বাংলাদেশের মহান মুক্তিযোদ্ধের ঠিক আগে আগে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল না। মানুষের কণ্ঠরোধ করে দিতে চেয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার শক্তি। মানুষের চিন্তাশক্তি ও স্বাধীনচেতা ধুলিসাৎ করে দিতে উঠে পড়ে লেগেছিল তারা। সেই কঠিন সময়ে মানুষের অধিকার ও মুক্তির লক্ষ্যে সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে প্রতিষ্ঠিত উদীচী।১৯৬৮ সালের ২৯ অক্টোবর সেই ঐতিহাসিক ক্ষণে শিল্পী সংগ্রামী সত্যেন সেন গড়ে তুলেছিলেন স্বপ্নের ও সাম্যের এক অন্যরকম সারথি। যা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে লড়াই সংগ্রামে রাজপথের অগ্রভাগে। গেরিলা বাহিনী গঠন করে প্রত্যক্ষভাবে মহান মুক্তি যুদ্ধে যেমন উদীচীর শিল্পীরা নেমেছিলেন, তেমনি মানুষের মানসিক মনবলকে শক্তিশালী করে যুদ্ধে ধাবিত করতে উদীচী বলিষ্ট ভুমিকা পালন করেছে। সম্মানজনক ‘একুশে পদক’ অর্জন করেছে উদীচী। তাই দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে এখনও শপথ নিতে হবে আগামীর সংগ্রামে মানুষের মুক্তির ও সাম্যের তরে রাজপথে থাকার।মঙ্গলবার সিলেটস্থ কেন্দ্রীয় শহিদমিনারে উদীচী আয়োজিত ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেশব্যাপী একযোগে জাতীয় সংগীত ও সংগঠনের সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করে। তারই অংশ হিসেবে সিলেটস্থ শহিদমিনার উদীচী সিলেট একটি বর্ণাঢ্য আয়োজন করে।বিকেল সাড়ে ৪টায় জাতীয় সংগীত ও সংগঠনের সংগীতের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন উদীচী সিলেটের সভাপতি এনায়েত হাসান মানিক, সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করে সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী।এরপর কেন্দ্রীয় শহিদমিনারে মুলমঞ্চে শুরু হয় আলোচনা সভা। উদীচী সিলেটের সভাপতি এনায়েত হাসান মানিকের সভাপতিত্বে এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক ধ্রুব গৌতমের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় উদীচীর সাবেক সভাপতি ও সিলেট উদীচীর সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার মো. আরশ আলী। বক্তব্য রাখেন উদীচী সিলেটের সাবেক সভাপতি কবি এ কে শেরাম, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি মিশফাক আহমদ মিশু, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিলেট জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন চৌধুরী সুমন, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের বিভাগীয় কমিটির সভাপতি মামুন হাসান, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুকুল আব্দুল কাইয়ুম, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নেতা নজিকুল ইসলাম রানা, ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলার সভাপতি সরোজ কান্তি দাস। স্বাগত বক্তব্য রাখেন উদীচী সিলেটের সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নাট্য ব্যক্তিত্ব আমিরুল ইসলাম বাবু, জয় বাংলা সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক এনামুল মুনির, পরিবেশবাদী আন্দোলনের নেতা আব্দুল করিম কিম, লোক গবেষক সুমন কুমার দাস, ওয়ার্কাস পার্টি সিলেটের সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রানী সেন, সমকালে সিনিয়র ফটো সাংবাদিক ইউসুফ আলী, উদীচী মৌলভীবাজার জেলার সহ-সভাপতি আব্দুল হাফিজ ইমু, উদীচী লাক্কাতুরা শাখার সাধারণ সম্পাদক কাজল গোয়ালা প্রমুখ।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে গণসংগীত পরিবেশন করে সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন, উদীচী লাক্কাতুরা, উদীচী সিলেট জেলা। নৃত্য পরিবেশনা করেন ময়মনসিংহ উদীচীর নৃত্যশিল্পী জুই চন্দ ও উদীচী লাক্কাতুরা শাখার শিল্পীবৃন্দ।
মন্তব্য