নন্দিত ডেস্ক ::বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় আগামী ২৩ ও ২৪ সেপ্টেম্বর, রবিবার ও সোমবার পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আটর্স সেন্টোরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘৮ম বাংলাদেশ বইমেলা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব’ ।
এ উপলক্ষে ৯ সেপ্টেম্বর রোববার বিকেলে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদ ইউকের উদ্যোগে পূর্ব লন্ডনের ভ্যালেন্স রোডস্থ শাহ কমিউনিটি সেন্টারে বাংলা মিডিয়ার সাংবাদিকদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় এক সংবাদ সম্মেলন । এতে ৮ম বাংলাদেশ বই মেলার বিস্তারিত তুলে ধরে দুদিনব্যাপী বইমেলাকে সফল করতে সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করে স্বপরিবারে বইমেলায় অংশগ্রহণ করার জন্য আহবান জানানো হয়।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদ ইউকের সভাপতি লেখক ও গবেষক ফারুক আহমদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কবি ইকবাল হোসেন বুলবুল।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০১০ সাল থেকে বাংলা একাডেমি ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদ, যুক্তরাজ্য-এর উদ্যোগে প্রথমে বাংলা একাডেমি বইমেলা এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ বইমেলা নামে সাতটি উৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে । এই মেলা বা উৎসবকে কেন্দ্র করে সংগঠনের অর্জনও অনেক। ২০১১ সালে বইমেলাকে কেন্দ্র করে বাংলা একাডেমির যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল, বাংলা একাডেমি প্রবাসী লেখক পুরস্কার-এর প্রবর্তন। ওই বছর এ পুরস্কারটি লাভ করেন কবি ও কথাসাহিত্যিক কাদের মাহমুদ এবং বাংলা একাডেমির ফেলোশিপ লাভ করেন লেখক সাংবাদিক নুরুল ইসলাম। ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি প্রবাসী লেখক পুরস্কার লাভ করেন প্রয়াত কথাসাহিত্যিক মাসুদ আহমদ এবং কবি ও কথাসাহিত্যিক সালেহা চৌধুরী। ২০১৩ সালে গবেষণামূলক সাহিত্যকর্মের জন্য এ পুরস্কারটি অর্জন করেন লেখক সাংবাদিক ইসহাক কাজল ও ফারুক আহমদ এবং বিজ্ঞানবিষয়ক গবেষণার জন্য জার্মানবাসী লেখক ড. গোলাম আবু জাকারিয়া।
এক পর্যায়ে বাংলা একাডেমি প্রবাসী লেখক এ নামটি পরিবর্তন করে ২০১৪ সালে পুরস্কারটির নামকরণ করা হয় বাংলা একাডেমি সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার। সে বছর কানাডাবাসী কবি সৈয়দ ইকবাল ও কবি ইকবাল হাসান এই পুরস্কার লাভ করেন । ২০১৫ সালে পুরস্কার লাভ করেন, ফরাসি লেখক ও প্রফেসর অ্যামেরিটাস, ফ্রেঞ্চ ভট্টাচার্য এবং কথাসাহিত্যিক মঞ্জু ইসলাম (সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম)। ২০১৬ সালে বাংলা একাডেমি সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ পুরস্কার পান কবি শামীম আজাদ এবং কবি নাজমুন নেসা পিয়ারী।
২০১৬ সালে মেলা পরিচালনায় বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে মেলায় আগত প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি, ‘জ্ঞান ও সৃজনশীল’ প্রকাশনা সমিতির কর্মকর্তাগণসহ মেলায় আগতরা অসন্তোষ প্রকাশ করেন । ফলে ২০১৭ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি কার্যভার গ্রহণ করে এবং মেলা আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করে । কিন্তু নানা জটিলতার কারণে সে বছর মেলা করা সম্ভব হয়নি। