‘স্বেচ্ছা বন্দিতে’ বিপাকে গোলাপগঞ্জের খেটে খাওয়া মানুষ

গোলাপগঞ্জ প্রতিনিধি: বর্তমানে বিশ্বে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে করোনাভাইরাস। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে প্রতিদিনই বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা, থেমে নেই মৃত্যুর মিছিলও। তবে কোভিড-১৯ নামের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে ফিরে আসা মানুষের সংখ্যাও কম নয়। তবে বিশ্বের ২০০ টির দেশে পৌঁছে যাওয়া এই ভাইরাসের প্রতিষেধক না থাকায় প্রতিরোধের উপর জোর দিতে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সেই নির্দেশনা মোতাবেক সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ‘লকডাইন’ করে মানুষ ঘরে রেখেছে। তবে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক ভাবে লকডাউন করা না হলেও গত ২৬ মার্চ থেকে কার্যত লকডাউন হয়ে আছে পুরো দেশ। এই অবস্থা থাকবে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে ফার্মেসি আর নিত্য পণ্যর দোকান চাড়া সব কিছু বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মানুষকে ঘরে রাখতে চলছে নানা কার্যক্রম। আর এই ‘স্বেচ্ছা বন্দিতে’ বিপাকে পড়েছেন সিলেটের গোলাপগঞ্জের খেটে খাওয়া মানুষ। একদিকে সব কিছু বন্ধ হয়ে যাওয়া অন্যদিকে খাবারে চিন্তা সব মিলিয়ে ভালো নেই উপজেলার শ্রমজীবী মানুষেরা। করোনাভাইরাসের সকল সতর্কতা জেনেও যারা পেটের দায়ে ঘর থেকে বের হচ্ছেন তারাও কাজ পাচ্ছেন না। আর যারা রিকশা কিংবা সিএনজি অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালান তারাও পাচ্ছেন না যাত্রী। এতে ঘর থেকে বের হলেও রোজগার হচ্ছে না প্রয়োজনীয় অর্থ। এনিয়ে বিপাকে আছেন বেশিরভাগ মানুষ। অন্যদিকে উপজেলা প্রশাসন বলছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিছু ত্রাণ এসে পৌঁছেছে আবার কিছু ত্রাণ আসার পথে রয়েছে। এটি যেহেতু চলমান কার্যক্রম। সেজন্য ত্রাণের সংকট নেই। তবে উপজেলা প্রশাসন আশ্বাস দিলেও ভালো নেই দিন আনে দিন খায় মানুষের অবস্থা। একদিকে করোনায় সব বন্ধ হয়ে যাবে কি না, সেই ভয়ে সামর্থ্যবানেরা বেশি বেশি করে খাদ্যও প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে রাখছেন। তার ওপর সব জিনিসের দাম অনেক বেড়েছে। কিন্তু এই খেটে খাওয়া মানুষগুলোর একসঙ্গে অনেক কেনার টাকা নেই এবং বাড়তি দাম তাদের জন্য আরও বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপজেলা ঢাকা দক্ষিণ ইউনিয়নের দিনমজুর ভ্যান চালক শিহাব উদ্দিন বলেন, ৩দিন থেকে বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না। গতকাল থেকে না খেয়ে আছি। এ অবস্থা কতদিন চলবে বুঝতে পারছিনা। যদি বেশিদিন থাকে তাহলে না খেয়ে মরতে হবে। আর অটোরিকশা চালক সুহেল আহমদ বলেন, বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। রাস্তাঘাটে মানুষ নেই। রুজি করব কী ভাবে। কিন্তু রোজগার না করলে তো সংসার চলে না। সব মিলেয়ে আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। গোলাপগঞ্জ চৌমুহনীতে পান বিক্রেতা রাজু বলেন, প্রতিদিন এখান থেকে পান বিক্রি করে যা আয় হতো তা দিয়ে সংসার চলতো। কিন্তু বর্তমানে মানুষের সমাগম বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের নির্দেশে দোকান বন্ধ। এখন আমরা গরীব মানুষ কোথায় যাব। এভাবে কিছুদিন গেলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রহমান জানান, এই পরিস্থিতিতে যারা কাজ করতে পারছে না আমরা আজকে কয়েকজনকে সরকারের পক্ষ থেকে আসা ত্রাণ দিয়েছি। পর্যায়ক্রমে ত্রাণ আসবে আমরা উপজেলার বিভিন্ন গরীবদেরকে বিতরণ করব।