ধানের চেয়ে 'ঢেঁড়সে' লাভের মুখ দেখছেন সুনামগঞ্জের কৃষকরা!

সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা : ধানের দাম বাড়ার অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন হাওর পাড়ের কৃষকরা। এজন্য ঘরে ধান মজুত করে রেখেছেন সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার আলীপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম। তার মতো হাওর এলাকার লাখো কৃষক একই আশায় আছেন। ধানের দাম না পাওয়ায় হাওরের অনেকেই অন্য ফসল আবাদ করছেন। এমনই একজন সলুকাবাদ ইউনিয়নের জগন্নাথপুরের হানিফ মিয়া। তিনি বলেন, ‘গেলবার ধান কইরা মাইর খাইছি। এবার ধানের বদলে ঢেঁড়স আবাদ করছি। ৬ হাজার টাকা খরচ করে ১ বিঘা জমিতে এখন পর্যন্ত ৪০ হাজার টাকার ঢেঁড়স বিক্রি করছি। আমি এখন থেকে ধান চাষ করবো না। এর চেয়ে ঢেঁড়স আবাদ লাভজনক।’ পলাশ ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের আবদুল বারিক বলেন, ঘরে ধান থাকলেও বাজার করার মতো টাকা হাতে নেই। তাই এক মণ ধান বাজারে এনেছেন বিক্রি করতে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা এক মণ ধানের দাম ৫০০-৫৫০ টাকা দিতে চায়। অথচ এই টাকা দিয়ে এক ব্যাগ বাজার করে বাড়ি নিতে পারেন না। জগন্নাথপুর গ্রামের কৃষাণি কমলা খাতুন বলেন, ‘ঘরে চাইল ছাড়া আর কিছু নাই। নুন, তেল, হলদি, মরিচ, পান, সুপারি, কাপড়চোপড়সহ সংসারের সব বাজার সদাই ধান বিক্রি করে আনতে হয়। ছেলেকে এক মণ ধান বিক্রি করে সংসারের বাজার করতে পাঠিয়েছি। এক মণ ধান বেচলে পাওয়া যায় ৫০০ টাকা। এ টাকার বাজারে ৭ দিন চালানো যায় না। বস্তা ভরে ধান নিয়ে বাজারে গেলেও ব্যাগ ভরে বাজার নিয়ে আসতে পারে না কেউ।’ বাজিতপুর গ্রামের ব্রজেন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘বাজারে শুধু ধানের দাম কম। অন্য সবকিছুর দাম অনেক বেশি। তাই বাজার করলেও ব্যাগ ভরে না।’ জগন্নাথপুর গ্রামের শুক্কুর বানু বলেন, ‘গেলবার এমন দিনে ৭০০-৭৫০ টাকায় প্রতিমণ ধান বিক্রি করেছি। এবার ৬০০ টাকার ওপরে দাম ওঠেনি। তাই ক্ষেত গিরস্তি কইরা এখন বাঁচা-মরা সমান লাগে।’ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ধানের দর না থাকায় হালের একটি বলদ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে কামলা বিদায় করেছি। যদি ধান বিক্রি করে কামলা বিদায় করতে হতো, তাহলে আমার ১০০ মণ ধানের মধ্যে ৬০ মণ বিক্রি করে দিতে হতো।’ মিল মালিক সফর আলী বলেন, ‘কেউ এখন আর চাল কিনে খায় না। সবাই ঘরের ভাত খায়। সবাই ধান বিক্রি করতে চায়। কিন্তু ক্রেতার পরিমাণ কম। এসব কারণে স্থানীয় বাজারগুলোয় ধানের দাম উঠছে না।’ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে ২ লাখ ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছে ১৩ লাখ টন ধান। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে ৬ হাজার ৫০৮ টন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এখন পর্যন্ত জেলার ১২ এলএসডির মাধ্যমে ৫ হাজার ১২০ কৃষকের কাছ থেকে ২৫০ টন ধান কিনেছে সরকার। জেলা প্রশাসক আবদুল আহাদ বলেন, এ বছর মিল মালিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তারা একটি খাতা মেনটেইন করে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনবে। তাহলে স্থানীয় বাজারগুলোয় ধানের দাম কিছুটা হলেও বাড়বে।