ধর্মপাশায় ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

ধর্মপাশা  প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান আজিম মাহমুদের বিরুদ্ধে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্প ইজিপির (৪০ দিনের) কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি তাঁরই পরিষদের দুই সদস্যকে না জানিয়ে দুইজনকে তিনটি প্রকল্পের চেয়ারম্যান করেন। এর মধ্যে ওই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ইউনুছ মিয়াকে না জানিয়ে এ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের একটি প্রকল্পের চেয়ারম্যান করা হয় এবং একই ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে নারী ই্উপি সদস্য মরিয়ম সুলতানাকেও একইভাবে প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ও দ্বিতীয় পর্যায়ের পৃথক দুইটি প্রকল্পের প্রকল্প চেয়ারম্যান করা হয়। কিন্তু ওই তিনটি প্রকল্পের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পটির কোনো কাজ না করেই সাকুল্য টাকা উত্তোলণ করে আত্মসাৎ করেন ইউপি চেয়ারম্যান আজিম মাহমুদ এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের দুইটি প্রকল্পের নামেমাত্র কাজ করে প্রকল্পের অর্ধেক টাকা উত্তোলণ করে আত্মসাৎ করার পরও তিনি প্রকল্পের বাকি টাকা উত্তোলণ করার পাঁয়তারা করছেন। গত সোমবার বিকেলে ওই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও প্রকল্প চেয়ারম্যান মো. ইউনুছ মিয়া ও একই ইউনিয়নের দুইটি প্রকল্পের চেয়ারম্যান ১-২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য মরিয়ম সুলতানা বাদি হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে একই দিনে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এ পৃথক দুইটি অভিযোগ দায়ের করেন। পৃথক এ দুইটি অভিযোগ থেকে জানা গেছে, উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান আজিম মাহমুদ তাঁরই পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. ইউনুছ মিয়াকে না জানিয়েই তিনি তাকে প্রকল্প চেয়ারম্যান করে ইউনিয়নের তলপাড়া নূরুল ইসলামের বাড়ি হইতে তেলীগাঁও গ্রাম হয়ে জগন্নাথপুর গ্রামের মজিবুর রহমানের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের জন্য তিনি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের আওতাধীনে থাকা কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়ে) ৭ লাখ ২৮ হাজার টাকা রাস্তা নির্মাণ বরাদ্দে প্রকল্প কমিটি জমা দেন। পরে তিনি এ বিষয়টি গোপন রেখে দায়েরকৃত প্রকল্প কমিটির সদস্যদের দিয়ে রাস্তায় মাটি না কেটে তিনি এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে নামেমাত্র মাটি কেটে প্রকল্প চেয়ারম্যানের কাছ থেকে জোড়-পূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে প্রকল্পের অর্ধেক টাকা উত্তোলণ করে তিনি আত্মসাৎ করেন। অপর দিকে, ওই ইউপি চেয়ারম্যান একইভাবে তার ইউনিয়নের আমানিপুর গ্রামের মহর উদ্দিনের বাড়ি হতে রংছি বাজার পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পে (প্রথম পর্যায়ে) ১৭১ জন শ্রমিকের বিপরীতে ১৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা ও মহেষখলা-মধ্যনগর মেইন সড়ক হতে দাতিয়ারপাড়া গ্রামের বাবুল মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পে (দ্বিতীয় পর্যায়ে) ৫০ জন শ্রমিকের বিপরীতে ৪ লাখ টাকা বরাদ্দে দুইটি পৃথক প্রকল্প কমিটি গঠন করেন ইউপি চেয়ারম্যান আজিম মাহমুদ। আর ওই দুইটি পৃথক প্রকল্প কমিটির চেয়ারম্যান করেন তারই ইউয়িনের ১,২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য মরিয়ম সুলতানাকে। তবে ইউপি চেয়ারম্যান আজিম মাহমুদ নারী ইউপি সদস্য মরিয়ম সুলতানাকে এ বিষয়ে কিছু না জানিয়েই তিনি তার স্বাক্ষর জাল করে প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পের ১৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা উত্তোলণ করে কাজ না করেই সাকুল্য টাকা আত্মসাৎ করেন। একই কায়দায় দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পেরও নামেমাত্র কাজ করে অর্ধেক টাকা উত্তোলণ করে তা আত্মসাৎ করেন। এ ব্যাপারে উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান আজিম মাহমুদ তাঁর বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করেই টাকা উত্তোলণ করা হয়েছে। তবে একটি চক্র আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্যই আমার পরিষদের ওই দুই সদস্যকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রজেশ দাশ বলেন, এ বিষয়ে আমি এখনো কোনো অভিযোগের কপি পাইনি। তবে কাজের গুণগত মান সন্তুষ জনক হলেই আমরা বিল দিয়ে থাকি। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান এ ধরনের দুইটি অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অভিযোগ দুইটির বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আজকেই প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।