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর আবারও মেলায় সার্বিক সাহায্য-সহযোগিতার দানের আশ্বাস দেন এবং মেলার জন্য একটি পরিরকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবার নির্দেশনা দেন। কিন্তু একটি স্বার্থান্বেষী মহলের চক্রান্তের কারণেই এই ঐতিহ্যবাহী মেলাটি নিয়ে আবারও নানা দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয়। ফলে ২০১৮ সালের মেলা আয়োজনের জন্য কোনো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া যায়নি । অথচ মেলার দিন-তারিখ আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। তাই গত আগস্ট মাসে আমরা সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিই যে, এ বছর আমরা বিলাতের বাঙালি কমিউনিটির পরামর্শ, সার্বিক সাহায্য ও সহযোগিতা নিয়েই বাংলাদেশ বইমেলা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক উৎসবের ধারাবাহিক ঐতিহ্য বজায় রাখবো।
দুদিনব্যাপী বই মেলার প্রথম দিনের অনুষ্ঠানমালায় রয়েছে দুপুর ১২টায় বইমেলার উদ্বোধন । তারপর একে একে আলোচনা সভা, কবিতা পাঠ, কবিতা আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। এর মধ্যে রয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদের উদ্যোগে আবদুল মতিন সাহিত্য পুরস্কার ও তাসাদ্দুক আহমদ সৃজনশীল শিল্প পুরস্কার প্রদান।
দ্বিতীয় দিনের আনুষ্ঠনমালায় রয়েছে বইমেলা ও সাংস্কৃতিক আনষ্ঠান। এ বছর মেলায় বাংলাদেশের ১৫টি খ্যাতিমান প্রকাশনা সংস্থা অংশগ্রহণ করছে। প্রধান অতিথি হিসেবে আসছেন কবি আসাদ মান্নান, রেডিও বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী নাজমা মান্নানসহ বিশিষ্টজন ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিলেতের প্রায় প্রতিটি টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্র বিনামূল্যে বাংলাদেশ বইমেলার বিজ্ঞাপন ও বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছে । উদাত্তভাবে সহযোগিতা করছেন বিলেতের সাহিত্য সংস্কৃতিমোদীরা ।
এতে আরো জানানো হয়, বই মেলায় বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে, আগামী প্রকাশনী, ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ, নালন্দা, উৎস প্রকাশন, জাগৃতি প্রকাশনী, অনন্যা প্রকাশনী, প্রান্থ প্রকাশনী, রামন পাবলিশার্স, শব্দশৈলী, আনিন্দ প্রকাশন, বাসিয়া প্রকাশনী, দ্য ইউনিভার্সিটি একাডেমি, পরিজাত প্রকাশনী, অনার্য প্রকাশনীসহ বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এবং বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদ ইউকের সহ-সভাপতি সাপ্তাহিক জনমতের পলিটিক্যাল এডিটর ইসহাক কাজল, কোষাধ্যক্ষ কবি এ কে এম আব্দুল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক স্মৃতি আজাদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক এম মোসাহিদ খান ও কবি ময়নুর রহমান বাবুল, প্রকাশনা সম্পাদক রেজুয়ান মারুফ, প্রচার সম্পাদক ও অনলাইন নিউজপোর্টাল দৈনিক আমাদের প্রতিদিন সম্পাদক আনোয়ার শাহজাহান, সদস্য জামাল খান, কবি মোহাম্মদ মুহিদ, চ্যানেল এস-এর চিফ রিপোর্টার মোহাম্মদ জুবায়ের, সাপ্তাহিক দেশ সম্পাদক তাইসির মাহমুদ, মাসিক দর্পণ সম্পাদক রহমত আলী, বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মিছবাহ জামাল, মেলা উপকমিটির সদস্য শামীম শাহান, মেলা উপকমিটির সদস্য এডভোকেট ইউসুফ শেখ, সাংবাদিক কলামিস্ট নজরুল ইসলাম বাসন, সাপ্তাহিক বাংলা পোস্ট সম্পাদক তারেক চৌধুরী, কমিউনিটি নেতা সায়াদ আহমদ সাদ, সাংবাদিক সৈয়দ আব্দুল কাদির, কাউন্সিলার শাহ সোহেল আমিন, চ্যানেল এস’র হেড অব ক্যামেরাম্যান রেজাউল করিম মৃধা, ইকরা টিভির জেনারেল ম্যানেজার হাসান হাফিজুর রহমান পলক, সিনিয়র রিপোর্টার আসম মাসুম, টিভি সাংবাদিক আহসানুল আম্বিয়া শুভন, সাপ্তাহিক পত্রিকার রিপোর্টার কবি হামিদ মোহাম্মদ, পাক্ষিক ব্রিক লেইন সম্পাদক জুয়েল রাজ, সাপ্তাহিক সুরমার প্রতিনিধি হেলাল সাইফ, সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ ছোটনসহ আরও অনেকে।
মন্তব্য