এন এ নাহিদ-:দক্ষিণ সুনামগঞ্জ : দক্ষিণ সুনামগঞ্জে সিএনজি চালক সাকিব হত্যাকান্ডে জড়িত ৫ হত্যাকারীকে ষোল ঘন্টার শ্বাসরোদ্ধকর অভিযানে তাদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। উদ্ধার করা হয় নিহতের সেই সিএনজি।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার দিবাগত রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জগজীবপুর গ্রামের মাও. বোরহান উদ্দিনের ছেলে আবু হানিফ সোহেলকে (৩৫) গ্রেফতার করে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানা পুলিশ। গ্রেফতারের পর আবু হানিফ সোহেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ চাঞ্চল্যকর তথ্য পায়। সেই তথ্যের ভিত্তিতে আর চার হত্যাকারীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো,
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ইকবালনগর এলাকার আব্দুল হাসিমের ছেলে বাপ্পারাজ (২৮), একই গ্রামের মৃত তাজিদ আলীর ছেলে জালাল উদ্দিন (৩০), মল্লিকপুর এলাকার বাসিন্দা মো. কামাল উদ্দিনের ছেলে হুমায়ূন আহমেদ (৩২) কে সুনামগঞ্জ সদর থানা ও সুনামগঞ্জ ডিবি পুলিশের সহযোগিতায় দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানা পুলিশ গ্রেফতার করেন। পরে গভীর রাতে সিলেটের জালাবাদ এসএমপি এলাকার বাদে আলী গ্রামের মৃত সফাত উল্লার ছেলে শেখ মো. আনা মিয়াকে (৩৫)। তবে আনা মিয়ার পূর্বদশা গ্যারেজ থেকে নিহতের সিএনজিও উদ্ধার করে পুলিশ।
ঐ হত্যাকান্ডে গ্রেফতার কৃতরা পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী দিয়েছে। তারা হত্যাকান্ডের ব্যাপক চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক তথ্য দিয়েছে।
ঘটনাকারীদের জবানবন্দী অনুযায়ীঃ গত ১১ জুলাই বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের টুকেরগাও গ্রামের সিকন্দর আলীর ছেলে নিহত সাকিব উদ্দিনকে পৌর শহর এলাকা থেকে সিএনজিটি ভাড়া করে আবু হানিফ সোহেল। এ সময় সোহেল তার অস্থায়ী বাসা সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মাইজবাড়ি গ্রামে তার বাসায় চালকসহ সিএনজিটি নিয়ে যায়, ঐ বাসায় তারা প্রায় ৩০ মিনিট সময় ব্যয় করে অন্যান্য ঘতকদের নিয়ে সিলেটের দিকে যাত্রা শুরু করেন। পতিমধ্যে দিরাই রাস্তার মূখে রাত সাড়ে ১১টায় একটি চা দোকানে তারা চা পান করে।
পরে চা খেয়ে তারা আনুমানিক রাত ১২টার দিকে সিলেটের উদ্ধেশ্যে যাত্রা শুরু করে, এক সময় দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানা এলাকা অতিক্রম করে থানা থেকে ১ কি.মি. দূরে সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহা সড়কের সদরপুর (কামরূপদনং) এলাকায় সিএনজিটি থামাতে চালক সাকিব উদ্দিনকে বলেন আবু হানিফ সোহেল। সোহেলের কথামত চালক গাড়িটি থামালে গাড়িতে থাকা ঘাতকরা চালক সাকিব উদ্দিনকে ধরে মারপিট করে গুরুতর আহত করে তার দু হাত বেঁধে ফেলে। হাত বাঁধা অবস্থায় আবারও মারপিট করে ঘাতকরা। মার খেতে খেতে একসময় চালক সাকিব উদ্দিন নিঃতেজ হয়ে পড়লে ঘাতকদের মধ্যে এক চালক গাড়িটি ব্যাক করে সুনামগঞ্জের দিকে দ্রুত গতিতে চালিয়ে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানা ও উপজেলার অতিক্রম করে থানা থেকে ১ কি.মি. দূরে সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহা সড়কের জয়কলস-উজানীগাও ব্রীজের উপর থেকে হাত বাঁধা অবস্থায় আহত চালক সাকিব উদ্দিনকে ঘাতকরা সুরমা নদীতে ফেলে দেয়।
ঘাতকরা আরও জানায়, পরে তারা আবার গাড়িটি নিয়ে সিলেটের উদ্ধেশ্যে যাত্রা শুরু করে সিলেট জালালাবাদ থানা এলাকার বাদে আলী গ্রামের গ্যারেজ মালিক শেখ মো. আনা মিয়ার গ্যারেজে সিএনজিটি ১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে ঘাতকরা।
এ ঘটনায় নিহত সাকিবের বড় ভাই বাদী হয়ে শনিবার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানায় ঘাতকদের বিরোদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছে। মামলা নং-০৮, তারিখঃ ১৪.০৭.২০১৮ইং।
এ ব্যাপারে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় থানার হল রুমে সাংবাদিক সম্মেলন করে ঘাতকদের স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দীর বিষয়ে অবহিত করেন। তিনি জানান, ঘাতকরা নিহত সাকিবের পূর্ব পরিচিত ছিল। ঘাতক সোহেলের তথ্য অনুযায়ী সুনামগঞ্জ ও সিলেটের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঘাতকদের গ্রেফতার ও সিএনজিটি উদ্ধার করেছি। এ ঘটনায় পলাতক আরও ৪-৫ জন আছে তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য: গত শুক্রবার দুপুরে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের উজানীগাঁও গ্রামের পশ্চিমে টলামারা এলাকার সুরমা নদী থেকে হাত বাঁধা অবস্থায় সিএনজি চালক সাকিব উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
মন্তব্য