শেরপুরে জমে উঠেছে ২শ বছরের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা। সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার এ তিনটি জেলার মিলনস্থল নবীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী শেরপুরের কুশিয়ারা নদীর তীর ঘেষে তিন দিনব্যাপি এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলাটি প্রথমে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কুশিয়ারা ও মনু নদীর মিলনস্থল মনুমূখ নামক স্থানে শুরু হলেও সামাজিক দ্বন্দ্বের কারণে বর্তমানে সদরের ২৬ কিলোমিটার উত্তরে শেরপুরেই হয়ে আসছে। প্রতিবছরের ন্যায় মেলাটি ১৩ জানুয়ারি সোমবার শুরু হয়ে বুধবার সকালের দিকে এর সমাপ্তি ঘটবে। অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও দরপত্রের মাধ্যমে ইজারা প্রদান করেছে- জেলা প্রশাসন। গেল বছর মেলায় প্রায় ১৫ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হলে এবারও তার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন মেলা আয়োজক কমিটি। সিলেট বিভাগের বৃহত্তর এ মাছের মেলাটি প্রায় দুই’শত বছর যাবৎ চলে আসছে। ‘মাঘের শীতে বাঘে কাঁপে’, সেই হাড় কাঁপানো শীতকে উপেক্ষা করে লক্ষাধিক ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। মেলায় মৎস্য ব্যবসায়ীরা ঢালায় ঢালায় সাজিয়ে রেখেছেন বিশাল আকারের মাছ। এর মধ্যে বাঘাই, বোয়াল, রুই, কাতলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উল্লেখযোগ্য। মেলায় মাছ ক্রয় করতে সবাই না আসলেও অনেকেই আসছেন মাছ দেখতে। কালের বিবর্তনে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া অনেক প্রজাতির মাছও এই মেলায় আসছে। মেলাটি সনাতন ধর্মাবলম্বীর পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে হলেও বর্তমানে সার্বজনীন উৎসবে রুপ নিয়েছে মাছের মেলা। বাঙালি সংস্কৃতিতে বারো মাসে তের পার্বণের একটি হল পৌষ সংক্রান্তি। এই মেলায় ছোট মাছ থেকে শুরু করে আড়াই’শ কেজি ওজনের মাছেরও দেখা মিলে। মাছগুলো মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন নদ-নদী, খাল, বিল এবং হাওড়ের থেকে শিকার করে এনে বিক্রি করা হয় বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। তবে মেলায় মৌলভীবাজারের হাকালুকি, সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওড় ও কুশিয়ারা নদীর মাছ বেশি প্রাধান্য পায় মেলায় আসা ক্রেতাদের মধ্যে। এদিকে মেলাকে ঘিরে মৎস্য ব্যবসায়ীরা ১৫ দিন আগে থেকে মাছ মজুদ রেখে মেলায় আসার প্রস্তুতি নেন। পৌষ সংক্রান্তিকে সামনে রেখে হিন্দু ধর্মের সবাইকে মাছ কিনতে হবে এমন নিয়ম থাকলেও সেতু বন্ধনে আবদ্ধ থাকায় ভিন্ন ধর্মীরাও বড় বড় মাছ কিনতে পিছিয়ে নেই। মেলাকে কেন্দ্র করে সবাই বড় মাছ কিনে আত্মীয়ের বাড়িতে উপহার দেন। ফলে লোকদৃশ্যের বন্ধনে পরিণত হয় শেরপুরের এ মাছের মেলা। মেলায় মাছ ছাড়াও গৃহস্থালী সামগ্রী, হস্ত শিল্প, গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী পণ্য, খেলনা সামগ্রী, নানা জাতের দেশীয় খাবারের দোকান, কাঠের তৈরী ফার্নিচার এবং সব ধরণের পণ্য পাওয়া পায়। মেলায় সস্তা দরে জিনিষপত্র ক্রয় করতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা ছুটে আসেন এখানে। শেরপুরের মাছের মেলায় নির্ধারিত হারে টোল আদায়ের নিয়ম থাকলেও তার চেয়ে ১০ থেকে ১৫ গুণ বেশি হারে টোল আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেশি হারে টোল দিতে অনিহা প্রকাশ করলে শারীরিক বল প্রয়োগ করে টোল আদায় করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। যে কারণে ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় দোকান সংখ্যা প্রতিবছরের ন্যায় কমে আসছে বলে স্থানীয়রা জানান।