সিলেটে ঔষুধে মোটা হচ্ছে গবাদী পশু

নন্দিত সিলেট:সামনে মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় ঊৎসব ঈদুল আযহা। সিলেটের গোলাপগঞ্জের কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফা লাভের আশায় ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে ষ্টেরয়েড জাতীয় ওষধ ও ইনজেকশন প্রয়োগে গরু মোটাতাজা করছে। এসব মোটাতাজাকরনের নিষিদ্ধ ঔষধ অহরহ বিক্রি হচ্ছে ফার্মাসী থেকে শুরু করে ফুটপাতে এমনকি গোখাদ্যের দোকানে। অনুসন্ধানে জানা যায় উপজেলার বুধবারী বাজার ইউপির বানীগাজির জালাল উদ্দিন, মিছবাহ উদ্দিন, আব্দুর রাজ্জাক, চন্দুরপুরের পংকি মিয়া, খায়রুল ইসলাম, ফয়ছাল আহমদ, ভাদেপাশা ইউপির আমকোনা গ্রামের খায়রুল আহমদ, আইন উদ্দিন, শরীফগঞ্জ ইউপির কদর আলি, করিম মিয়াসহ আরো অনেকে প্রত্যেক ঈদুল আজহা উপলক্ষে কম দামে গরু কিনে কয়েক মাস রেখে স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ ও ইনজেকশনের মাধ্যমে মোটাতাজা করে অধিক মুনাফা আশায় ঈদের সময় বিক্রি করে। এদিকে গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ড. তাওহীদ বলেন, ষ্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ ও ইনজেকশনের মাধ্যমে মোটাতাজা গরুর মাংস খেলে সরাসরি মানুষের শরীরে ষ্টেরয়েডের উপাধান ঢুকে কিডনি সমস্যাসহ নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আবার এসব ঔষুধ গরু খেয়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক সময় মানুষ মারা যাচ্ছে। এতে লাভের চেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন অনেক ব্যবসায়ী। আবার অনেকে জানেন না কৃত্রিমভাবে মোটা করা গরুর মাংস মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ কারণে এসব পশু কোরবানি দেওয়া উচিত নয়। তবে বেশিরভাগ সাধারণ গৃহস্থ কোনটি প্রাকৃতিক আর কোনটি কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা হয়েছে, তা বুঝতে পারেন না। গোলাপগঞ্জ উপজেলার শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের কদর আলী মিয়া দীর্ঘ দিন ধরে প্রতিবছর কোরবানির ঈদের পূর্বে বিভিন্ন স্থান থেকে গরু কিনে আনেন। তারপর ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধির পরামর্শে ষ্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ খাওয়াতেন।এর ফলে দু বা তিন মাসের মধ্যে গরুগুলো হুষ্টপুষ্ট হয়ে উঠে। এরপর কোরবানির হাটে বিক্রি করে অনেক টাকা লাভ করেন। উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুল আলম বলেন, সংকটাপন্ন গরুর জীবন বাঁচাতে অনেক সময় এসব ঔষধ দেওয়া হয়। পাশাপাশি এসব ঔষধ খাওয়ানোর ফলে অনেক সময় গরু মারা যায়। এ কারনে অনেকে আবার এসব ঔষধ খাওয়ানো বন্ধ করে দিয়েছে। কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরুর গা ‘পানি নামা’ রোগীর শরীরের মতো ফুলে থাকে। এই গরুর গায়ে আঙুল দিয়ে চাপ দিলে ওই স্থানের মাংস দেবে যায় এবং আগের অবস্থায় ফিরে আসতে অনেক সময় লাগে। কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে মোটা করা পশুর গায়ে চাপ দিলে মাংস খুব বেশি দেবে যাবে না এবং যতটুকু দেবে যাবে, তা সঙ্গে সঙ্গে আগের অবস্থায় চলে আসবে। এসব গরু দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস গ্রহণ করে। একটু হাঁটলেই হাঁপায়। খুবই ক্লান্ত দেখায়, ইনজেকশন দেওয়া গরুর রানের মাংস স্বাভাবিক গরুর রানের মাংসের চেয়ে অনেক নরম থাকে,এদের মুখে কম লালা বা ফেনা থাকে, সেই গরু কেনার চেষ্টা করুন। এগুলো কৃত্রিম উপায়ে মোটা করা পশু নয়, এসব গরুর চেহারা স্বাভাবিক উষ্কখুষ্ক এবং চামড়ার ওপর দিয়ে হাড় বেরিয়ে থাকে, সেগুলো সুস্থ ও প্রাকৃতিকভাবে মোটা করা গরুর লক্ষণ। বেশি চকচক করা গরু বা ছাগলের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি থাকে। আবার এ ধরনের গরু চেনার উপায় হলো, এরা সারাক্ষণ নীরব থাকে, নাড়াচাড়া কম করে তিনি আরও বলেন, হরমোন দিয়ে মোটাতাজা করা গরুর মাংস খেলে মানবদেহে এসব হরমোন মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। মানবদেহে প্রতিনিয়ত প্রকৃতিগতভাবে হরমোন তৈরি হচ্ছে। ক্ষতিকর হরমোন পরোক্ষভাবে শরীরে ঢুকলে এই হরমোনগুলো মানবশরীরে নানা রোগ সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে অল্পবয়সী বা ছোট শিশুদের মারাত্মক ক্ষতি হয়।