কবিগুরুর জন্মোৎসবে সিলেটে ফেসবুকে লাইভ আয়োজন

আজ পঁচিশে বৈশাখ। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিভা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন। ১২৬৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে (১৮৬১ খ্রিস্টাব্দ) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে তাঁর জন্ম হয়। বাংলা সাহিত্যের প্রায় সবকটি ধারা বিকাশ ও পরিপুষ্ট করার পেছনে তাঁর রয়েছে অনবদ্য অবদান। বাংলা সাহিত্যের প্রবাদপ্রতিম এই সাহিত্যিকের জন্মোৎসবে সিলেটে বেশ কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন সাংস্কৃতিক আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে বিগত বছরগুলোর মতো এবার এসব আয়োজন উন্মুক্ত মঞ্চ কিংবা মিলনায়তনে হবে না। এবার এসব আয়োজন ফেসবুক আর লাইভ স্ট্রিম ইয়ার্ড ব্যবহার করে অনলাইনে সম্প্রচার করা হবে। করোনা পরিস্থিতিতে ঘরে বসে দেশ-বিদেশের শিল্পীরা এসব আয়োজনে গান-নৃত্য-আবৃত্তি-আলোচনাসহ নানা পরিবেশনায় অংশ নেবেন। আয়োজকেরা ধারণা করছেন, অনলাইনভিত্তিক এসব আয়োজনে অসংখ্য দর্শনার্থীরা অনুষ্ঠানগুলো পরিবেশন করবেন। কারণ, গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে তাঁরা এ বিষয়টি ঘটা করে প্রচার দিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মোৎসব অনলাইনে আয়োজনের সঙ্গে জড়িত সংস্কৃতিকর্মীরা জানিয়েছেন, রবীন্দ্রনাথ একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীত রচয়িতা, সুরকার, গায়ক ও চিত্রশিল্পী। বিশ্বভারতী তাঁর বিপুল কর্মকাণ্ড একটি প্রধান কীর্তি। ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী তিনিই প্রথম এশীয় ও একমাত্র বাঙালি লেখক। কবিগুরু বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের বুকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের অমর স্রষ্টাদের একজন। তাঁর জন্মদিন তাই বরাবরই বিশেষ বার্তা নিয়ে বাঙালি জনসমাজে হাজির হয়ে থাকে। বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির মর্মমূলে এখন কবিগুরুর নাম গেঁথে রয়েছে। তাই এই করোনাকালীন দুর্যোগের সময়েও বাঙালি তাঁকে ভুলে থাকতে পারছে না। এটিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে সিলেটের সংগঠনগুলোও অনলাইনকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে বেশ কিছু আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটের সংস্কৃতি সংগঠন ‘শ্রুতি’ আয়োজন করেছে ‘রবি বন্দনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। ফেসবুকে শ্রুতির পেজে সরাসরি অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হবে। দুই পর্বে বিভক্ত এ আয়োজনের প্রথম পর্বের উদ্বোধন হবে বেলা সাড়ে তিনটায়। এরপর বেলা পাঁচটা পর্যন্ত এ পর্ব চলবে। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে রাত সাড়ে আটটায়, চলবে রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত। শ্রুতির এ আয়োজনে বিশিষ্ট আবৃত্তি শিল্পী শিমুল মুস্তাফা, মাহিদুল ইসলাম, ডালিয়া আহমেদ ও রানা ঠাকুর এবং সংগীতশিল্পী মকবুল হোসেন, বুলবুল ইসলাম, রাণাকুমার সিনহা, তানজীনা তমা, অভয়া দত্ত ও বিথী পাণ্ডে অংশ নেবেন। ‘একদল ফিনিক্স’ তাদের পেজে কবিগুরুকে নিয়ে তিনটি পর্বে অনুষ্ঠান সাজিয়েছে। প্রথম পর্বের অনুষ্ঠান শুরু হবে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়। বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের নির্বাহী সদস্য সুকান্ত গুপ্তের সঞ্চালনে প্রথম পর্বের আয়োজনে রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করবেন বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের শিল্পী মহাদেব ঘোষ। এ পর্বে একই সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেবেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জফির সেতু। এরপর রাত সাড়ে আটটায় অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে আবৃত্তি পরিবেশন করবেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটন ও সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ শামীমা চৌধুরী এবং গান পরিবেশন করবেন সিলেটের বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রাণাকুমার সিনহা। রাত ১০টায় অনুষ্ঠানের তৃতীয় পর্বে রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করবেন শিল্পী সুনিধি নায়েক। এ পর্ব সঞ্চালন করবেন রেডিও জকি ফাহমিদা উর্মি। সিলেট জেলা শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে রাত পৌণে নয়টায় তাদের ফেসবুক পেজে ‘কবি প্রণাম’ অনুষ্ঠিত হবে। কবিগুরুকে নিবেদিত এ আড্ডায় অতিথি হিসেবে থাকবেন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী মহাদেব ঘোষ, প্রতীক এন্দ ও অমিতা দেবনাথ এবং আবৃত্তিকার নাজমা পারভীন। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করবেন জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা অসিত বরণ দাশ গুপ্ত। কবিগুরুর জন্মোৎসবে ‘মৃত্তিকায় মহাকাল’ও তাদের পেজে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে। ‘এসো হে জ্যোতির্ময়’ শীর্ষক এ আয়োজনে এপার-ওপার দুই বাংলার বরেণ্য শিল্পীরা অংশ নেবেন। ছয় পর্বের এই বিশেষ অন্তর্জাল আয়োজন চলবে টানা তিনদিন ধরে। এর বাইরে ভারতের কিছু অনলাইনভিত্তিক সাংস্কৃতিক আয়োজনেও সিলেটের বিশিষ্ট শিল্পীরা অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।