‘আবু সরকার চাঁদাবাজি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করছেন’

সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি নং- চট্ট ২১৫৯ এর সভাপতি আবু সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সংগঠনের বর্তমান ও সাবেক নেতৃবৃন্দরা। তারা আবু সরকারকে নানা অপকর্ম, দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার হোতা আখ্যায়িত করে তার এসব কর্মকান্ড বন্ধে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশন সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সদয় হস্তক্ষেপও কামনা করেছেন তারা। রবিবার বিকেল ৩টায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আবু সরকারের বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি নং- চট্ট ২১৫৯ এর সদস্য মো. আনোয়ার পাঠান। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আবু সরকার সিলেটের পরিবহণ শ্রমিকদের জীবন জীবিকা নিয়ে ছিনিমিনি খেলে যাচ্ছেন। তিনি সংগঠনের নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার পরদিন থেকে স্বরূপে আবির্ভূত হন। ওই দিন থেকে তিনি সিলেট-জাফলং সড়কের সারিঘাট বৈঠাখাল নামক স্থান থেকে অভারলোডের অভিযোগ তুলে ট্রাক থেকে প্রতিদিন ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করেন। এ ভাবে দীর্ঘ ৮ মাসে ট্রাক থেকে প্রায় ৬ কোটি টাকা আদায় করেন আবু সরকার। এখানে প্রতিদিন ৩০০ থেকে সাড়ে ৩৫০ গাড়ী আসা যাওয়া করে। আবু সরকারের নেতৃত্বে সিলেট ভোলাগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সড়কের সালুটিকর থেকে ওভারলোডের নামে ট্রাক প্রতি ৩০০ টাকা ও ভোলাগঞ্জ বউ বাজার নামক স্থান থেকে ট্রাক প্রতি ৩০০ টাকা করে আদায় করা হয়। এভাবে উপরোক্ত দুটি স্থান থেকে প্রতি মাসে ৬০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। ভোলাগঞ্জ রোডে বহিরাগত গাড়ী উলে­খ করে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান থেকে ওভারলোডের নামে গাড়ি প্রতি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। প্রতিদিন এ রোডে গাড়ি ঢুকে প্রায় ২৫০ থেকে ৩৫০টি। তিনি উল্লেখ করেন, আবু সরকারের নেতৃত্বে গরু বহনকারী প্রতি ট্রাক থেকে ৫শ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করছেন। সম্প্রতি সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন সহ নামস্বর্বস্ব ১২টি সংগঠনের নাম যুক্ত করে কর্মবিরতির নামে বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করেন। এ অবস্থায় গভীর রাতে টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন ড্রিস্ট্রিক্ট ট্রাকগুলোতে আবু সরকারের ইশারায় ছেড়ে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের অনুমতি না নিয়ে নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য অবৈধভাবে ৭২ ঘন্টার কর্মবিরতি আহবান করেন আবু সরকার। যা পরবর্তীতে ধর্মঘটে রূপ নেয় আবু সরকারের চাঁদাবাজি স্বেচ্ছাচারিতা আর কথায় কথায় অবরোধ এবং ধর্মঘটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে অনেকেই তার রোষানলে পড়েছেন। শ্রমিকদের স্বার্থে কথা বলে আবু সরকারের প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন নিরীহ পরিবহণ শ্রমিক ও নেতারা। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সিলেটের ট্রাক শ্রমিক ও মালিকদের একটি প্রাণের দাবি ছিলো একটি ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করা। অবশেষে ট্রাক টার্মিনালটি দক্ষিণ সুরমার পারাইরচকে নির্মিত হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনাল ইজারা নিতে ব্যর্থ হন তিনি। উপযুক্ত মূল্যে ইজারা লাভ করেন সিলেট জেলা ট্রান্সপোর্ট মালিক গ্রুপ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ইজারা গ্রহণ করে আবু সরকারের কারনে বিপাকে পড়েন সিলেট জেলা ট্রান্সপোর্ট মালিক গ্রুপ কর্তৃপক্ষ। কারণ আবু সরকারের ইশারায় ট্রাক টার্মিনালে ট্রাক প্রবেশ না করে নগরীর বিভিন্ন ব্যস্ততম সড়কের পাশে ট্রাক পার্কিং করা হচ্ছে। আবু সরকার কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনাল ইজারা না পেয়ে ভোলাগঞ্জে একটি মিনি ট্রাক টার্মিনাল গড়ে তোলেন। সংবাদ সম্মেলনে সতের পরগণা সমন্বয় কমিটির সভাপতি আবুল চৌধুরী বলেন, আবু সরকার নিজের ইচ্ছামাফিক অবৈধ পরিবহণ ধর্মঘট আহবান করে আমাদের ক্ষতিগ্রস্থ করছেন। পরিবহণ নেতা মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ধর্মঘট আহবানের ৩ দিনে প্রায় একশ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। লোকমান মিয়া বলেন, হুমায়ূন রশিদ চত্ত¡র এলাকায় রাস্তার কাজে দীর্ঘসূত্রিতার কারনে যানজটে জনসাধারণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া জরুরী। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পরিবহণ শ্রমিক নেতা আব্দুল গফুর, মো. জমির মিয়া, মো. মনিরুল ইসলাম, মো. পাখি মিয়া, মো. জমির মিয়া-২, মো. মহব্বত মোল­া, দিলসু, মো. কালা মিয়া, আব্দুল হান্নান, মো. মামুন মিয়া, মো. ছমির মিয়া, মো. জানু মিয়া, মো. জুবের মিয়া, মো. সুহেল মিয়া, মো. ইয়াকুব মিয়া, মো. কানু মিয়া, মো. হাসু মিয়া প্রমুখ।