সুনামগঞ্জে অবহেলায় শেষ ঠিকানা

সুনামগঞ্জ প্রতিবেদক:মৃত্যু অমোঘ এক সত্যের নাম। প্রত্যেককেই মৃত্যুর স্বাদ নিতে হয়। মৃত্যুর পরে মুসলমানদের ঠিকানা হয় কবরস্থানে। প্রিয়জনেরা শুয়ে থাকেন বলে কবরস্থানের প্রতি আলাদা এক দুর্বলতা থাকে তাদের। কিন্তু যারা সেই কবরস্থানের দেখভালের দায়িত্বে থাকেন তাদের যেনো কোনো দায় নেই। সুনামগঞ্জের তেঘরিয়া কবরস্থান সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতার এমনই এক উদাহরণ। তাদের উদাসীনতা প্রিয়হারা স্বজনদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটালেও তাতে যেনো কিছু যায় আসে না কর্তৃপক্ষের। সুনামগঞ্জ জেলা শহরের প্রধান কয়েকটি কবরস্থানের মধ্যে তেঘরিয়া কবরস্থান অন্যতম। এ কবরস্থানে শায়িত আছেন সুনামগঞ্জের খ্যাত-অখ্যাত অনেকেই। সুনামগঞ্জের বাসিন্দাদের অনেকেরই বাবা-মা, ভাই-বোন প্রিয়জন শেষঘুমে শায়িত আছেন এখানেই। তেঘরিয়া কবরস্থান, গাজীর দরগা বা মরমী কবি হাছন রাজার কবরস্থান নামেও পরিচিত। হাছন রাজার পরিবারের সকলের কবর এই কবরস্থানেই হয়ে থাকে। এছাড়া স্থানীয়দের কবরও এখানেই দেওয়া হয়। হাছন রাজার পরিবারের কোনো এক উত্তরসূরীর দানসূত্রে প্রাপ্ত জমিতেই এ কবরস্থান গড়ে উঠেছে। কবরস্থানের অভ্যন্তরে মসজিদও রয়েছে। সীমানাপ্রাচীর না থাকায় কবরস্থানে গরু-ছাগল, শিয়াল কুকুরের অবাধ যাতায়াত। দুঃখের বিষয় নজরদারি না থাকায় কিছু বোধহীন মানুষ এখানে প্রাকৃতিক কর্মও সম্পাদন করে থাকে। নির্জনতার সুযোগে কবরস্থানটি হয়ে উঠেছে অপরাধীদের আস্তানা। মদ, গাজা, তাস খেলার আস্তানা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে এখানে প্রায়ই এলাকার ছেলেদের ক্রিকেট বা ফুটবল খেলতে দেখা যায়। এসব কোনো কিছুই চোখে পড়ে না কর্তৃপক্ষের। তেঘরিয়া কবরস্থানে নেই নতুন কবর ঢেকে রাখার খাঁচাও। লোহার খাঁচা না থাকায় প্রায়ই লাশ নিয়ে শেয়াল কুকুরের টানাটানি দেখা যায়। যা মৃতের এবং মৃতের আত্মীয়দের জন্য বেদনাদায়ক। সুনামগঞ্জের তেঘরিয়া কবরস্থানে কবরে সমাহিতকরণের জন্য বাঁশ ও চাটাই সরবরাহের লক্ষ্যেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কবর দেওয়ার সময় বৃষ্টি হলে লাশ নিয়ে অপেক্ষা করার জন্য কোনো ছাউনিও নেই। বাধ্য হয়ে তাই চোখের জল আর বৃষ্টির জলে ভিজিয়ে স্বজনকে মাটিতে শোয়াতে হয়। প্রতিদিন প্রিয়জনদের কবর জেয়ারতে অনেকেই আসেন এ কবরস্থানে। কিন্তু কবরস্থানের কোথাও জিয়ারতের নিয়ম কানুন লিখে রাখা নেই। এ কারণে বিপাকে পড়তে হয় অনেকেকেই। তেঘরিয়া কবরস্থান পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন যাবৎ দায়িত্ব পালন করছেন স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিত্ব হাছন নুর। তিনি জানান বর্তমানে জেলা পরিষদের অর্থায়নে কবরস্থানে মাটি ভরাটের কাজ চলছে। ১ম পর্যায়ের কাজ হিসেবে অর্ধেক জায়গায় মাটি ফেলা হয়েছে, কিছুদিন পর ২য় পর্যায়ের কাজে পুরো কবরস্থানেই মাটি ফেলা হবে। নতুন মাটিতে এখন কবর দেওয়া নিষেধ করা হয়েছে। মাটি ভালোভাবে বসার পরে নতুন অংশে কবর দেওয়ার অনুমতি দেয়া হবে। পুরো অংশে মাটি ভরাট শেষ হলে সৌন্দর্য্যবর্ধনের কাজ করা হবে। কবরস্থানের মধ্যে দিয়ে রাস্তা করা হবে যেন কবরের উপর দিয়ে কাউকে হাটতে না হয়। হাছন রাজার প্রপৌত্র দেওয়ান গনিউল সালাদিন বলেন, অতীতে আমাদের পরিবারের কাউকে জানিয়ে এখানে কবর দেয়া হতো, কিন্তু এখন একটি কমিটি করা হয়েছে যেখানে আমাদের পরিবারের কোনো সদস্য নেই। যা আমাদের জন্য বিব্রতকর। তবুও তিনি শীঘ্রই এই কবরস্থানের বিষয়ে এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে জানান।