপ শ্যাম বাপ্পী, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জেলার সাবেক সভাপতি কমরেড পুরঞ্জয় চক্রবর্ত্তী বাবলা, প্রমূখ। আরও বক্তব্য রাখেন খেলাঘর সিলেট জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রাব্বী চৌধুরী ওয়াফি, কমরেড দীনবন্ধু পাল, ছড়াকার বিধুভূষণ ভট্টাচার্য্য, গণসংগীত শিল্পী অংশুমান দত্ত অঞ্জন, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আনোয়ার হোসেন সুমন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক কমরেড সিকন্দর আলী, প্রমূখ।
সন্ধ্যায় সংগীতশিল্পী তাপস চৌধুরী ঝংকারের পরিচালনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দলীয় অংশগ্রহণ করে সিলেট আর্ট এন্ড কালচার, সারেগামাপা, ভোরের কাগজ পাঠক ফোরাম, উদীচী সিলেট জেলা সংসদ। একক সংগীত পরিবেশন করেন শরীফ কিশোর, কাজী আরিফ, শ্যামা দেব, সুদীপ্তা পৌষী সুনন্দা দাস প্রমি, নির্ঝরা চৌধুরী, পুষ্পিতা বৈদ্য, পূর্বা বৈদ্য প্রম,ূখ।
অনুষ্ঠান শেষে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার ও অংশগ্রহণকারীদের সনদপত্র বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানের সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন রবীন্দ্র ভট্টাচার্য্য। সহযোগিতায় ছিলেন সৈয়দা সুরাইয়া জামান, এস এম শিহাব, এমরান ফয়সল, আল মামুন বাবলু প্রমুখ।
সম্মেলনে ছড়াকার পরিতোষ বাবলুকে সভাপতি ও ধ্রুব গৌতমকে সাধারণ সম্পাদক করে ৪১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয় এবং পুরো সম্মেলন সুরমা খেলাঘর আসরের অকাল প্রয়াত সহযাত্রী কুমার গণেশ পালের স্মৃতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়।
মন্তব্য