নিজস্ব প্রতিনিধি:সুনামগঞ্জে জগন্নাথপুর উপজেলার এক সময় ছিল শাহরাস্তির মাটির হাঁড়িপাতিলের কদর। কিন্তু এখন আর তা নেই। বিলুপ্তির পথে এ শিল্প। কালের বিবর্তনে ধাতব, প্লাস্টিক, মেলামাইন ও চিনামাটির সামগ্রীর ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এ শিল্পে নেমে এসেছে চরম দূর্দিন।
জানা যায়, উপজেলা জুড়ে বেঁচে থাকার তাগিদে চৌদ্দ পুরুষের ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এ পেশার অনেক শিল্পী। কম চাহিদা, আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের অসঙ্গতি আর জীবনমান উন্নয়নের জন্য ক্রমেই অন্য পেশার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন তারা। একদিকে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, অন্যদিকে আধূনিক যুগের যন্ত্রবিপ্লবের হুমকির মুখে পতন-এ দু’য়ের ফলে সংকীর্ণ থেকে সংকীর্ণতর হয়ে চলেছে মৃৎশিল্পের স্থায়িত্ব ও বিকাশের পথ। বিলুপ্তপ্রায় সেই মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত কয়েকটি পরিবারের বাস উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের কুবাজপুর। গ্রামের পাল বাড়ীর মহিন্দ্র পালের ছেলে মতিপাল এক সময় পাল বাড়ীতে গ্রামের পাশের মাটির তৈরি ব্যবহার্য তৈজসপত্রের বড় জোগান আসত এই গ্রাম থেকে। আর এই পেশার সঙ্গে সম্পৃক্তরা সচ্ছল জীবনযাপন করতেন। অতিকষ্টে বংশপরম্পরার এ ঐতিহ্য আঁকড়ে ধরে আছে ১০ থেকে ১২’টি পরিবার। অথচ একসময় এ গ্রামের অন্তত ৫০টি পরিবারের জীবন-জীবিকার উৎস ছিল এ শিল্প।
সরজমিনে গিয়ে কথা হয় কুবাজপুর গ্রামের আনন্দ পালের ছেলে জুগেন্ট পাল ও রঞ্জু পালের সঙ্গে। অতীতের বর্ণনা দিতে গিয়ে পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই জুগেন্ট পালের চোখজোড়া চঞ্চল হয়ে ওঠে। মৃৎশিল্পের সঙ্গে যার নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তিনি কি-না শেষ বয়সে এসে অন্য পেশায় জড়িয়ে গেছেন। রঞ্জু পাল বলেন, ‘আগে ঘরে ঘরে মাটির জিনিসপত্র তৈরি করা হতো। এখন ১০-১২টি পরিবার বানায়। লাকড়ি মেলে না। হাঁড়িপাতিল তৈরি করার মাটি পাওয়া যায় না। সরকারী জমিন লিজ আনার কারনে আমরা কাজ করতে এখন আর মাটি পাই না। নতুন প্রজন্মের কেউই এ পেশায় আসছেন না। যুবকদের আলাপ করে জানা যায়, মৃৎশিল্পের চরম দৈন্যদশার জন্য নতুন করে তারা কেউই এ পেশায় আসতে আগ্রহী নন। ঠাকুর পালের ছেলে পুলের পাল বলেন, মৃৎশিল্পের মূল উপাদান এঁটেল মাটি। এ মাটি দিয়ে তৈরি উপকরণের মধ্যে উলে¬খযোগ্য হলো হাঁড়ি, কলসি, ঘড়া, ঘাগড়া, শানকি, প্রদীপ, পাঁজাল বা ধুপতি, বদনা, ঝাঁজর, চাড়ি, মটকি বা মটকা, পিঠার ছাঁচ, সরা, ঢাকনা, বাটি, ফুলের টব, পুতুল, প্রতিমা, মূর্তি প্রভৃতি তৈরী হয়।
মৃৎশিল্পের ব্যবসায়ী চন্দপাল বলেন, ‘আগে পাইকাররা এসে বায়না করে যেত, ১০-১৫ দিন পরপর সিলেট সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা এসে তাদের মাল বুঝে নিত। এখন এ গ্রামে আমরা ১০-১২টি পরিবার এই কাজ করে। তিনি জানান, বিশেষ করে ১লা বৈশাখসহ বিভিন্ন মেলা ও ঈদ উপলক্ষে এগুলো বিকি-কিনি জমে উঠে। মৃৎশিল্প ধরে রাখতে পরিবারগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া আহবান জানান মৃৎশিল্পের সাথে সকল শিল্পীরা।
মন্তব্য