আগামী বছর বাড়বে প্রবৃদ্ধি কমবে মূল্যস্ফীতি

চলমান করোনাভাইরাসের প্রতিঘাতেও আগামী বছর (২০২১) বাংলাদেশের জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) ৯ দশমিক ৫ শতাংশে উঠতে পারে। যা হবে সর্বকালের রের্কড। আর মূল্যস্ফীতি কমে ৩ দশমিক ২-এ নেমে আসবে। আইএমএফের ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক গ্রোথ প্রজেকশন’ প্রতিবেদনে বাংলাদেশ নিয়ে এমন প্রত্যাশার কথা বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, চলতি বছরে করোনার প্রভাবের মধ্যেও সেই প্রবৃদ্ধির হার ২ শতাংশ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারবে। সম্প্রতি প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে আইন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, করোনাভাইরাসের উৎপত্তি স্থল চীনে জিডিপি প্রবৃদ্ধি চলতি বছরে ঋণাত্মক হবে না। তবে নেমে আসতে পারে ১ দশমিক ২ শতাংশে। আর ২০২১-এ আবার পৌঁছে যেতে পারে ৯ দশমিক ২ শতাংশে। যদিও ধারণা করা হয়েছিল পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে। আর ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলো বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবে। দেশের প্রবৃদ্ধি প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন- এখনই এটা বলার সময় আসেনি। প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাওয়ার বিষয়টি অঙ্ক ধরে বলার উপযুক্ত সময় এটা নয়। আমাদের ৮ মাসের তথ্য আছে। সেগুলো যাচাই করে কিছুদিন আগে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলেছে প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বের মতো আমাদের জিডিপিও কমবে। তবে এতটা কমবে না। কেননা বাংলাদেশে করোনার প্রভাব পড়ার আগেই আমাদের অর্থ-বছরের ৮ মাস অতিবাহিত হয়েছে। বাকি আছে ৪ মাস (মার্চ-জুন)। এ সময়ে যদি শূন্য কিংবা নেগেটিভ প্রবৃদ্ধি হয় তারপরও আগের ৮ মাসে আমরা যা অর্জন করেছি সেটা ৬ শতাংশের বেশিই হবে। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি প্রসঙ্গে সাবেক অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, প্রবৃদ্ধি কম-বেশি হতে পারে। কিন্তু প্রবৃদ্ধির সুফল সাধারণ মানুষ পাচ্ছে কিনা সেটি দেখতে হবে। তিনি আরও বলেন, করোনার ফলে পরিবহন, কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, সেবা, পর্যটন ও হোটেল-রেস্তোরাঁ সব খাতকে আঘাত করেছে। ফলে চলতি বাজেটে যে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে সেটি অর্জন হবে না। তবে করোনাভাইরাসের আঘাত যদি আমাদের কম আসে তাহলে এর সুফলও পাবে বাংলাদেশ। কারণ বিশ্বের অনেক দেশের বিনিয়োগ এখানে চলে আসবে। পাশাপাশি বিদেশে জনশক্তির নতুন চাহিদা পূরণেও বাংলাদেশ অংশ নিতে পারবে। ‘লকডাউনের’ জেরে বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে তাঁতি, কুমার, শিল্পী ও দেশীয় ফ্যাশনের দোকানিরা পুঁজি খুইয়েছেন। দোকানিদের সংগঠন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, দেশব্যাপী সংগঠনের ২৫ লাখ সদস্য আছেন। এরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। টানা ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি চলছে। এতে মিল-কারখানা বন্ধ হয়ে আছে। বন্ধ হয়ে আছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ। ফলে আর্থিক ক্ষতির চিহ্ন প্রতিনিয়তই বড় হচ্ছে। এরপরও বিশ্ব দাতা সংস্থাগুলো নতুন করে আগামী বছরের আশা দেখছে। আইএমএফ থেকে বলা হয়েছে, এ বিশ্ব ঘুরে দাঁড়াবে ২০২১ সালে। সেখানে বাংলাদেশসহ সব দেশের প্রবৃদ্ধি অনেক বাড়বে। তবে সংস্থাটি এ মুহূর্তে কয়েকটি বিষয়ের ওপর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এর মধ্যে আর্থিক খাত ও স্বাস্থ্য খাতকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। এদিকে আইএমএফের পূর্বাভাসের আগেই করোনাভাইরাসের কারণে দেশের অর্থনৈতিক স্থবিরতা কাটাতে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ৩ বছরের অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয় বিশ্লেষণ করে এ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় প্রণোদনা প্যাকেজ। এরমধ্যে শিল্পঋণ খাতে ৩০ হাজার কোটি টাকা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা, বাংলাদেশ ব্যাংকের রফতানি ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইডিএফ) ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, কৃষি খাতে ৫ হাজার কোটি টাকা, প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রেফারেন্স স্কিম নামে ৫ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ সুবিধা ও রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে ৫ হাজার কোটি টাকা রয়েছে। এছাড়া নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য নগদ সহায়তা ৭৬১ কোটি টাকাসহ ২১ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা দেয়া হয়। এ প্যাকেজ বাস্তবায়নের কারণে অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, আগামী বছরের প্রবৃদ্ধি বর্ধিত ধরে বাজেটের কাজ চলছে। আইএমএফের পূর্বাভাসে বলা হয়, পাকিস্তানে এ বছর জিডিপি বৃদ্ধির হার হতে পারে ১ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০১৯ সালে এ হার ছিল ৩ দশমিক ৩ এবং ২০২১ সালে হবে ২ দশমিক ০ শতাংশ। এছাড়া রাশিয়ায় ২০১৯ সালে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ১ দশমিক ৩ শতাংশ, এ বছর সেটা দাঁড়াতে পারে ৫ দশমিক ৫ এবং ২০২১-এ হতে পারে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। সৌদি আরবের জিডিপি এ বছর নেমে যেতে পারে ২ দশমিক ৩ শতাংশ পর্যন্ত। ২০১৯ সালে ছিল ০ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ২ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে ২০২১ সালে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০১৯-এ জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ০ দশমিক ২ শতাংশ। সেখান থেকে চলতি বছরে নামতে পারে ৫ দশমিক ৮ শতাংশে। আগামী বছরের সম্ভাব্য বৃদ্ধির হার ৪ দশমিক ০ শতাংশ। অন্যদিকে ব্রাজিলে গত বছরের ১ দশমিক ১ থেকে জিডিপি বৃদ্ধির হার নামতে পারে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০২১ সালে হতে পারে ২ দশমিক ০৯ শতাংশ।