দক্ষিণ সুনামগঞ্জে লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে ফুসে উঠছে গ্রাহকেরা

নওরোজ আরেফিন নাহিদ- দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থেকে:পল্লী বিদ্যুতের লাগামহীন বিদ্যুৎহীনতায় দক্ষিণ সুনামগঞ্জের মানুষের ধৈর্য্যের  সীমা অতিক্রম করেছে। এর প্রতিবাদে ফুসে উঠছে এ উপজেলার হাজার হাজার মানুষ। ইতোমধ্যে অনেক কর্মসূচি পালন করেছে উপজেলাবাসী। কোনো ব্যানার ছাড়াই এসব কর্মসূচিতে মানুষের অংশগ্রহণই বুঝিয়ে দেয় পল্লী বিদ্যুতের উপর মানুষ কতটা বিরক্তিকর।তাছাড়া প্রচন্ড গরম, অন্যদিকে বিশ্বকাপ ফুটবল ও জরুরি কাজের পাশাপাশাশি ব্যবসা আর শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সব কিছুই বিদ্যুৎকেন্দ্রিক।  এমন অবস্থায় দিনের ২৪ ঘন্টার মাঝে এ উপজেলায় গড়ে বিদ্যুত সরবরাহ করা হচ্ছে সব মিলিয়ে বড়জোড় ৬ থেকে ৭ ঘন্টা। বিদ্যুতের উন্নয়নের জন্য যে বিভক্তির কথা পল্লী বিদ্যুৎ থেকে বলা হচ্ছে তা শুধু কথার কথাই। এর কোনো প্রশান্তি পাচ্ছে না এলাকাবাসী। আর পাবেন কিনা তাও জানেন না। বিদ্যুতের এমন অবস্থায় দক্ষিণ সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষোভে ও রাগে ফেঁটে পড়ছেন মানুষ। প্রতিবাদী ও আন্দোলন মুখর হয়ে উঠছেন উপজেলাবাসী। চলতি মাসের ৮ তারিখ উপজেলার পাগলা বাজারে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবীতে সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করেন বিক্ষোব্ধ এলাকাবাসী। এর একদিন পরে আবারো একই দাবীতে রাস্তায় নামেন এলাকাবাসী। তাৎক্ষনিক সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল করা হলেও অবরোধ তুলে নিলে মিনিট পাঁচেকের মধ্যে আবারো সেই অন্ধকার। এমন পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য ও ফিডার আলাদা করার প্রতিবাদে ২০ জুন বুধবার প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের ৬, ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষ। সভায় মানুষের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণ দেখে মানুষের মনের মাঝে ক্ষোভের চিত্রটি সহজেই অনুমেয় হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও পল্লী বিদ্যুতের কঠোর সমালোচনা করে নিন্দা জানাচ্ছেন স্থানীয় উপজেলাবাসী। পল্লী বিদ্যুতের স্থানীয় অফিসসূত্রে জানা যায়, বিদ্যুতের উন্নয়নের কাজ করতে দিনের বেলায় বেশিরভাগ সময় বন্ধ রাখতে হচ্ছে সংযোগ। সংযোগ চালু রেখে বিদ্যুতের কাজ করা সম্ভব হয় না বলে বাধ্য হয়েই তারা এই লাইন বন্ধ রাখছেন। তবে, পল্লী বিদ্যুতের পক্ষ থেকে দাবী করা হয়, ইচ্ছে করে এমনটা করা হচ্ছে না। । চলতি মাসের মধ্যেই এই অসহ্যনীয় অবস্থা থেকে উপজেলাবাসীকে মুক্তি দিতে পারবেন বলে আশা করছেন সুনামগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের মহাব্যবস্থাপক। সাধারণ মানুষরা জানান, প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ পাওয়া গেলেও দিনের বাকী সময় পাওয়া যায় না। দুপুরের পরে যেকোনো এক সময় সর্বোচ্চ ১ ঘন্টা থাকলেও সন্ধ্যার পরে আরো ১ থেকে দেড় ঘন্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। এর পরে ১২ টা বাজার আগ পর্যন্ত উপজেলাবাসীকে থাকতে হয় পুরো অন্ধকারে। রাত ৩ টার পরে সকাল ৯ টা পর্যন্ত সকলকে আবার থাকতে হয় বিদ্যুৎহীন। কোনো লিখিত রুটিন না হলেও এটিই যেনো পল্লী বিদ্যুতের দক্ষিণ সুনামগঞ্জের অলিখিত রুটিন। এই রুটিন মতো পল্লী বিদ্যুৎকে আর চলতে দেওয়া যাবে না। এভাবে চলতে চলতে উপজেলাবাসী অতিষ্ঠ। কোনো কারণ ছাড়া পল্লী বিদ্যুতের এমন স্বেচ্ছাচারিতার জবাব দেবে উপজেলাবাসী। আগামী কাল পাগলায় একটি মানববন্ধন কর্মসূচি দেওয়ার কথা রয়েছে। পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের শত্রুমর্দন গ্রামের নুর আলী বলেন, বিদ্যুতের এমন স্বেচ্ছাচারিতায় আমরা খুব বিরক্তিকর । আমরা প্রয়োজনে কঠিন আন্দোলন করবো। কান্দিগাঁও গ্রামের আতিকুর বলেন, আমরা ইতোমধ্যে একটি প্রতিবাদ সভা করেছি। আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। সুনামগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের মহাব্যবস্থাপক অখিল কুমার সাহা বলেন, আমরা গ্রাহককে বিদ্যুৎ দিতে রাত দিন কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের লোক মাঠে কাজ করছে। লাইন যদি কোনো এলাকায় ফল্ট না করে বা ঐ এলাকায় বিদ্যুতের উন্নয়নের কাজ করা না হয় তাহলে বিদ্যুৎ বন্ধ কেন থাকবে । আমরা এ সপ্তাহে খুব বেশি কাজ করছি। আমাদের কাজ শেষের পথে এবং আশা করছি এ সপ্তাহের ভিতরেই সব সমস্যার সমাধান হবে। চলতি মাসেই আমরা গ্রাহককে কাঙ্কিত সেবা দিতে পারবো।