সিলেট সিটি নির্বাচন যে কারণে বেঁকেছে জামায়াত

নন্দিত ডেস্ক: সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাঠ ছাড়বে না জামায়াত। সিলেটে তাদের প্রার্থী নির্বাচনে রাখবেই। এর কারণ- বড় শরিক দল হয়েও জামায়াতে ইসলামী দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে একটিতেও তাদের প্রার্থী পায়নি। সিলেটের জামায়াত নেতারা মনে করেন তারা ‘ন্যায্য হিস্যা’ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অধিকার বঞ্চিত হওয়ার কারণেই সিলেটে প্রার্থী রাখবে জামায়াতে ইসলামী। আর সিলেটের বিএনপির মেয়র প্রার্থীর উপর তিন কারণে চরম ক্ষুব্ধ স্থানীয় জামায়াত। ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে জামায়াত আরিফুল হক চৌধুরীর বিজয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখলেও কখনো আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র থাকাকালে জামায়াতকে ডাকেননি। হকার ইস্যু নিয়ে আরিফুল হক চৌধুরী নগরভবনে সর্বদলীয় বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে জামায়াতের কেউ দাওয়াত পাননি। সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রথম পর্যায়ের কর্ণধার ছিলেন জামায়াতের বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান। আরিফুল হক চৌধুরী রাস্তা প্রশস্তকরণের সময় ওই মেডিকেল কলেজের ভূমি জোরপূর্বক দখল করেছেন। এ নিয়ে তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের এমডিকেও লাঞ্ছিত করেন। দক্ষিণ সুরমা উপজেলা নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী ছিলেন জামায়াত নেতা লোকমান আহমদ। ওই নির্বাচনে আরিফুল হক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত বর্তমান জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদও হয়েছিলেন বিদ্রোহী প্রার্থী। ফলে জামায়াত ইসলামী ওই উপজেলায় বিজয় ঘরে তুলতে পারেনি। বিশেষ করে এই তিন কারণে বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর উপর চরম ক্ষুব্ধ জামায়াত। এ কারণে তারা সিটি নির্বাচনে আরিফকে ছাড় দিতে নারাজ। জামায়াতের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন- আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তারা জামায়াতে ইসলামী থেকে নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি চূড়ান্ত করে রেখেছেন। এর মধ্যে তারা ১৪০টি সেন্টার কমিটি গঠন করে ফেলেছেন। আগামী সপ্তাহে তারা সেন্টার কমিটির সদস্যদের প্রশিক্ষণও দেবেন। পাশাপাশি নির্বাচন পরিচালনার জন্য ওয়ার্ড ও মহল্লা কমিটি গঠনের কাজ চূড়ান্ত করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হলেন অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। জামায়াত দাবি করছে- সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সব প্রার্থীদের মধ্যে তাদের প্রার্থীই সেরা। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, শিক্ষাসহ নানাভাবে এগিয়ে তাদের প্রার্থী। এ কারণে এবার তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী রাজশাহী ও সিলেটে তারা ২০ দলীয় জোটের কাছে মনোনয়ন চেয়েছিল। সর্বশেষ আলোচনার মাধ্যমে তারা রাজশাহীর প্রার্থীকে সরিয়েছে। এবং জোটের সব শরিক দলের সঙ্গে কথা বলে সিলেটে তাদের প্রার্থী রেখেছে। এমনকি সিলেটের প্রার্থীর মনোনয়ন জমা দেয়ার বিষয়টি তারা বিএনপিকেও জানিয়েছে। কিন্তু বিএনপির কেন্দ্রীয় তরফ থেকে তাদের এখনো কিছুই জানানো হয়নি। সিলেট মহানগর জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মো. ফখরুল ইসলাম গতকাল বিকেলে জানিয়েছেন- ‘সিলেট সিটি করপোরেশন নিয়ে এখনো আলোচনা চূড়ান্ত হয়নি। আলোচনা চলছে। বিএনপিও তাদের প্রার্থী দিয়েছে, আমরাও দিয়েছি। আমরা ১২টি সিটির মধ্যে একটি চেয়েছি। সেটি না হলে জামায়াত এবার সিলেটে প্রার্থী সরাবে না।’ তিনি বলেন- ‘গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জামায়াত কর্মীরা খেয়ে না খেয়ে বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে খেটেছে। আরিফুল হক চৌধুরীর পক্ষে সিলেটে তাদের দলের কর্মীরাও এভাবে কাজ করেনি। সুতরাং অধিকার বঞ্চিত জামায়াত এবার সিলেটে তাদের প্রার্থী চায়।’ সিলেট সিটি করপোরেশনে জামায়াতে ইসলামীর প্রভাব কম নয়। ভোটের হিসেবে জামায়াত থেকে দাবি করা হচ্ছে তাদের প্রায় ৫০ হাজার ভোট রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে হয়তো তাদের ভোট হবে ২০ থেকে ২৫ হাজার। এই ভোট প্রায় সব নির্বাচনেই ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। এই ভোটকে পুঁজি করে গতবার আরিফ বিজয়ী হয়েছিলেন। জামায়াত নেতারা জানিয়েছেন, ২০১৩ সালের সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে সিলেটে ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছিলেন তিনি একবারের জন্য মেয়র হতে চান। এরপরও জামায়াতকে নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে। শমশের মুবীন চৌধুরীর উপস্থিতিতে ওই বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর নেতারা তখন আরিফকে ছাড় দিয়ে তাদের প্রার্থী অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়েরকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। এদিকে- এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সিলেটের স্থানীয় বিএনপি নেতাদের মাথায় জামায়াতকে নিয়ে তেমন টেনশন নেই। কারণ সিলেটে জামায়াতের প্রার্থী থাকবে কী না- সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি। বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সিলেটের প্রবীণ নেতা এমএ হক জানিয়েছেন- ‘জামায়াতের প্রার্থী থাকবে কী না সেটি দেখবে কেন্দ্র। আমরা সে ব্যাপারটি জানি না। কেন্দ্রীয়ভাবে আলোচনার ভিত্তিতে যে সিদ্ধান্ত হবে সেটি সবাই মানবে।’ তথ্য সূত্র :মানবজমিন